দামাস্কাস, ৩০ এপ্রিল : সিরিয়ার রাজধানী দামাস্কাসের দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকণ্ঠে মঙ্গলবার রাতে ও বুধবার ভোরে সংঘর্ষ নতুন করে তীব্র আকার ধারণ করেছে। সিরিয়ায় সক্রিয় পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস(এসওএইচআর) জানিয়েছে, সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার জেরে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ছে।
ব্রিটেনভিত্তিক এই সংস্থা জানায়, আশরাফিয়াত সাহনায়া এলাকায় হালকা ও মাঝারি ধরনের অস্ত্র, এমনকি আরপিজি ব্যবহার করেও গোলাগুলি হয়েছে। এছাড়াও সাহনায়া ও আশরাফিয়াত সাহনায়া এলাকায় অন্তত একটি মর্টার শেলের বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে।
বাড়তে থাকা সহিংসতার কারণে সিরিয়ার জেনারেল সিকিউরিটি ডিরেক্টরেট উভয় শহরে রাত্রিকালীন কারফিউ জারি করেছে। এসওএইচআর জানিয়েছে, চলমান সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ জনে, যার মধ্যে ৯ জন সাধারণ বাসিন্দা (জারামানা, সাহনায়া ও আশরাফিয়াত সাহনায়া থেকে) এবং বাকি ৯ জন সরকারপন্থী বাহিনীর সদস্য। এছাড়া অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। পরিস্থিতির অনিশ্চয়তার কারণে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়েছিল জারামানা শহরে, যেখানে একটি ইসলামবিরোধী অডিও রেকর্ডিং সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। অভিযোগ, এটি একজন দ্রুজ সম্প্রদায়ের সদস্য রেকর্ড করেছিলেন। এরপর থেকেই দেশজুড়ে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে, বিশেষত আলেপ্পো ও হোমসের বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়।
এদিকে, দ্রুজ-অধ্যুষিত সুয়েইদা প্রদেশের গ্রামীণ অঞ্চলে অবস্থিত আল-থালা সামরিক বিমানঘাঁটি লক্ষ করে সশস্ত্র হামলার খবর পাওয়া গেছে। অজ্ঞাতপরিচয় বন্দুকধারীরা মাঝারি অস্ত্র ও মর্টার শেল ব্যবহার করলেও, এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সাহনায়ার আকাশে ইসরায়েলি ড্রোন নজরদারি চালায়, যদিও কোনো ধরনের হামলার খবর নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
সহিংসতা আরও বাড়ার আশঙ্কায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জারামানার পার্শ্ববর্তী এলাকায় অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করেছে। অনেক বাসিন্দা এলাকা ছেড়ে পালাতে শুরু করেছে। এসওএইচআর জানিয়েছে, সম্ভাব্য প্রতিশোধের ভয়ে ইতিমধ্যে তিনটি বাসে করে দ্রুজ সম্প্রদায়ের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা নিজেদের বাড়িতে ফিরে গেছে।
এদিকে মঙ্গলবার সকালেই, জারামানায় সম্প্রদায়ভিত্তিক নেতা ও সরকারি প্রতিনিধিদের মধ্যে এক বৈঠকে শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি হয়। তবে তাতে অস্থিরতা থামেনি। সাম্প্রতিক এই সহিংসতার ঢেউ নতুন করে সিরিয়ায় সাম্প্রদায়িক সংঘাতের শঙ্কা বাড়িয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে স্থানীয় প্রশাসন ও সমাজ নেতারা একযোগে কাজ করছে বলে জানানো হয়েছে।

