উত্তর পূর্বাঞ্চলে ত্রিপুরাকে এখন অগ্রণী রাজ্য হিসেবে গণ্য করা হয় : মুখ্যমন্ত্রী

আগরতলা, ২২ মার্চ: উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির মধ্যে ত্রিপুরাকে এখন অগ্রণী রাজ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যেখানে আগে উন্নতশীল রাজ্য হিসেবে ত্রিপুরাকে গণ্য করা হতো। এছাড়াও জিএসডিপির ক্ষেত্রে উত্তর পূর্বাঞ্চলে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্থানে রয়েছে ত্রিপুরা রাজ্য। প্রধানমন্ত্রীর মার্গ দর্শনে উন্নয়নের দিশায় কাজ করছে রাজ্য সরকার। শনিবার আগরতলার এলবার্ট এক্কা পার্কে ভারতীয় জনতা পার্টির উদ্যোগে আয়োজিত বিহার দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।

অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, আমি বিহারের পাটনায় মেডিকেল কলেজে পড়াশুনা করেছি। আমি সেখানে ৫ বছর থেকেছি। আর কাউকে পরিণত (ম্যাচিউরড) মানুষ হতে হলে বিহারে অন্তত ৪/৫ বছর থাকা প্রয়োজন। আমাদের ত্রিপুরা রাজ্যে বিহার থেকে অনেক আইএএস, আইপিএস অফিসার সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন। রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ স্তরে যারা রয়েছেন তারা প্রায় সকলেই বিহারের বাসিন্দা। আমাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সুযোগ্য নেতৃত্বে বিহারে এখন বিকাশের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। তিনি বিকশিত বিহার গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছেন। প্রধানমন্ত্রী যা বলেন তাই করেন। বিহারে এখন এনডিএ সরকার চলছে। রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে শিক্ষা ব্যবস্থার বিকাশ হচ্ছে সেখানে। নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়কে নয়া রূপ দিয়েছেন তিনি।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আছেন বলেই আমরা সুরক্ষিত রয়েছি। পরিকাঠামো উন্নয়নের মধ্য দিয়ে আজ দেশকে বিকাশের দিশায় নিয়ে যাচ্ছেন তিনি। আর দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে ভারতীয় জনতা পার্টি এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেই বেছে নিতে হবে। ইতিহাস থেকে আমরা বিহার রাজ্যের সূচনা জানতে পারি। ড. শচীন্দ্র সিনহা প্রথমে বিহারী মানুষের জন্য বিহার রাজ্যের দাবি তুলেছিলেন। তাই এত বছর পরেও বিহার দিবসের প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে। আজ একটি খুবই গৌরবময় দিন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বারবার বলছেন যে উত্তর পূর্বাঞ্চল উন্নত না হলে ভারতও উন্নত হবে না। প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য নির্দেশনায় এখন ত্রিপুরায় শুধু উন্নয়ন আর উন্নয়ন। আমরাও প্রধানমন্ত্রীর মার্গ দর্শনে উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আগে উত্তর পূর্বাঞ্চল শুধু উগ্রপন্থা প্রত্যক্ষ করেছে। অপহরণ থেকে শুরু করে খুন, সন্ত্রাস, অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি ঘটনা প্রত্যক্ষ হয়েছে।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, ত্রিপুরায় দীর্ঘ ৩৫ বছর কমিউনিস্টদের অপশাসন প্রত্যক্ষ করেছি আমরা। আর এখন আইন শৃঙ্খলা ব্যবস্থার দিক দিয়ে দেশের ২৮টি রাজ্যের মধ্যে নিচের দিক থেকে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ত্রিপুরা। শান্তি শৃঙ্খলা না থাকলে কোন রাজ্যের উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই শান্তি শৃঙ্খলার বাতাবরণ নিয়ে আমরা কাজ করছি। জিএসডিপির ক্ষেত্রে এখন উত্তর পূর্বাঞ্চলে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্থানে রয়েছে ত্রিপুরা। জিডিপির ক্ষেত্রে শতাংশের হিসেবে কিছুদিন আগে সারা দেশের মধ্যে ত্রিপুরা শীর্ষস্থান লাভ করেছে। ত্রিপুরায় মাথাপিছু আয় আগের তুলনায় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। মাথাপিছু আয়ের দিক থেকেও উত্তর পূর্বে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্থানে রয়েছে ত্রিপুরা। এখন ত্রিপুরাকে ফ্রন্ট রানার স্টেট হিসেবে গণ্য করা হয়।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরায় এখন বাইরে থেকে প্রচুর পরিমানে বিনিয়োগকারীরা আসছেন এবং বিনিয়োগ করছেন। আমি ২০২৪ এর ডিসেম্বরে মুম্বাই গিয়ে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মুকেশ আম্বানির সঙ্গে সাক্ষাত করি এবং ত্রিপুরায় আসার আমন্ত্রণ জানাই। প্রায় ৪৫ মিনিট তাঁর সঙ্গে কথা বলি। তিনি ত্রিপুরায় টিম পাঠানোর আশ্বাস দেন। কারণ ত্রিপুরায় নিজস্ব সম্পদ এবং লজিস্টিক সাপোর্ট রয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আজ ত্রিপুরায় রিলায়েন্সের টিম পাঠিয়েছেন মুকেশ আম্বানি। আইটি সেক্টর থেকে শুরু করে বিভিন্ন সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র সম্পর্কে আমরা রিলায়েন্স টিমকে অবহিত করেছি। আজ তাদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা খুবই গঠনমূলক হয়েছে এবং তারা বেশ খুশি হয়েছেন। আর ইনভেস্টররা আসলে আমাদের জিডিপি ও বৃদ্ধি পাবে। গতকাল আমরা বিধানসভায় বাজেট পেশ করেছি। প্রায় ৩২ হাজার কোটি টাকার অধিক বাজেট পেশ করা হয়েছে। পারকাঠামো উন্নয়নের জন্যও বাজেটে অধিক অর্থ রাখা হয়েছে। কারণ পরিকাঠামো উন্নয়ন না হলে বাইরে থেকে মানুষ আসবেন না। আগে রাজ্যে একটিও মেডিকেল কলেজ ছিল না। এখন তিনটি মেডিকেল কলেজ হয়েছে। ৯টি বিভাগে সুপার স্পেশালিটি চালু করা হয়েছে। ত্রিপুরায় এখন কিডনি ট্রান্সপ্লান্টও করা হচ্ছে। লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বোন মেরু ট্রান্সপ্ল্যান্ট করার জন্যও চেষ্টা করা হচ্ছে। কিভাবে আরো সবক্ষেত্রে রাজ্যকে উন্নত করা যায় সেনিয়ে আমরা সারাক্ষণ ভাবনা চিন্তা করছি। আমাদের অভিভাবক হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আমরা সবসময় উন্নয়নের জন্য কাজ করছি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশিত পথে রাজ্য সরকার কাজ করে চলেছে। ত্রিপুরায় এখন সর্বাত্মক উন্নয়নের নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, ক্রীড়া, যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রভূত উন্নতি হয়েছে।

অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সমাজ কল্যাণ ও সমাজ শিক্ষা মন্ত্রী টিংকু রায়, বিহার প্রদেশ ওবিসি মোর্চার প্রভারী অচল সিনহা, প্রদেশ বিজেপির সাধারণ সম্পাদক বিপিন দেববর্মা, সহ সভাপতি পাপিয়া দত্ত, প্রাক্তন বিধায়ক ডাঃ দিলীপ দাস সহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *