বর্ণিহাট-দূষণ : ‘অসম ও মেঘালয়, উভয় পক্ষেরই উদ্বেগ’, সংকট মোকাবিলায় যৌথ পদক্ষেপের আহ্বান মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাডের

শিলং, ১৩ মাৰ্চ (হি.স.) : বর্ণিহাটের দূষণকে ‘অসম ও মেঘালয়, উভয় পক্ষেরই উদ্বেগ’ বলে ব্যাখ্যা দিয়েছেন মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড কে সাংমা। উদ্ভূত সংকট মোকাবিলায় মেঘালয় ও অসম সরকারকে যৌথভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে আহ্বান জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী কনরাড।

অসমের আন্তঃরাজ্য সীমান্তবর্তী গুয়াহাটির পার্শ্ববর্তী মেঘালয়ের রি-ভই জেলার অন্তর্গত বর্ণিহাটকে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহর বলে এক রিপোর্টে তথ্য প্ৰকাশ করেছে ‘ওয়ার্ল্ড এয়ার কোয়ালাটি’। প্রকাশিত এই রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে আজ বৃহস্পতিরা রাজ্য বিধানসভায় এ প্রসঙ্গে বিরোধীদের উত্থাপিত জিজ্ঞাসার জবাব দিচ্ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এ ব্যাপারে তিনি সীমান্ত অঞ্চলকে প্রভাবিত করে এমন পরিবেশগত সংকট মোকাবিলায় প্রতিবেশী অসমের সাথে সহযোগিতামূলক পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী সাংমা বলেন, ‘বিষয়টি কেবল মেঘালয়ের নয়, সীমান্তের উভয় পাশেই উদ্বেগ রয়েছে। এটি এমন এক সমস্যা যা উভয় রাজ্যকেই একসাথে সমাধান করতে হবে।’

এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, সম্প্রতি ‘ওয়ার্ল্ড এয়ার কোয়ালাটি’-র ২০২৪-এর রিপোর্টে বলা হয়েছে, বর্ণিহাটের বায়ুতে প্রতি ঘনমিটারে গড়ে ২.৫ ঘনত্ব (প্রতি মিনিটে) ১২৮.২ মাইক্রোগ্রাম দূষিত পদার্থ প্রবাহিত হচ্ছে।

এদিকে মুখ্যমন্ত্রী সাংমা এই পরিসংখ্যানের বিরোধিতা করে ‘মেঘালয় রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড’ (এমএসপিসিবি)-এর তথ্য উদ্ধৃত করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ২০২৪ সালের পরিসংখ্যানে বর্ণিহাটের বায়ুতে প্রতি ঘনমিটারে ৫০.১ মাইক্রোগ্রামের বার্ষিক গড়, যা উল্লেখযোগ্যভাবে কম। সদনকে তিনি জানান, চলতি বছর ২০২৫ সালের জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারিতে মেঘালয় রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড-এর আধিকারিকরা আকস্মিক পরিদর্শন করেন বর্ণিহাট শহর ও সংলগ্ন এলাকা। এলাকা পরিদর্শনের পর এমএসপিসিবি কর্তৃপক্ষ সাতটি শিল্প ইউনিটকে বন্ধের নোটিশ জারি করেছে। এছাড়া দূষণ নিয়ন্ত্রণ ডিভাইস পরিচালনা না করা এবং নির্গমন তথ্য প্রেরণে ব্যর্থতা সহ লঙ্ঘনের জন্য আরও দুটি শিল্প ইউনিটের উপর পরিবেশগত ক্ষতিপূরণ আরোপ করেছে।

তবে ওই শিল্প ইউনিটগুলি বন্ধ থাকলেও অসমের বালিপাথরের একটি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (বায়ু মানের সূচক বা একিউআই) রিডিঙে ‘খারাপ’ বা ‘খুব খারাপ’ মাত্রা ধরা পড়েছে। এটিকে প্রমাণ হিসেবে উত্থাপন করে মুখ্যমন্ত্ৰী বলেন, ‘অসম ভূখণ্ডে শিল্প এবং অন্যান্য কার্যকলাপ বায়ু দূষণের প্রধান উৎস হতে পারে।’

বিস্তারিত তথ্য দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী সাংমা প্রতিবেশী দুই রাজ্যের মধ্যে শিল্প বৈষম্য তুলে ধরে বলেছেন, অসমের বর্ণিহাটে ২০টি রেড-ক্যাটাগরির শিল্প রয়েছে, বিপরীতে মেঘালয়ের বার্ণিহাটে মাত্র পাঁচটি। তিনি স্পষ্ট জানান, কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড অসমের অংশকে ‘ক্রিটিক্যালি পলিউটেড এরিয়া’ বলে চিহ্নিত করেছে।

প্ৰশ্নকৰ্তা বিধায়কদের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা বলেন, ‘আপনাদের, বিশেষ করে অসম এবং মেঘালয়, উভয় পক্ষের বর্ণিহাট এলাকার নাগরিকদের আমি আশ্বস্ত করছি, আমরা উদ্ভূত এই সমস্যা নিয়ে উদ্বিগ্ন। এই সমস্যাটি সমাধান বা সর্বোচ্চ স্তরে হ্রাস করতে আমরা প্রচেষ্টার কোনও খামতি রাখব না।’

মুখ্যমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, ‘ওই এলাকার স্বাস্থ্য এবং সামগ্রিক পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখা সরকারের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। উভয় রাজ্যই দূষণ সংকট মোকাবিলায় যৌথভাবে বিদ্যমান আইনি বিধান বাস্তবায়ন করবে।

কনরাড সাংমা আরও জানান, তিনি অসমের মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে উভয় রাজ্যের বিশেষজ্ঞ এবং কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি যৌথ কর্মপরিকল্পনার অনুরোধ করেছেন। পাশাপাশি উদ্ভূত সংকট মোকাবিলায় মেঘালয় সরকার বৈজ্ঞানিক ও শিল্প গবেষণা পরিষদকে এলাকার নির্গমন তালিকা এবং উৎস বণ্টন অধ্যয়ন পরিচালনার জন্য নিযুক্ত করেছে, সদনকে জানান মুখ্যমন্ত্রী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *