নতুন দিল্লি, ৭ ডিসেম্বর : কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জগৎ প্রকাশ নাড্ডা আজ হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী নায়েব সিং সাইনি এবং কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ হরিয়ানার স্বাস্থ্য মন্ত্রী আরতি সিং রাও এর উপস্থিতিতে ভারতে যক্ষ্মা দূরীকরণের প্রচেষ্টায় এক যুগান্তকারী মুহূর্তের সূচনা করেছেন। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী প্রতাপরাও যাদব এবং অনুপ্রিয়া প্যাটেলও এই অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দেন। সারা দেশের ৩৪৭ টি জেলায় বাস্তবায়িত এই অভিযানের লক্ষ্য হল যক্ষ্মায় আক্রান্ত রোগীদের খুঁজে বের করে তাদের চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান করা এবং যক্ষ্মা রোগে মৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করা।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী যক্ষ্মার অবসানের জন্য সরকারের নিরলস প্রতিশ্রুতি তুলে ধরে বলেন, যক্ষ্মা মুক্ত ভারতের লক্ষ্যকে নতুন গতি দেওয়ার উদ্দেশ্যে এই অভিযান শুরু করা হয়েছে। ১০০ দিনের এই প্রচারাভিযানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের ৩৪ টি সর্বাধিক যক্ষা রোগাক্রান্ত জেলায় রোগীদের দ্রুত সনাক্ত ও চিকিৎসা করার চেষ্টা করা হবে।
যক্ষ্মার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দেশ যে দীর্ঘ সংগ্রামের মুখোমুখি হয়েছে, তা তুলে ধরেন শ্রী নাড্ডা। তিনি বলেন, “১৯৬২ সাল থেকে যক্ষ্মার বিরুদ্ধে অনেক অভিযান চালানো হয়েছে, কিন্তু ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শ্রী মোদী ২০৩০ সালের সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই যক্ষ্মা রোগমুক্ত দেশ গঠন করার স্বপ্ন দেখেছেন”।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান যক্ষ্মা রোগের পরিষেবাকে রোগী-বান্ধব করার জন্য অনেক নতুন কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, সারা দেশে ১.৭ লক্ষেরও বেশি আয়ুষ্মান আরোগ্য মন্দিরের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আজ যক্ষ্মা রোগ দ্রুত শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। তিনি আরও বলেন সরকার ২০১৪ সালে যেখানে ১২০টি যক্ষা রোগ সনাক্তকরণ কেন্দ্র ছিল সেই জায়গায় বর্তমানে ৮২৯৩টি যক্ষা রোগ সনাক্তকরণ কেন্দ্র রয়েছে| যক্ষা রোগ সনাক্তকরণ কেন্দ্রের সংখ্যা বৃদ্ধি করে রোগ নির্ণয় পরিষেবাও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করেছে। তিনি আরও বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকার যক্ষ্মার ওষুধের দৈনিক নিয়মাবলী চালু করেছে যার মধ্যে একটি নতুন সংক্ষিপ্ত এবং আরও কার্যকর নিয়মাবলী রয়েছে যা যক্ষ্মা চিকিত্সার সাফল্যের হারকে ৮৭ শতাংশ পর্যন্ত উন্নীত করেছে”।
শ্রী নাড্ডা উল্লেখ করেন, ১.১৭ কোটিরও বেশি যক্ষ্মা রোগীকে সরাসরি সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে ৩,৩৩৮ কোটি টাকার নি-ক্ষয় সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সরকার সম্প্রতি নি-ক্ষয় পোষনের পরিমাণ ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০০০ টাকা করেছে পাশাপাশি যক্ষ্মা রোগীদের পুষ্টি সহায়তার জন্য শক্তি বুস্টার যুক্ত করা হয়েছে।
শ্রী নাড্ডা জানান, সরকার এখন বেসরকারী চিকিৎসকদের জন্যও নতুন যক্ষ্মা রোগীদের সনাক্তকরণ বাধ্যতামূলক করেছে যাতে তাদের চিকিৎসা অবিলম্বে শুরু করা যায়। তিনি আরও বলেন, ভারতে যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যার হার ২০১৫ সালে ৮.৩ শতাংশ থেকে দ্বিগুণ হয়ে আজ ১৭.৭ শতাংশে পৌঁছেছে, যা বৈশ্বিক গড়ের তুলনায় অনেক বেশি। তিনি আরও জানান, গত ১০ বছরে ভারতে যক্ষ্মার কারণে মৃত্যুও উল্লেখযোগ্যভাবে ২১.৪ শতাংশ কমেছে।
এই উপলক্ষে বক্তব্য রাখতে গিয়ে নায়েব সিং সাইনি বলেন, ভারতে যক্ষ্মার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে হরিয়ানা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তিনি বলেন, ভারত যক্ষ্মার বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেছে জনভাগীদারী, নিক্ষয় পোষণ যোজনা, ফিট ইন্ডিয়া এবং খেলো ইন্ডিয়ার মতো সফল অভিযানের মাধ্যমে, যা সারা বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। শ্রী নায়েব বলেন, সরকার যক্ষ্মা দূরীকরণের জন্য ‘৪ টি “নিয়ে কাজ করছে, যেগুলি হল টেস্ট, ট্র্যাক, ট্রিটমেন্ট এবং টেকনোলোজি। তিনি উল্লেখ করেন যে, গত ১০ বছরে সুচারু ভাবে পরীক্ষার ফলে নতুন করে যক্ষ্মার রোগী শনাক্ত হয়েছে, যাদের বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিব পুণ্য সালিলা শ্রীবাস্তব ওষুধ বা পথ্যের যাতে কোনও ঘাটতি না হয়, সেই বিষয়ে সরকার তাদের পাশে আছে বলে আশ্বাস ব্যক্ত করেছেন| তিনি সমাজের সকল অংশের প্রতি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে এই অভিযানকে সফল করার আহ্বান জানান।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শ্রী নাড্ডা নতুন ওষুধ-প্রতিরোধী যক্ষ্মা পদ্ধতি, বিপিএএলএম-এর বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় নির্দেশিকা প্রকাশ করেন। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী এই অনুষ্ঠানে যক্ষ্মা চ্যাম্পিয়ন এবং নিক্ষয় মিত্রদের সম্মানিত করেন এবং খাবারের ঝুড়ি বিতরণ করেন।
এই অভিযানের উদ্দেশ্য হল উন্নত স্ক্রিনিং এবং ডায়াগনস্টিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে রোগ নির্ণয় করা| পাশাপাশি চিকিত্সা পরিসেবা প্রদানে যাতে দেরী না হয় সেই কারণে দ্রুত যক্ষা রোগীদের সনাক্তকরণ বৃদ্ধি করা। একইভাবে, নিক্ষয় পোষণ যোজনার মাধ্যমে যক্ষ্মার কারণে মৃত্যুহার কমাতে এই কর্মসূচি রোগীদের জন্য বিশেষ যত্ন প্রদানে সহায়ক হবে|