BRAKING NEWS

ডিবি স্টক কেলেংকারির মূল অভিযুক্ত দীপঙ্কর বর্মনের তিন দিনের ট্রানজিট রিমান্ড মঞ্জুর গোয়া আদালতে

গুয়াহাটি, ২৮ অক্টোবর (হি.স.) : ডিবি স্টক কেলেংকারির মূল অভিযুক্ত তথা ‘মানি ট্ৰেডিং’-এর নামে কোটি কোটি টাকা আত্মস্যাৎ করার অভিযোগে ধৃত দীপঙ্কর বর্মনের তিন দিনের ট্রানজিট রিমান্ড মঞ্জুর করেছে গোয়ার পারনেম আদালত। আগামীকাল তাকে নিয়ে গুয়াহাটির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবে গুয়াহাটি পুলিশ।

পানাজি থেকে প্রায় ৭০-৮০ কিলোমিটার দূরে আরম্বোল বিচের কাছে রবিবার গুয়াহাটি পুলিশ পরিকল্পিত সতর্কতার সঙ্গে অভিযান চালিয়ে দীপঙ্কর বর্মনকে গ্রেফতার করেছিল। গত দু মাসের বেশি, ৬৯ দিন ধরে দেশের একাধিক রাজ্যে তালাশি অভিযান রাজ্য পুলিশের কাছে ছিল এক চ্যালেঞ্জিং বিষয়। পানজিমে সে জনৈক ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করতে হোম-স্টে থেকে বেরিয়েছিল সে। ওই ব্যক্তি ছিলেন অসম পুলিশের নিয়োজিত বিশেষ সোর্স। ব্যক্তিটি যে পুলিশের সোর্স তা ঘূণাক্ষরেও জানত না দীপঙ্কর। সে যে বিকালে (রবিবার) তার সঙ্গে দেখা করতে আসবে সে খবর সোর্সটি পুলিশকে জানিয়ে দেয়। ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করতে আসার পর সঙ্গে সঙ্গে কৌশলে তাকে পাকড়াও করে গোয়া এবং অসম পুলিশের দল।

আজ সোমবার এক সাংবাদিক সম্মেলন করে তদন্তের আপডেট প্রদান করে গুয়াহাটির পুলিশ কমিশনার দিগন্ত বরা এ সব তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, তার হদিশ বের করতে এবং মামলার সঙ্গে জড়িত অভিযোগে ইতিমধ্যে পাঁচজনকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তারা দীপঙ্কর বর্মনের বাবা, মা, তার বান্ধবী, তার বোন এবং তার চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। দীপঙ্করকে গ্রেফতার করতে পুলিশকে বহু প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করতে হয়েছিল। কারণ গত ২১ আগস্ট থেকে সে সোশাল মিডিয়া বন্ধ করে ক্যাপচার এড়াতে চার-পাঁচদিন অন্তর অন্তর অবস্থান পরিবর্তন করেছিল।

গোয়ায় সে বিভিন্ন রিজোর্ট, হোটেল এবং স্টে-হোমে ছিল। সেখানে টাকার লেনদেন ডিজিটালি না করে নগদে করত। তাকে হাওলায় বহুজন অর্থ যোগান করেছেন। নতুন সিম সহ মোবাইল ফোনও কেউ তাকে দিয়েছিল। দীপঙ্করের হেফাজত থেকে ২৭ লক্ষ ৬ হাজার ৭৫০ টাকা নগদ, বেশ কিছু গয়না, তার পাসপোর্ট এবং দুটি মোবাইল ফোনের হ্যান্ডসেট বাজেয়াপ্ত করেছে অভিযানকারী পুলিশ, জানান পুলিশ কমিশনার।

সিপি দিগন্ত বরা জানান, নির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে গত প্রায় দু সপ্তাহ ধরে গুয়াহাটির পানবাজার থানার পুলিশ গোয়ায় অবস্থান করছিল। অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার অমিত মাহাতোর নেতৃত্বে দুই সাব-ইন্সপেক্টর এবং একজন কনস্টেবলের এক দল অভিযান চালিয়ে গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় দীপঙ্কর বর্মনকে গ্রেফতার করে। সৰ্বশেষে সে পানাজি থেকে বহু দূরে ফায়ারফ্লাই নামের একটি হোম-স্টের আবাসিক ছিল।  

তিনি বলেন, ‘উন্নত প্রযুক্তিগত ট্র্যাকিং পদ্ধতি ব্যবহার করে গোয়ায় বর্মনের গতিবিধি অনুসরণ করতে সোর্স নিয়োগ করা হয়েছিল। তাকে ধরতে আমাদের পুলিশকে সহায়তা করেছে গোয়া পুলিশ’, বলেন পুলিশ কমিশনার দিগন্ত। সিপি বলেন, ‘আমরা তার সাথে সম্পর্কিত আর্থিক লেনদেনের সূত্র ধরেছিলাম যা অসমে উদ্ভূত হয়েছিল।’  

সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (সিবিআই) দীপঙ্কর বর্মনের বিরুদ্ধে প্রাথমিক মামলা নেওয়ার পর গুয়াহাটির পল্টনবাজার থানায় ৩৭৪/২৪ নম্বরে একটি নতুন মামলা দায়ের করা হয়েছে। সিবিআই ইতিমধ্যে অসমের বহু-কোটি অনলাইন ট্রেডিং কেলেংকরির সাথে যুক্ত ৪১টি রেজিস্টার্ড মামলার তদন্ত করছে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে, অনলাইন ট্রেডিং কেলেংকরি সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত নিশ্চিত করা হবে বলে এ মাসের শুরুর দিকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা নিশ্চিত করেছিলেন। রাজ্য সরকার কেন্দ্রের কাছে সমস্ত ৪১টি মামলা সিবিআইকে স্থানান্তর করার অনুরোধ করেছিল। মুখ্যমন্ত্রী আশ্বস্ত করেছিলেন, অসম সরকার ভুক্তভোগীদের বিচার ত্বরান্বিত করতে পূর্ণ সহযোগিতা করবে।

জানা গেছে, অসম, তেলেঙ্গানা, হরিয়ানা, নাগাল্যান্ড, কৰ্ণাটক এবং সিকিমে দীপঙ্করের বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা রুজু হয়েছে। হায়দরাবাদের বহু বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে কয়োকশো কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে দীপঙ্কর। ইতিমধ্যে তার বিরুদ্ধে তেলেঙ্গানা পুলিশও তদন্ত শুরু করেছে। হায়দরাবাদের কেপিএইচবি কলোনিতে দীপঙ্করের মালিকানাধীন ডিবি স্টকের কাৰ্যালয়ে পুলিশ অভিযান চালিয়েছে। হায়দরাবাদ পুলিশ ওই কার্যালয়ের কৰ্মচারীদের জেরা করছে বলে জানা গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *