গুয়াহাটি, ২৭ অক্টোবর (হি.স.) : ভারতের জাতীয় আখ্যানের কেন্দ্রবিন্দু উত্তর-পূর্বাঞ্চল। কৃষ্ণগুরুজি ঐশ্বরিক অনুগ্ৰহের সংক্ষিপ্তসার মূর্ত করেছেন, বলেছেন উপ-রাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকড়।
আজ রবিবার গুয়াহাটির খানাপাড়ায় অবস্থিত পশু চিকিৎসা বিজ্ঞান মহাবিদ্যালয়ে ‘কৃষ্ণগুরু ইন্টারন্যাশনাল স্পিরিচুয়াল ইয়ুথ সোসাইটি’র ২১-তম আন্তর্জাতিক সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে ভাষণ দিচ্ছিলেন উপ-রাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকড়। অসমের রাজ্যপাল লক্ষ্মণ প্ৰসাদ আচাৰ্য, মুখ্যমন্ত্ৰী ড. হিমন্ত বিশ্ব শৰ্মা, কেন্দ্ৰীয় বন্দর, জাহাজ ও জলপথ দফতরের মন্ত্ৰী সৰ্বানন্দ সনোয়াল, বিটিআর-এর মুখ্য কাৰ্যনির্বাহী সদস্য প্ৰমোদ বড়ো, ভক্তিমাতৃ কুন্তলা পাটোয়ারী গোস্বামী, কৃষ্ণগুরু ইন্টারন্যাশনাল স্পিরিচুয়াল ইয়ুথ সোসাইটির সভাপতি কমলা গগৈ সহ বহু গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে উপ-রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমি পূৰ্বোদয়ের একটি পৰ্যায় দেখেছি, যা কখনও কল্পনা করা যায়নি। এমন-কি এই দেশের মানুষও তা কল্পনা করতে পারেননি। আজ তা উত্তর-পূর্বাঞ্চলে হচ্ছে।’
প্ৰতিদিন উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উন্নয়ন কীভাবে দ্ৰুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে সে সম্পর্কে ধনখড় বলেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রূপান্তর হলো অন্তর্ভুক্তির চেতনার প্রমাণ যা ভারতের অগ্রগতিকে চালিত করে। বিগত দশকের পর দশক এই অঞ্চল উন্নয়ন এবং সংযোগ-সম্পর্কিত নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিল। কিন্তু আজ বাস্তবিক অর্থে এই অঞ্চল এগিয়ে চলেছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের পরিবর্তন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে তিনটি নীতি আপনাকে সাহায্য করতে পারে। আধ্যাত্মিকতা থেকে নিজেকে দূরে রাখবেন না। কৃষ্ণগুরুজি আধ্যাত্মিকতার যে পথের দিশা দেখিয়ে গিয়েছেন, সে পথ থেকে বিচ্যুত হলে আমাদের বিরাট ক্ষতি হবে। এই পথ ধরে যে তিনটি নীতি পালন করতে হবে সেগুলি যথাক্রমে জাতীয়তাবাদ, আধুনিকতা এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়ন। ‘বহু বছর আগে যা বলা হয়েছিল সে অনুযায়ী যখন এই তিনটি একত্রিত হবে, তখন বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি ‘বিশ্ব নেতা’ হওয়ার অবস্থান বাস্তবে পরিণত হবে – কেউ তা থামাতে পারবে না, এই দায়িত্ব বৰ্তায় আপনার-আমার কাঁধে।’
কৃষ্ণগুরুজি শিক্ষাক্ষেত্ৰে যে প্রভাব রেখে গিয়েছেন তার প্রশংসা করে উপ-রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘কৃষ্ণগুরুজি ঐশ্বরিক অনুগ্ৰহের সারাংশ মূর্ত করেছেন, তাঁর প্রেম, সেবা এবং মানবতার শিক্ষা তাঁর ভক্তদের হৃদয়কে আলোকিত করেছে।’ তিনি বলেন, ‘মনে রাখবেন আমার বন্ধুরা, আধ্যাত্মিকতার কিছু অন্তর্নিহিত গুণ রয়েছে – প্রেম, সহানুভূতি, ধৈর্য, সহনশীলতা, ক্ষমা এবং দায়িত্ব। এই মূল্যবোধগুলিকে প্রচার করে আমরা একটি শান্তিপূর্ণ ও ন্যায়বিচারের জন্য বীজ রোপণ করতে পারি।’
ভারতের স্থিতিশিলতা এবং নিঃস্বার্থ সেবার ইতিহাসও তাঁর বক্তব্যে তুলে ধরেছেন উপ-রাষ্ট্রপতি। বিশেষ করে সংকটকালে এর প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেছেন তিনি। বলেন, ‘আমাদের ইতিহাস জুড়ে অনেক সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আমাদের মহান নেতা এবং আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্বরা সবসময় সংকটকালে আমাদের সমর্থন করেছেন। তাঁরা এমন একটি সংস্কৃতি প্রদান করেছেন যেখানে তা কোভিড-১৯ অতিমারি, ভূমিকম্প কিংবা অন্য কোনও দুর্যোগই হোক না-কেন, আমাদের মন্দির এবং আধ্যাত্মিক কেন্দ্রগুলি মানুষকে স্বস্তি দিতে এগিয়ে এসেছে।’
ভারতের প্রাচীন গ্রন্থাবলীর তাৎপর্য ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘রামায়ণ, মহাভারত, শ্রীমদ্ভাগবত গীতা, উপনিষদ এবং বেদ আমাদের কী মনে করিয়ে দেয়? কর্ম একটি মহৎ উদ্দেশ্য দ্বারা পরিচালিত হওয়া উচিত, যা শুধুমাত্র নিজের নয়, অন্যান্য সম্প্রদায়ের জন্যও উপকারে আসতে পারে। এই বার্তা আজ গভীরভাবে অনুরণিত হয়।’
প্রাচ্যে ভারতের বিদেশ নীতির বিবর্তনের প্ৰসঙ্গেও বলেছেন উপ-রাষ্ট্রপতি। বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী লুক ইস্ট-অ্যাক্ট ইস্ট-এর মাধ্যমে ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে আবির্ভূত লুক-ইস্ট ভিজনকে আরও প্রভাবশালী স্তরে নিয়ে গেছেন৷ এর অর্থ হলো ভারত দক্ষিণ-পূর্ব আশিয়ান দেশগুলির সাথে আরও গভীরভাবে জড়িত হতে শুরু করেছে।’
উপ-রাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকড় উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে একটি প্রাণবন্ত ও সমৃদ্ধ অঞ্চলে পরিণত করার ক্ষেত্রে নীতির রূপান্তরমূলক ভূমিকার কথাও উল্লেখ করেছেন। তিনি উত্তর-পূর্বাঞ্চলের স্বতন্ত্র পরিচয় এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বর্ধিত স্বীকৃতির জন্য গর্বও প্রকাশ করেছেন। বলেন, ‘অতিসম্প্রতি আমরা একটি গর্বিত মুহূর্ত দেখেছি যখন বাংলা, মারাঠি, পালি এবং প্রাকৃতের সাথে অসমিয়াকে ভারতের অন্যতম ধ্ৰুপদী ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দীর্ঘ দিনের প্রয়োজনীয়তা পূরণ হয়েছে।’ তিনি বলেন, এটি অসমের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এই স্বীকৃতি অসমকে তার সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং স্থানীয় বৈচিত্র্য ভাগাভাগি করতে সক্ষম করবে, সারা দেশে সাংস্কৃতিক সম্পদের প্রভাব ও গুরুত্ব বৃদ্ধি করবে।
‘এই এলাকার অপরিসীম সৌন্দর্য আত্মদর্শন এবং ধ্যানের জন্য উপযোগী প্রশান্তির পরিবেশ তৈরি করে, যা এই জায়গায় আধ্যাত্মিকতার গভীর অন্বেষণ এবং জীবনের আন্তঃসংযুক্ততার বৃহত্তর উপলব্ধির দিকে পরিচালিত করেছে।’ যোগ করেন উপ-রাষ্ট্রপতি।
উপ-রাষ্ট্রপতি ধনখড় পরিবর্তনের মাত্রা প্রতিফলিত করে মূল পরিসংখ্যান প্রকাশ করে বলেছেন, গত ১০ বছরে কেন্দ্রীয় সরকার এই অঞ্চলের জন্য ৩.৩৭ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। এগুলো শুধু সংখ্যা নয়, এগুলি ভূতল সড়ক, রেলপথ এবং বিমানবন্দরের পাশাপাশি আরও ভালো সংযোগের ক্ষেত্রে স্পষ্ট পদচিহ্ন রেখে চলেছে।