নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২১ অক্টোবর:
হুক লাইনে বিদ্যুৎ সংযোগ এখন অভিশাপের রূপ নিয়েছে। বিদ্যুৎ চুরি করতে গিয়ে শুধু বিদ্যুৎ নিগমের আর্থিক ক্ষতি কিংবা সংলগ্ন এলাকার বৈধ বিদ্যুৎ গ্রাহকদের যন্ত্রণাই বাড়াচ্ছেন না, নিজের জীবনের প্রবল ঝুঁকিও নিয়ে নিচ্ছেন একশ্রেণীর মানুষ। বিদ্যুৎ নিগমের তরফে বারবার জনসাধারণকে এ বিষয়ে সচেতন করা হলেও এক শ্রেণীর মানুষ লাগাতার ভাবে বিদ্যুৎ চুরি করছেন।
হুক লাইনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ চুরি রোধ করতে বিদ্যুৎ নিগমের তরফে প্রতিদিনই ভিজিলেন্স টিম বিভিন্ন এলাকায় হানা দিয়ে হুকলাইন ছিন্ন করছেন। বিভিন্ন সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করছেন এবং নগদ জরিমানা ও করছেন। কিন্তু এরপরেও বিদ্যুৎ চুরি চলছেই। বিভিন্ন স্থানে হুকলাইন বিরোধী অভিযান চালাতে গিয়ে ত্রিপুরা রাজ্য বিদ্যুৎ নিগমের ভিজিলেন্স টিম লক্ষ্য করেছেন, অর্থ সম্পন্ন কিছু পরিবারও হুকলাইন ব্যবহার করছেন নানা ক্ষেত্রে। আবার বিভিন্ন কারখানা এবং প্রতিষ্ঠানের একটা অংশ বিকল্প পদ্ধতি ব্যবহার করে বিদ্যুতের ইউনিট কমিয়ে দেওয়ার কারিগরি পন্থা কাজে লাগাচ্ছেন। এটা যে কত বড় বিপদজনক, তারা বুঝেও বুঝতে চাইছেন না।
এই অভিযানের অঙ্গ হিসেবে আমবাসায় হুক লাইন বিরোধী অভিযান চালানো হয়েছে। বিভিন্ন বাড়িতে দিয়ে বিদ্যুৎ নিগমের সংশ্লিষ্ট কর্মীরা হুক লাইন রয়েছে কিনা সেই বিষয়ে অবগত হন। যেসব গ্রাহকরা হুক লাইন ব্যবহার করছেন তাদেরকে জরিমানা করা হয়। পাশাপাশি হুক লাইন ব্যবহারের ফলে তৈরি হও য়া বিভিন্ন ঝুঁকির বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন।
এক্ষেত্রে সমাজের সর্বস্তরের জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে হুক লাইন অর্থাৎ বিদ্যুৎ চুরি বন্ধ হতে পারে। কোথাও বিদ্যুৎ চুরি অর্থাৎ হুক লাইন দেখলেই বৈধ গ্রাহক প্রতিবাদ জানাতে পারেন। এতে জীবনহানি এবং সম্পদহানি থেকে যেমন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে রক্ষা করা যাবে, তেমনি পার্শ্ববর্তী এলাকায় বিদ্যুৎ পরিষেবাও অক্ষুন্ন থাকবে। সেই সঙ্গে বিদ্যুৎ নিগম বিশাল অর্থ ক্ষতি থেকেও নিজেদের রক্ষা করতে পারবে।
কিন্তু এর সঙ্গে সৌভাগ্য যোজনার কোন সম্পর্ক নেই। সৌভাগ্য যোজনা অর্থাৎ কেন্দ্রীয় এই প্রকল্প ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে রিয়াং জনজাতিদের জন্য পি এম জনমন প্রকল্প চলছে। ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজ্যে মোট ১ লক্ষ ৩৬ হাজার ২৩২ জনকে সৌভাগ্য যোজনায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছিল । বর্তমানে এ জাতীয় কোন প্রকল্প চালু নেই। ফলে এই প্রকল্পে বিদ্যুৎ সংযোগ না পাওয়ার ফলেই হুক লাইনের বিদ্যুৎ চুরি হচ্ছে এমন ধারণা ঠিক নয়। হুক লাইন বর্তমানে একটা ব্যাধির রূপ নিয়েছে । একমাত্র সমাজের সর্বস্তরের জনগণের সক্রিয়ভাবে রুখে দাঁড়ানোর মাধ্যমেই বিদ্যুৎ চুরি বন্ধ হতে পারে এবং এর মাধ্যমে নিরন্তর বিদ্যুৎ পরিষেবা জারি রাখার পাশাপাশি হুক লাইন জনিত দুর্ঘটনা রোধ করা ও সম্ভব হবে।