BRAKING NEWS

কাঁকসার বনকাটির রায় পরিবারের  প্রায় ৯০০ বছরের   প্রাচীন শশ্মান কালী

দুর্গাপুর, ২০ অক্টোবর(হি.স.) : বদলে গেছে রাজত্ব। তবে ভগ্নপ্রায় মন্দিরে   জৌলুস কমেনি পুজোর।  নরবলির   বদলে পরিবারের   একজনের   এক ফোঁটা রক্ত নিবেদন করা   হয়। কাঁকসার   বনকাটির রায় পরিবারের শশ্মান কালী পুজোতে। এখনও চিরাচরিত প্রথা মেনেই পুজিত হয়।  বনকাটি রায় পরিবার। রাজা বল্লাল সেনের   কুল গুরুর   বংশধর।  কথিত আছে রাজার   আমলে ঘন জঙ্গল কেটে গ্রাম তৈরি হয়। তাই বনকাটি নামকরন। রাজা বল্লাল সেন বাংলাদেশ যুদ্ধে পরাজিত হয়ে দীক্ষাগুরু   তান্ত্রিক আচার্য মহেশ্বর   প্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে কাঁকসার   গড়জঙ্গলে রাজ্যপাট শুরু   করেন। অজয় নদী মাধ্যমে ব্যাবসা বানিজ্য সুবিধার্থে বনকাটি গ্রাম পর্যন্ত চ্যানেল খাল তৈরি   করেন। বনকাটি এলাকা থেকে লাক্ষা ও কাঠ কয়লা কোলকাতায় নিয়ে যাওয়া হত।সেখান থেকে মশলাপাতি নিয়ে আসা হত। এককথায় বনকাটি ছিল রাজা বল্লাল সেনের   বানিজ্যিক কেন্দ্র। পানাগড়   মোরগ্রাম রাজ্য সড়কের   এগারো   মাইল মোড়   থেকে পশ্চিম দিকে অজয় নদীর লাগোয়া বনকাটি গ্রাম।তৎকালীন সময়ে রাজার   কুল গুরু   মহেশ্বর   প্রসাদ ওই গ্রামেই শশ্মানকালী পুজো শুরু   করেন। সম্পূর্ণ তান্ত্রিক মতে পুজো করতেন। কথিত আছে ছাগ, মেষ ও মহিষ বলির   পাশাপাশি ওই সময় নরবলিও দেওয়া হত। যদিও বর্তমানে সেসব প্রথা উঠে গেছে। তবে পরিবারের   একজন একফোঁটা রক্ত নিবেদন করেন। পরবর্তীকালে মহেশ্বর   প্রসাদের   বংশধর   বৃটিশদের সঙ্গে কোনও মামলায় ডিগ্রি পায়। তখন বৃটিশদের   কাছ থেকে রায়বাহাদুর   খেতাবন পায়। আর   তারপর   থেকে বন্দ্যোপাধ্যায়ের   বদলে রায় পদবি হয় আচার্যের   বংশধরদের।  এছাড়াও রায় পরিবারের   পূর্ব পুরুষরা   যাতে জল পায়, তার   জন্য তাদের   নামে পাঁচটি শিব মন্দির   প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মহেশ্বর   প্রসাদের   এক বংশধর   লক্ষ্মীকান্ত রায়। সেসব মন্দির   এখনও রয়েছে। তবে টেরাকোটার   নকশার   কাজ করা   ওইসব মন্দির সংস্কারের   অভাবে ভগ্নপ্রায়। তবে কালী মন্দির   নতুন করে সংস্কার   করা   হয়। যেখানে রয়েছে পঞ্চমুন্ডী আসন। পুজোর   নিয়মনীতি প্রসঙ্গে রায় পরিবারের   প্রবীন বংশধর   অনিল কুমার   রায় জানান,” তান্ত্রিক মতে এবং পুর্বপুরুষের   লেখা পুঁথি দেখে পুজো হয়।  পুজোয় বসার   আগে শশ্মানে কিছু ক্রীয়াকর্ম করতে হয়। তারপর   গুরুপূজন এবং মায়ের   বারিঘট নিয়ে এসে প্রতিষ্ঠা করা   হয়। মায়ের   নিজস্ব পুকুর   জরুলি পুকুর   থেকে বারি   নিয়ে আসা হয়। নিশিরাতে মায়ের   হোম যজ্ঞ করা   হয়। রায় পরিবারের   ১ হাজার   ৮ টি বেলপাতা ৫ কেজি ২৫০ গ্রাম গাওয়া ঘি তারপর   ভক্তদের   ঘি, বেলপাতা থাকে। এছাড়াও পরিবারের   একটি ছাগ, একটি মেষ, একটি মহিষ বলি দেওয়া হয়। তারপর   ভক্তদের   মানত করা   ছাগ বলি দেওয়া হয়। সবশেষে নিজের রক্ত একফোঁটা নিবেদন করতে হয়। তারপর   পুর্নাহুতি দেওয়া হয়।” অনিলবাবুর   ছেলে বুদ্ধদেব রায় জানান,” কালী পুজোয় নরনারায়ন সেবা করানো হয়। তাছাড়াও মায়ের   নিত্য সেবা হয়। প্রত্যেক আমাবস্যায় হোমযজ্ঞ হয়।”অনিলবাবু আরও জানান,”মায়ের   মন্দিরে   পরিবারের   ছাড়া   অন্য কেউ রাতে থাকতে পারে   না। একবার   এক তান্ত্রিক মন্দিরে   থাকার   জেদ করেছিলেন এবং রাাাতে শুয়ে ছিলেন। পরদিন সকালে দেখা যায় মায়ের   মন্দিরের   বাইরে   তিনি পড়ে   রয়েছেন।” তিনি আরও জানান,” প্রাচীন এই মন্দিরে   আশপাশের   গ্রাম থেকেও পুন্যার্থীরাও আসেন।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *