করিমগঞ্জ (অসম), ১১ অক্টোবর (হি.স.) : করিমগঞ্জের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত নো-ম্যান্স ল্যান্ডের ৩৮টি পরিবার অন্যান্যবারের মতো এবারও মা উমার আরাধনায় মেতে উঠেছেন। জেলাসদর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত গোবিন্দপুর গ্রাম। ওপারে বাংলাদেশের বিয়ানিবাজার। গত কিছুদিন আগে বাংলাদেশ সরকারের পালাবদলের ফলে দুই দেশের সীমান্তে পরিস্থিতি কী হবে তা নিয়ে চাপা উত্তেজনা ছিল। এক সময় আতঙ্কে রাত কাটছিল কাঁটাতারের ওপারে অবস্থানকারী বাসিন্দাদের। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সব কিছু ভুলে বিএসএফ-এর সহযোগিতায় দেবী বোধনের দিন থেকেই উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেছেন গ্রামের আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা।
বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের চণ্ডীপাঠ, ঢাক আর কাঁসর ঘণ্টার ধ্বনীতে মাতাল নো-ম্যান্স ল্যান্ড। ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে দেবী বরণের ইতিহাস রয়েছে গ্রামের। এবারে আনন্দময়ীর বন্দনায় কোনো খামতি নেই ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী গোবিন্দপুরবাসীর।
কোনও আধুনিকতাও নেই এখানে। সাত্ত্বিকতা বজায় রেখে নো-ম্যান্ড ল্যান্ডের ৩৮টি পরিবারই পুজো কমিটির সদস্য। সকলের দানে বিএসএফ-এর সহযোগিতায় আয়োজন হয় দুর্গা মহোৎসব। এবার স্বতঃস্ফূর্ত সহায়তা ও দানে অনুষ্ঠিত হচ্ছে মাতৃবন্দনা। এখানে কোনও ধর্মীয় ভাব প্রাচীর গড়ে তুলতে পারেনি। আনন্দে শামিল হয়েছে গ্রামের ইসলাম ধর্মালম্বীরাও। গোটা গ্রাম আনন্দে কাটায় পুজোর চারদিন।
গোবিন্দপুরের ৩৮টি হিন্দু পরিবার হলেও দুটি পরিবার রয়েছে ইসলাম ধর্মালম্বী। তবে শারদ-বন্দনায় সবাই একাকার। ধৰ্ম যার যার, উৎসব সবার – এই বার্তাকে সামনে রেখে সবাই একই আনন্দে শামিল থাকার ইতিহাস তাঁদের দীর্ঘদিনের।
বৃহস্পতিবার সীমান্তে পুজোর আনন্দে উপভোগ করতে ছুটে যান উত্তর করিমগঞ্জের বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ। বিএসএফ আধিকারিকদের সঙ্গে নিয়ে গোবিন্দপুরে পৌঁছে মতবিনিময় করেন গ্রামের মানুষের সঙ্গে। তিনি তাঁদের হাতে তুলে দিয়েছেন পুজোর আর্থিক অনুদান। আর পুজোর একমাত্র অতিথি স্থানীয় বিধায়ককে কাছে পেয়ে আপ্লুত ৩৮টি পরিবারের সকল সদস্য।
গ্রামের মানুষের বক্তব্য, তারের ভিতরের মানুষ বলে তাঁদের পরিচয়। পূর্ব-পুরুষের আমল থেকে তাঁরা এখানে দুর্গা পূজা করে আসছেন। কিন্তু অতিথি আপ্যায়নের ভাগ্য হয় না তাঁদের। কারণ, যেহেতু আন্তর্জাতিক সীমান্ত, তাই বিএসএফ-এর বেশ কিছু বিধিনিষেধ থাকে। তবে এই প্রথম তাঁরা কোনও অতিথি আপ্যায়ন করতে পেরেছেন। সকলের সঙ্গে একসাথে বসে বিধায়কও মহাপ্রসাদ গ্রহণ করেছেন।

