খেলো ইন্ডিয়া: তৃণমূল থেকে ভারতের অলিম্পিক স্বপ্নের ইন্ধন জোগাচ্ছে 

লিখেছেন: ডঃ মনসুখ মাণ্ডব্য

কেন্দ্রীয় যুব বিষয়ক, ক্রীড়া এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী

প্যারিস অলিম্পিক ২০২৪-এ টিম ইন্ডিয়ার সাফল্য ভারতীয় দলের সামগ্রিক উন্নতির ইঙ্গিত। এবারের অলিম্পিকে ৬ টি পদক জয় করা ছাড়াও, আমাদের ৮ জন অ্যাথলিট চতুর্থ অবস্থানে ছিলেন এবং কেবল অল্পের জন্য পোডিয়াম ফিনিস মিস করেছিলেন। তাদের মধ্যে পাঁচজন প্রথমবারের মত অলিম্পিকে অংশ নিয়েছিল। প্রায় ১৫ জন অ্যাথলিট প্রতিযোগিতার কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছেছিলেন, যা ভারতের জন্য প্রথম।

প্যারিস অলিম্পিকে দেখা গেছে নতুন ও উজ্জীবিত ভারতের মুখ । ১১৭ সদস্যের এই দলে ২৮ জনই খেলো ইন্ডিয়ার অ্যাথলিট ছিলেন।ভারতের সর্বকনিষ্ঠ অলিম্পিক পদকজয়ী আমন সেহরাওয়াত এবং পিস্তল শ্যুটার পদকজয়ী সরবজ্যোত সিং সহ ২৭০০-রও বেশি ক্রীড়াবিদ খেলো ইন্ডিয়া কর্মসূচির অন্তর্গত ক্রীড়াবিদ। অলিম্পিকে দুটি পদকজয়ী মনু ভাকের খেলো ইন্ডিয়া ইউনিভার্সিটি গেমস ২০২২ থেকে একাধিক পদক জিতেছেন, যখন তিনি ২০১৮ সালে খেলো ইন্ডিয়া স্কুল গেমসের প্রথম পর্বেরও অংশ ছিলেন।

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, ভারত তার ক্রীড়া প্রতিভাকে পরিচর্যার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে৷ এরজন্য উচ্চাভিলাষী খেলো ইন্ডিয়া কর্মসূচীকে অনেকাংশে ধন্যবাদ। ২০১৮ সালে শুরু হওয়া এই উদ্যোগটি ভারতীয় ক্রীড়ার জন্য একটি গেম-চেঞ্জার হয়ে উঠেছে। সম্ভবত খেলো ইন্ডিয়ার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য প্রভাব হ’ল ভারতের অলিম্পিক আকাঙ্ক্ষার জন্য ফিডার সিস্টেম হিসাবে এর ভূমিকা। প্রাথমিকভাবে ক্রীড়া প্রতিভাকে চিহ্ণিত করে এবং তাদেরকে সহায়তা প্রদান করার মাধ্যমে, কর্মসূচীটি এমন ক্রীড়াবিদদের একটি পাইপলাইন তৈরি করছে যারা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিযোগিতা করার জন্য আরও ভালভাবে প্রস্তুত রয়েছে। ফলাফল ইতিমধ্যেই দেখাতে পাওয়া যাচ্ছে৷ বেশ কয়েকজন খেলো ইন্ডিয়া অ্যাথলিট অলিম্পিক সহ বড় বড় আন্তর্জাতিক ইভেন্টে দেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন। এই কর্মসূচির সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি, কেবল প্রশিক্ষণ প্রদান করাই নয়, খাদ্য, পুষ্টি, সরঞ্জাম এবং শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সাহায্য করা৷ এক্ষেত্রে অ্যাথলিট প্রতি বার্ষিক ৬.২৮ লক্ষ টাকা বৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা রয়েছে৷ এই ব্যবস্থা নিশ্চিত করছে যে ভারতের ভবিষ্যতের অভিজাত অলিম্পিয়ানরা খেলাধুলার চাপ সামলাতে সক্ষম । প্রকৃতপক্ষে, প্যারিস প্যারালিম্পিক্সে মোট ৮৪ জন প্যারা-অ্যাথলিটের মধ্যে মোট ২৫ জন খেলো ইন্ডিয়া অ্যাথলিট রয়েছেন।

২০১৮ সাল থেকে মোট ১৫ টি খেলো ইন্ডিয়া গেমস অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ এগুলো হল- ৬ টি খেলো ইন্ডিয়া যুব গেমস, ৪ টি খেলো ইন্ডিয়া বিশ্ববিদ্যালয় গেমস, ৪ টি খেলো ইন্ডিয়া শীতকালীন গেমস এবং ১ টি খেলো ইন্ডিয়া প্যারা গেমস। এই গেমস থেকে, আমরা ১০০০ এরও বেশি প্রতিভাবান ক্রীড়াবিদকে চিহ্নিত করেছি। এছাড়াও, মোট ৩০২ টি স্বীকৃত একাডেমি, ১ হাজারের বেশি খেলো ইন্ডিয়া কেন্দ্র, ৩২টি খেলো ইন্ডিয়া স্টেট সেন্টার অফ এক্সেলেন্সের মাধ্যমে আমরা নিশ্চিত করছি যে আমাদের তৃণমূল পর্যায়ের ক্রীড়াবিদদের ভবিষ্যতের চ্যাম্পিয়ন করার জন্য প্রতিটি সম্ভাব্য পরিকাঠামো প্রস্তুত রয়েছে।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে, সরকার এই প্রোগ্রামে প্রায় ৩,৬১৬ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে, যা তৃণমূল পর্যায়ে খেলাধুলার বিকাশের প্রতিশ্রুতির একটি প্রমাণ। ৩৬টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ১০৫৯টি খেলো ইন্ডিয়া কেন্দ্র (কেআইসি) বিজ্ঞাপিত হয়েছে, যার মধ্যে মোট ৭৪৭টি জেলা রয়েছে। এই কেন্দ্রগুলি স্থানীয় প্রতিভা সনাক্তকরণ এবং লালনপালনের কেন্দ্র হিসাবে কাজ করছে৷ ভৌগলিক অবস্থান বা অর্থনৈতিক পটভূমি নির্বিশেষে যে কোনও সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়নকে নজরে নিয়ে আসতে এই কেন্দ্রগুলি কাজ করছে। পাশাপাশি কেন্দ্রগুলি অতীতের চ্যাম্পিয়ন ক্রীড়াবিদদের জীবিকার জন্য স্থায়ী নিশ্চয়তা প্রদান করছে।

এছাড়াও, এই কর্মসূচির অধীনে ৩১টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ৩২টি খেলো ইন্ডিয়া স্টেট সেন্টার অফ এক্সেলেন্স (কেআইএসসিই) প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এই অত্যাধুনিক সুবিধাগুলি নির্দিষ্ট ক্রীড়াক্ষেত্রগুলিতে বিশেষ প্রশিক্ষণ দিচ্ছে, যা নিশ্চিত করে যে অ্যাথলিটদের বিশ্বমানের পরিকাঠামো এবং কোচিংয়ের সুবিধা রয়েছে। এই উৎকর্ষ কেন্দ্রগুলি কেন্দ্রে অনুশীলন করা ক্রীড়া শৃঙ্খলার জন্য ক্রীড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে সহায়তা প্রদান করছে। এগুলি উন্নত ক্রীড়া সরঞ্জাম, উচ্চ পারফরম্যান্স ম্যানেজার, কোচ এর মত বিষয়গুলির শূণ্যতাকেও পূরণ করছে৷

খেলো ইন্ডিয়া রাইজিং ট্যালেন্ট আইডেন্টিফিকেশন (কেআইআরটিআই) প্রোগ্রামটি তৃণমূল স্তরের প্রতিভা অন্বেষণে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করছে। কেআইআরটিআইয়ের লক্ষ্য হল ভারত জুড়ে অব্যবহৃত ক্রীড়া প্রতিভাকে সনাক্ত করা এবং ক্রীড়া সচেতনতার সংস্কৃতি গড়ে তোলা। কর্মসূচীটি ৯ থেকে ১৮ বছর বয়সী স্কুল-শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিভাকে চিহ্নিত করে। বিরামবিহীন ভাবে প্রতিভা সনাক্তকরণ ব্যবস্থা তৈরি করতে এই ব্যবস্থা আধুনিক প্রযুক্তি এবং সর্বোত্তম অনুশীলন পদ্ধতিকে ব্যবহার করে থাকে। যার দৃষ্টিভঙ্গি হ’ল তৃণমূল স্তরের প্রতিভা সনাক্তকরণের পুরো প্রক্রিয়াটিকে একক প্ল্যাটফর্মে প্রবাহিত করা। এখনও পর্যন্ত দেশের ৯৩ টি স্থানে ১০ টি ক্রীড়া বিভাগে প্রায় ১ লক্ষ মূল্যায়ন সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

খেলাধুলায় নারীদের অংশগ্রহণকে বিশেষ উৎসাহিত করার প্রয়াসে অস্মিতা মহিলা লিগগুলি সারা দেশে পরিচালিত হচ্ছে। আজ অবধি, ২০২১ সাল থেকে অস্মিতার চারটি মরসুম অনুষ্ঠিত হয়েছে যেখানে ৩৫ টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল থেকে ২০টি খেলায় মোট ৮৩৬১৫ জন মহিলা অংশ নিয়েছেন। এই লিগগুলি চ্যাম্পিয়ন হওয়ার চেয়েও অনেক বেশি সাফল্য অর্জন করেছে। এই অস্মিতা মহিলা লিগ মহিলা ক্রীড়াবিদদের জন্য একটি সহায়ক পরিবেশ তৈরি করে, খেলাধুলার প্রতি ভালবাসা এবং সম্ভাব্য ক্যারিয়ারের পথ তৈরি করেছে।

ক্রীড়াক্ষেত্রে খেলো ইন্ডিয়া যে ভিত্তি স্থাপন করেছে তা আশাব্যঞ্জক। এই তরুণ ক্রীড়াবিদরা যখন পরিপক্ক হবে এবং ক্রমানুসারে উন্নতি করবে, তখন আমরা আরও অনেক খেলো ইন্ডিয়া অ্যাথলিটকে অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন হিসাবে দেখার আশা করতে পারি। এই কর্মসূচীটি ভারতের ক্রীড়া ভবিষ্যতের ভিত্তি হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে, তরুণ ক্রীড়াবিদদের জন্য তৃণমূল স্তরের অংশগ্রহণ থেকে অভিজাত পারফরম্যান্স করা পর্যন্ত একটি কাঠামোগত পথ দেখাচ্ছে, এবং এটি আগামীদিনের অলিম্পিক চ্যাম্পিয়নদের গড়ে তুলছে৷–

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *