ক্রীড়া প্রতিনিধি, আগরতলা বিশ্বের দরবারে দেশের তথা ত্রিপুরার পতাকা তুলে ধরা অর্শিয়া দাসকে উদ্দেশ্য করে ব্যঙ্গ উক্তি করায় দাবা মহলে ক্ষোভ চরমে। স্বাভাবিক কারণেই অর্শিয়া প্রচন্ডভাবে অপমানিত বোধ করছে। আর তাতেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে এই উদীয়মান প্রতিভাটি। বৃহস্পতিবার শ্রীলঙ্কার মাটিতে কমনওয়েলথ দাবার অনুর্ধ্ব-১৪ প্রতিযোগিতার ব্রিটজ্ বিভাগের স্বর্ণপদক জয় করে নজির গড়েছিল পূর্বোত্তরের প্রথম মহিলা ক্যান্ডিডেট মাস্টার দাবাড়ু অর্শিয়া। চারদিক থেকে যখন অভিনন্দনের বন্যায় ভাসছিল সে, তখনই ঘটে যায় এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। রাজ্য দাবা সংস্থার এক কর্মকর্তা মুখ্যমন্ত্রী (প্রফেসর) ডা: মানিক সাহা, সাংসদ বিপ্লব কুমার দেবের শুভেচ্ছা বার্তায় এমন এক মন্তব্য করেছেন যা নিয়ে ক্রীড়ামহলে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন,’অভিনন্দন, বাঘ নাই বনে শেয়াল রাজা’। এই ব্যঙ্গ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তিনি প্রকারান্তরে অপমান করেছেন রাজ্যের ওই সোনার মেয়েকে। আর ওই খবর ছড়িয়ে পড়তেই দাবা প্রেমীদের মধ্যে প্রচন্ড ক্ষোভ দেখা দিয়েছে । নিজেকে বাঁচাতে নতুন নাটক তৈরি করলেন রাজ্য দাবা সংস্থার অর্গানাইজিং সেক্রেটারি (সংবিধান বহির্ভূত পদ) অভিজিৎ ঘোষ। জীবনে কোনও দিন দাবা না খেললেও ছেলের দৌলতে আসা দাবা সংস্থায়। সংস্থায় পা রেখে নিজেকে অনেক বড় ভেবে চলছেন তিনি। রাজ্য সংস্থার সভাপতির অভিজিৎ মল্লিকের ভদ্রতার আড়ালে তিনি করে চলছেন অনেক অন্যায়। এর আগে রাজ্য দাবা সংস্থার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে এক অভিভাবকের সঙ্গে করেছিলেন অন্যায়জনক আচরণ। এছাড়া, রাজ্যের এক সিনিয়র দাবাড়ুকে অনেকটা ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছিলেন রাজ্য দাবা সংস্থার অফিস ঘর থেকে। অথচ ওই ঘরে নিশ্চিন্তে বসিয়ে রেখেছিলেন নিজের স্ত্রীকে। এ নিয়ে প্রতিবাদ উঠতেই ক্ষমা চেয়ে নিয়েছিলেন। অনেকেই চেয়েছিলেন বরখাস্ত করা হোক রাজ্য দাবার সংস্থা থেকে এই অকর্মণ্য কর্তাকে। ওই সময় রাজ্য সংস্থার কর্তারা কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় প্রশ্রয় পেয়ে যান তিনি। আর এরই ফলে বৃহস্পতিবার রাজ্যের সেরা দাবাড়ুকে অপমান করতে ভুল করেননি। তবে নিজেকে বাঁচাতে এখন নতুন পথ বেছে নিয়েছেন তিনি। যাকে সস্তা নাটক বলছেন দাবাপ্রেমীরা। শুক্রবার সকালে তিনি দাবা সংস্থার ই-মেলে মেসেজ করে বলেছেন তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নাকি হ্যাক হয়েছে। এ নিয়ে রাজ্য সংস্থার সভাপতি অভিজিৎ মল্লিক বলেন, এই ঘটনা কখনও বরদাস্ত করা যাবে না। অর্শিয়া শুধু আমাদের নয় দেশের গর্ব। ওকে বদনাম করা আমরা প্রশ্রয় দেবো না। অতিসত্বর বৈঠক ডাকা হবে। তখন যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। রাজ্য দাবা সংস্থার সচিব প্রদীপ রায় বলেন, জঘন্য ঘটনা। এভাবে কোনও প্রতিভাবান দাবাড়ু সম্পর্কে ব্যঙ্গ উক্তি করা ঠিক নয়। কঠোর মনোভাব নিতে হবে আমাদের। তবে উনি ই-মেল করে আমাদের জানিয়েছেন, উনার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছে। রাজ্য দাবা সংস্থার প্রাক্তন সচিব দীপক সাহা মনে করেন, ত্রিপুরার দাবার ইতিহাসে কলঙ্কজনক অধ্যায় রচিত হলো। রাজ্য সংস্থার কর্তাদের উচিত অতিসত্বর সংস্থা থেকে বের করে দেওয়া। দাবা প্রেমীরা এই ঘটনা মেনে নিতে পারছেন না। বর্ষিয়ান দাবাড়ু শিখা দাশগুপ্ত বলেন, সেদিন আমার করা প্রতিবাদের পর যদি ওকে সংস্থা থেকে বের করে দিত তাহলে এমন ঘটনা আর ঘটতো না। শুধু সংস্থার কর্তাদের নয় দাবা ফোরামের কর্তাদের উচিত কঠোর মনোভাব নিয়ে এই ঘটনার মোকাবেলা করা। এই ঘটনায় দাবা প্রেমীরা প্রচন্ড আঘাত পেয়েছে। তা চলতে দেওয়া হবে না। হতাশ অর্শিয়ার বাবা পূর্ণেন্দু দাস। বলেন, মেয়ে এত কষ্ট করে দেশ এবং রাজ্যকে সাফল্য এনে দিচ্ছে তারপর যদি এমন ঘটনার সাক্ষী হতে হয় তাহলে না খেলাই ভালো। মূর্খের মতো কিছু বলে দেওয়ার আগে ভাবা উচিত কর্তাদের। যারা এগিয়ে যাচ্ছে তাদের এগিয়ে যেতে দেওয়া উচিত। মন্তব্য করে তাদের পেছনের দিকে টানা উচিত নয়। আমি চাই এর সঠিক তদন্ত হোক এবং দোষীকে সংস্থা থেকে বের করে দেওয়া হোক। হতাশ ত্রিপুরা চেস ফোরামের সচিব বাপ্পি দেব। স্পষ্টভাবেই বলেন, এই ঘটনা কাম্য নয়। অতিসত্বর আমরা বৈঠকে বসছি। এরপর এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে রাজ্য সংস্থার দ্বারস্থ হবো। যারা ত্রিপুরার দাবাকে পিছিয়ে নিতে মুখ লুকিয়ে কাজ করছে তাদের থাকতে দেওয়া হবে না রাজ্য সংস্থায়।অভিজিৎ ঘোষের হ্যাক হওয়ার সস্তা নাটকের আরেকটি অঙ্গ হলো গত জুলাই মাসে শ্রীলঙ্কা থেকে পদক জয় করে যখন রাজ্যে ফিরেছিল অর্শিয়া তখনো সেই মন্তব্যই করেছিলেন অভিজিৎ। এর কপি রয়েছে আমাদের কাছে। দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর ফোন ধরে এনিয়ে অভিজিৎ ঘোষ বলেন, আমি এব্যাপারে কিছুই জানিনা। কাল রাত থেকে ফেসবুকও খুলতে পারছি না। শুনতে পেয়েছি মুখ্যমন্ত্রীর ত্রান তহবিলের জন্যও নাকি আমি টাকা চাইছি। তাই এখন দ্বারস্থ হচ্ছি সাইবার ক্রাইম অফিসে। তদন্ত করলেই সব কিছু বের হবে বলে অনুমান।