আগরতলা,১৫ আগস্ট: সারা দেশের সাথে রাজ্যেও পালিত হয়েছে ৭৮তম স্বাধীনতা দিবস। এদিন সরকারিভাবে মূল অনুষ্ঠানটি আগরতলা আসাম রাইফেলস ময়দানে পালিত হয়েছে। সেখানে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও অভিবাদন গ্রহণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক( ডা.) মানিক সাহা।
এদিন তিনি বলেন, স্বাধীনতা দিবসের এই পূণ্য লগ্নে আজ আমরা জাতির কষ্টার্জিত ৭৮-তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করতে এখানে সমবেত হয়েছি। আমরা আমাদের দেশের বীর স্বাধীনতা সংগ্রামীদের শ্রদ্ধা জানাচ্ছি, যাঁরা আমাদের স্বাধীনতা উপহার দেওয়ার জন্য ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে সাহসিকতার সাথে লড়াই করেছিলেন। আমরা স্মরণ করছি, সেইসব স্বপ্নদ্রষ্টাদের যাঁরা আমাদের দেশের ভাগ্য নির্ধারণ করেছেন এবং সেইসব অজানা দেশপ্রেমিকদের যাঁরা আমাদের অগ্রগতিতে অবদান রেখে চলেছেন। এই স্মরণীয় দিনটি উদ্যাপনের পাশাপাশি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে আমাদের রাজ্যের অগ্রগতির যাত্রাপথের একটি বিবরণ তুলে ধরা হয়। সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং মনমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য ত্রিপুরা সবসময় আমাদের দেশে একটি বিশেষ স্থান দখল করে আসছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের রাজ্যের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ঘটেছে এবং এই অগ্রগতির কিছু উল্লেখযোগ্য প্রতিবেদন আপনাদের সামনে তুলে ধরতে পেরে আমি গর্বিত।
তিনি আরও বলেন, বিগত বছরগুলিতে এক শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ ত্রিপুরা গড়ে তোলার জন্য আমরা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছি। আমরা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেছি। অনেক বাধা অতিক্রম করেছি এবং সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছি। আজ আমরা বিকাশের এক নতুন যুগের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে। আমাদের সরকার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সামাজিক কল্যাণ ও মানব সম্পদ উন্নয়নের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টিতে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে।
তার কথায়, আমাদের এই এগিয়ে চলার অভিমুখ আমাদের অন্তর্ভুক্তি, স্থায়িত্ব এবং সুশাসনের নীতি দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। রাজ্যের প্রত্যেক নাগরিকের কাছে উন্নতমানের শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা সুনিশ্চিত করতে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। পরিবেশ সংরক্ষণ, সংস্কৃতি, এবং আমাদের যুবকদের ক্ষমতায়নে জন্য রাজ্য সরকার দায়বদ্ধ।
ত্রিপুরাকে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে রাজ্য সরকার যে রূপান্তরমুখী পদক্ষেপ নিয়েছে তা আপনাদের সাথে ভাগ করে নিতে পেরে আমি সম্মানিত বোধ করছি। আমরা ইতিমধ্যেই উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছি, কিন্তু এই প্রাপ্ত সাফল্যের নিরিখে আমরা থেমে থাকছি না। এক সুনির্দিষ্ট সমতাভিত্তিক এবং স্পন্দনশীল সম্মিলিত দৃষ্টিভঙ্গির দ্বারা আমরা রাজ্যেকে পরিচালনা করতে চাই, যেন এ রাজ্যের প্রত্যেক নাগরিকসমৃদ্ধ হতে পারে। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে আমরা বেশ কিছু রূপান্তরমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি, সেগুলির কয়েকটি আমি উল্লেখ করছি:-দুই অঙ্কের জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে পরিকাঠামো উন্নয়ন, মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং সামাজিক কল্যাণ কর্মসূচির ওপর গুরুত্ব দিয়ে আমরা মূলধন ব্যয় বৃদ্ধি করেছি। বাণিজ্যিক সংস্কার ও কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে বাণিজ্যিক প্রক্রিয়াগুলিকে ঢেলে সাজিয়ে সহজে ব্যবসা-বাণিজ্যের অনুকূল পরিবেশ গড়ে তোলা হচ্ছে। এর ফলে উদ্যোক্তা, বিনিয়োগকারী এবং নাগরিকদের জন্য একটিঅনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছে। • আমাদের ই-অফিস কার্যকরের উদ্যোগটি রেকর্ড সময়ে মন্ত্রিসভা থেকে গ্রাম পঞ্চায়েতস্তর পর্যন্ত সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে। ৯২ শতাংশ গ্রামে 4G সংযোগের সুবিধা লাভ হয়েছে। ডিজিটাল ব্যবস্থার সম্প্রসারণের ফলে সুশাসনে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি করবে।
তিনি আরও বলেন, মুখ্যমন্ত্রী দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্পে’-র আওতায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, আই ও টি (Internet of things), সাইবার নিরাপত্তা, 5G প্রযুক্তি এবং ড্রোন প্রযুক্তির মতো উন্নত কোর্সের মাধ্যমে কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এর ফলে আমাদের যুব সমাজ ভবিষ্যতে উপযোগী দক্ষতায় সমৃদ্ধ হবে ও আন্তর্জাতিকস্তরে প্রতিযোগিতামুখী হয়ে উঠবে।
শিল্প ও বিনিয়োগ খাতে আমরা মূলত আলোকপাত করছি – কৃষির উপর শ্রমশক্তির নির্ভরশীলতা ৫০ শতাংশ হ্রাস করার উপর। পার্শ্ববর্তী দেশ ও ভারতের অন্যান্য রাজ্যের মধ্যে ব্যবসা বাণিজ্য ১ লক্ষ কোটি টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি করা। ২০৪৭ সালের মধ্যে পর্যটন দ্বারা Gross State Domestic Product অন্তত ১৫ শতাংশ অবদান নিশ্চিত করা। সেচের আওতায় ৮০ শতাংশ চাষযোগ্য এলাকা অর্জন। পরিকাঠামো, যোগাযোগ এবং লজিস্টিক সেক্টরে, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি হলঃ ১৫০ কিলোমিটার নদীর নাব্যতা সৃষ্টি করা। সমস্ত রেলওয়ে স্টেশন, বিমানবন্দর, হেলিপ্যাড, নদী বন্দর, পর্যটন স্থান, ইকো পার্ক, আন্তর্জাতিক সীমান্তের সাথে চার লেন সড়ক যোগাযোগ তৈরি ঘটানো। রাজ্যে অতিরিক্ত বিমানবন্দর চালু করা ও লজিস্টিক সেচের আওতায় ৮০ শতাংশ চাষযোগ্য এলাকা অর্জন। ১৫০ কিলোমিটার নদীর নাব্যতা সৃষ্টি করা। সমস্ত রেলওয়ে স্টেশন, বিমানবন্দর, হেলিপ্যাড, নদী বন্দর, পর্যটন স্থান, ইকো পার্ক, আন্তর্জাতিক সীমান্তের সাথে চার লেন সড়ক যোগাযোগ তৈরি করা।
তিনি বলেন, রাজ্যে অতিরিক্ত বিমানবন্দর চালু করা ও লজিস্টিক পরিষেবার বিকাশ ঘটানো। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন সেক্টরে যা করতে চাই, তা হলঃ বনজ উৎপাদিত সামগ্রীর মূল্য পাঁচ গুণ বৃদ্ধি করা। খুব ঘন বনের পরিমাণ অন্তত ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি করা, যাতে Gross State Domestic Product প্রায় ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। বনাঞ্চলে জলাশয় আড়াই গুণ বৃদ্ধি এবং * আগর কাঠের অর্থনীতি ১০ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করা।
প্রাইমারি সেক্টরে : ৭৫শতাংশ কৃষিজ ফসলকে Risk Management-এর আওতায় আনা সমস্ত প্রধান ফসলের জন্য উৎপাদনশীলতা তিনগুণ করা কৃষকদের আয় ৫ গুণ বাড়ানো কৃষি সহায়তা চার গুণ বৃদ্ধি, মাছের উৎপাদন তিনগুণ বৃদ্ধি এবং উচ্চ মূল্যের মাছের উৎপাদন ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা।সামাজিক ক্ষেত্রে: সমস্ত বিদ্যালয়ে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি ও বৃত্তিমূলক ল্যাব প্রদান করা। সমস্ত স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং গবেষণারত শিক্ষার্থীদের জন্য ইন্টার্নশিপ চালু করা। একটি মাল্টি-ডিসিপ্লিনারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন।ত্রিপুরায় স্পেশালিটি এবং সুপার স্পেশালিটি স্বাস্থ্য পরিষেবায় স্বনির্ভরতা অর্জন করা। ক্রীড়াক্ষেত্রে রাজ্যকে অগ্রণী রাজ্য হিসাবে গড়ে তোলা।
শিল্প স্থাপনের প্রক্রিয়া সহজতর এবং অনুকুল বাণিজ্যিক পরিবেশ তৈরী করতে স্বাগত পোর্টাল (SWAGAT PORTAL) চালু করা হয়েছে যা, Ease of Doing Business নীতিকে বাস্তবায়িত করবে। তরুন উদ্যোগপতিদের জন্য যুব ত্রিপুরা, নতুন ত্রিপুরা, আত্মনির্ভর ত্রিপুরা নামে আমরা বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। এই উদ্যোগের লক্ষ্য হচ্ছে, উদ্যোগপতিদের পরিচর্চা, বিনিয়োগে উৎসাহিত করা এবং রাজ্যে শিল্পের বৃদ্ধি ও উন্নয়নে যুব সমাজকে ক্ষমতায়ন প্রদান করা।
• রাজ্যের প্রথম চা নিলাম কেন্দ্রের (TEA AUCTION) ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। এই উন্নয়ন রাজ্যের উৎপাদিত উচ্চ গুণমানের চায়ের বাজারজাতকরণ এবং বিতরণ ব্যবস্থাকে সুনিশ্চিত করার মাধ্যমে চা শিল্পে নতুন একটি যুগের সূচনা করবে। এর ফলে বার্ষিক প্রায় ৯ বিলিয়ন কিলোগ্রাম উৎপাদনের মাধ্যমে ত্রিপুরা দেশের পঞ্চম বৃহত্তম চা উৎপাদনকারী রাজ্য হিসেবেপরিগণিত হবে।
পর্যটন:
• আমাদের সরকার পর্যটন পরিকাঠামো উন্নয়নে বিভিন্ন উদ্যোগ যেমন ‘স্বদেশ দর্শন এবং প্রসাদ স্কীমের’ আওতায় এবং এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের আর্থিক সহায়তায় ও পাবলিক-প্রাইভেট পাটনারশিপ মডেলের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। এর ফলে আধুনিক সুযোগ সুবিধাযুক্ত সুসজ্জিত অনেকগুলি পর্যটন স্থলের উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে।
• রাজ্যে পর্যটনের প্রসারে মণিপুরের খুৎসুং ও আগরতলার মধ্যে সংযোগকারী আগরতলা-জিরিবাম জনশতাব্দী এক্সপ্রেসে ভিস্তাডোম কোচ চালু করেছে রেলমন্ত্রক। এই উদ্যোগ পর্যটকদের এক অনন্য অভিজ্ঞতা প্রদান করবে এবংএই অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যকে তুলে ধরবে। স্কিল ডেভেলপমেন্ট (Skill Development) রাজ্য সরকার ১৯টি শিল্প প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের আধুনিকীকরণ ও সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেস এর সাথে একটি মউ স্বাক্ষরকরেছে। এই সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টার লক্ষ্য শিল্পের প্রয়োজনীয়তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে কোর্সের পাঠ্যক্রমটি পুননির্মান করা, যাতে শিক্ষার্থীরা চাকুরির বাজারের সাথে প্রাসঙ্গিক প্রশিক্ষণ পেতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বিশ্বকর্মা উদ্যোগে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি লক্ষ্য করা গেছে। প্রায় ৫০ হাজার আবেদনকারী এই কর্মসূচিতে নিবন্ধন করেছেন। এখন পর্যন্ত ২০টি দক্ষতা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে এবং ১ হাজার ৩৭৭টি ঋণের জন্য আবেদন পাওয়া গেছে। এটি যুবকদের মধ্যে দক্ষতা উন্নয়ন ও উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে উঠতে সহায়ক হবে।