মুখ্যমন্ত্রী এবং টাটা সনস-এর চেয়ারম্যানের হাতে সম্পন্ন ২৭ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে সেমি কন্ডাক্টর প্ল্যান্টের ভূমিপূজন

জাগিরোড (অসম), ৩ আগস্ট (হি.স.) : দিনক্ষণ দেখে আজ শনিবার দুপুর ১২টায় অসমের জাগিরোডে ২৭ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে প্রস্তাবিত সেমি কন্ডাক্টর প্ল্যান্টের ভূমিপূজন সম্পন্ন হয়েছে। বহুজনের উপস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শৰ্মা এবং টাটা সনস লিমিটেডের চেয়ারম্যান নটরাজন চন্দ্রশেখরন অসমের প্ৰথম সেমি কন্ডাক্টর প্ল্যান্ট বা অর্ধ পরিবাহী সমাবিষ্টকরণ ও পরীক্ষণ কেন্দ্ৰের ভূমিপূজন করেছেন।

ভূমিপূজনের পর আয়োজিত হাজারো জনতার সমাবেশে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শৰ্মা এবং টাটা সনস লিমিটেডের চেয়ারম্যান নটরাজন চন্দ্রশেখরন প্রস্তাবিত এই প্রকল্প এবং এর ফলে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা ইত্যাদি সম্পর্কে বহু তথ্য সংবলিত বক্তব্য পেশ করেছেন।

মুখ্যমন্ত্রী ড. শর্মা প্রথমে অসমে ভারী এই শিল্প-প্রকল্প স্থাপন করার সিদ্ধান্তে টাটা গ্রুপ, বিশেষ করে রতন টাটাকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, অসমে বিশাল বিনিয়োগ করছে টাটা গ্ৰুপ। অসমের ইতিহাসে এটা সৰ্ববৃহৎ বিনিয়োগ। আজ অসমের জন্য এক বিশেষ সুবর্ণ দিন। সেমি কন্ডাক্টর প্ৰকল্পটি অসমের জন্য এক মাইলস্টোন হবে। এটা উত্তর-পূৰ্বাঞ্চলের প্ৰথম এবং দেশের তৃতীয় সেমিকন্ডাক্টর প্ল্যান্ট।

তিনি বলেন, এই প্রকল্পে কর্মসংস্থানের জন্য এক হাজার যুবক-যুবতীকে প্ৰশিক্ষণ দেবে টাটা গ্ৰুপ। প্ৰশিক্ষণের পর এই প্ৰকল্পে কাজ করার সুযোগ পাবেন প্রশিক্ষিতরা।

ড. শর্মা বলেন, ‘অসমে শিল্পবিপ্লবের প্ৰয়োজন ছিল। এতদিন এর পরিবেশ ছিল না। বেসরকারি কোম্পানি এগিয়ে আসত না। শিল্পবিপ্লবের অংশীদার হয়েছে টাটা গ্রুপ। নগাঁও কাগজ কল বন্ধ হয়েছিল। কিন্তু আমি নিরাশ হইনি। কাগজ কলের বিকল্প সৃষ্টির কল্পনা করছিলাম। আজ তা পূরণ হয়েছে। আজকের দিনটি অসমের ইতিহাসে এক বিশেষ স্বর্ণক্ষণ হিসেবে খচিত হয়ে থাকবে।’

হিমন্তবিশ্ব বলেন, অসমের প্ৰতি সুন্দর ধারণা আছে টাটা সনস-এর চেয়ারম্যান নটরাজন চন্দ্রশেখরনের। ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে চন্দ্রশেখরন অসমের জন্য কাজ করছেন। তিনি এখানকার নাড়ি, বায়ু, পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির সঙ্গে পরিচিত।

প্ৰকল্প সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী জানান, ২৭ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে সেমি কন্ডাক্টর প্ল্যান্ট নিৰ্মাণ হবে। টাটা গ্ৰুপকে ৬০ বছরের লিজে দেওয়া হয়েছে ৫১৭.২৭ বিঘা জমি। ২০২৬ সালের মধ্যে অর্থাৎ আগামী ১৮ মাসের মধ্যে প্ৰকল্পটি সম্পূৰ্ণ করার লক্ষ্য গ্রহণ করেছেন টাটা কর্তৃপক্ষ। প্ৰকল্পটি সম্পূৰ্ণ হয়ে যাওয়ার পর থেকে প্ৰতিদিন ৪৮ মিলিয়ন চিপস উৎপাদন হবে। এই প্ৰকল্পে ৩০ হাজার বেকার যুবক-যুবতীর কর্মসংস্থান হবে।

অসমকে বিশ্বের সেমি কন্ডাক্টরের মূল হোতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করায় উদ্যোগ বিশেষ ভূমিকা নেবে বলে আশা ব্যক্ত করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এই উদ্যোগ রাজ্যে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির বিকাশ ঘটানোর পাশাপাশি কর্মসংংস্থানের অফুরন্ত সুযোগ সৃষ্টি করে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ক্ষীপ্ৰ করে তুলবে।

এদিকে টাটা সনস-এর চেয়ারম্যান নটরাজন চন্দ্রশেখরন সেমি কন্ডাক্টর প্ল্যান্টের সম্পর্কে বেশ তথ্য দিয়েছেন। তিনি জানান, এই প্ল্যান্টে উৎপাদন হবে অটোমটিভ, ইলেকট্রিক ভেহিকলস, কনজিউমার ইলেকট্রনিকস, টেলিকম, মোবাইল ফোন ইত্যাদি। গুজরাটে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীর ডিভাইস তৈরি করে এখানে পাঠানো হবে। সেগুলোকে এই প্ল্যান্টে অ্যাসেম্বল করে, প্যাকেটজাত হবে। তার পরে হবে বাজারজাত। এভাবেই ‘ম্যাক ইন আসাম’ মাইক্ৰোচিপস গোটা দেশে ছড়িয়ে যাবে, বলেন নটরাজন চন্দ্রশেখরন।

এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, গত ১৩ মাৰ্চ গুজরাট এবং অসমের জাগিরোডে প্রস্তাবিত এই সেমি কন্ডাক্টর প্ৰকল্পের ভার্চুয়ালি শিলান্যাস করেছিলেন প্ৰধানমন্ত্ৰী নরেন্দ্র মোদী। সেদিন প্ৰধানমন্ত্ৰী মোদী বলেছিলেন, ‘এই প্ৰকল্প ভারতকে সেমি কন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিঙের বৃহৎ গ্লোবাল হাব করে তুলতে সহায়তা করবে। একবিংশ শতক প্ৰযুক্তির শতকা। ইলেকট্ৰনিক চিপস-এর বাইরে তার কল্পনা করা যায় না। এই প্ৰকল্প ভারতক এগিয়ে নিয়ে যেতে বিশাল অবদান রাখবে।’ প্রধানমন্ত্রী সেদিন বলেছিলেন, ‘বিশ্বের মাত্র কয়েকটি দেশ সেমি কন্ডাক্টরের ম্যানুফ্যাকচারিং করছে। ভারতে এ ক্ষেত্রে এক বিশাল ভূমিকা গ্রহণ করতে প্রস্তুত। সেমি কন্ডাক্টর উদ্যোগের সৰ্বাধিক লাভ পাবে ভারতের যুব-প্ৰজন্ম। এটা বিকাশের অসীম সম্ভাবনার দরজা খুলে দেবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *