উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে পরিবেশগত ঝুঁকি

নয়াদিল্লি, ২ আগস্ট : জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে জাতিসংঘের নির্ধারণ করে দেওয়া কনভেনশনে (ইউ. এন. এফ. সি. সি. সি) জমা দেওয়া ভারতের তৃতীয় জাতীয় জ্ঞাপন বার্তা অনুযায়ী, দেশের বিভিন্ন অংশে জলবায়ু পরিবর্তন এবং বৃষ্টিপাত ও তাপমাত্রার দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়ছে।


ঘূর্ণিঝড়, খরা, বন্যা, বজ্রপাত, বজ্রবিদ্যুৎ, তুষারপাত, শৈত্য প্রবাহ এবং তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে দিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের এই প্রভাব দেখা যাচ্ছে । ভারতের আবহাওয়া বিভাগ ‘স্ট্যান্ডার্ডাইজড রেসিপিটেশন ইনডেক্স’ (এসপিআই) অর্থাৎ বৃষ্টি পাতের আদর্শগত ধরন বা পরিসংখ্যানগত তথ্য সংগ্রহ করে ভারতে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত এবং খরার মতো অবস্থার প্রবণতা বিশ্লেষণ করেছে।


এই বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ২০২১ সালে অরুণাচল প্রদেশ, অসম, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মিজোরাম, ত্রিপুরা, হিমালয় পার্বত্য এলাকা, পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম, পূর্ব উত্তরপ্রদেশ, হিমাচল প্রদেশ এবং জম্মু ও কাশ্মীরের কিছু অংশে অত্যন্ত শুষ্ক এবং গুরুতর শুষ্ক পরিস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।


উপরন্তু, ন্যাশনাল রিমোট সেন্সিং সেন্টারের একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, ভারতে প্রবল বন্যা প্রভাবিত রাজ্যের সংখ্যা ২০১৭ সালের ৮ টি থেকে বেড়ে ২০২১ সালে বেড়ে হয়েছে ১৫ টি।


ভারী বৃষ্টিপাত এবং বন্যার প্রবণতা বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে যে উপদ্বীপ এলাকা, পূর্ব, উত্তর-পূর্ব এবং মধ্য ভারতের কিছু অংশ সহ ভারতের অন্যান্য কিছু অংশে বৃষ্টি পাত ও বন্যা পরিস্থিতি বাড়ছে।


মণিপুরের স্টেট অ্যাকশন প্ল্যান অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (এস. এ. পি. সি. সি) অনুসারে, সে রাজ্যের পূর্ব হিমালয়ের পরিধিতে অবস্থান , ভঙ্গুর ভূ-পরিবেশগত পরিবেশ এবং অর্থনৈতিক অনুন্নয়নের কারণে জল জনিত বিপর্যয়ের ঝুঁকি রয়েছে মনিপুর ।


পাহাড়ি অঞ্চলে বর্ষাকালে ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে অতি প্রবল বৃষ্টিপাতের মতো বিভিন্ন কারণে উপত্যকা অঞ্চলে ঘন ঘন বন্যা দেখা দেয়। আকস্মিক বন্যা কৃষিজমি এবং বসবাসের স্থান এবং বর্ষাকালে শহুরে বসতি এলাকাগুলিকে প্রভাবিত করে। এর জন্য অববাহিকা অঞ্চলে মনুষ্যসৃষ্ট পরিবেশগত পরিবর্তনের প্রভাব বলে মনে করা হচ্ছে। বন্যার কারণে যেসব ক্ষয়ক্ষতি হয় তার মধ্যে রয়েছে বাঁধ ভাঙা, জল উপচে পড়া, ভূমিধ্বস, ভাঙন এবং ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় নদীর তীরে থাকা নিম্নাঞ্চল জলমগ্ন হওয়া।


জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে রাজ্যেগুলোর নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান কিন্তু ইঙ্গিত দেয় যে এর প্রভাবে ফসল উৎপাদনে প্রভাব পড়ে এবং খাদ্য নিরাপত্তা অনিশ্চিত করে তোলে এবং পুষ্টির সমস্যা তৈরি করে , জলবাহিত রোগের প্রকোপ সৃষ্টি করে এবং গ্রামীণ এলাকা থেকে শহরাঞ্চলে জনসংখ্যার অভিবাসনের ফলে ফসলের উৎপাদন হ্রাস পায় ।


এনএপিসিসি-র সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, বিভিন্ন রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত রাজ্যে রাজ্যে চিহ্নিত সমস্যা সমাধানের জন্য নির্দিষ্ট এস. এ. পি. সি. সি প্রস্তুত করেছে। সমস্ত এস. এ. পি. সি. সির মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাস করার উদ্যোগ গ্রহনের আহ্বান জানানো হয়েছে।


এই বিষয়ে নোডাল মন্ত্রক ও দপ্তরগুলির মাধ্যমে যেসব মিশন বাস্তবায়িত হয়, তার মধ্যে রয়েছে বিপজ্জনক ঝুঁকি মোকাবেলা প্রতিবেদন (এইচ. আর. ভি. এ), রাজ্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা (এস. ডি. এম. পি) এবং রাজ্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ( এর ডি আর এফ)।


দুর্যোগের ঝুঁকি কমানো ও দুর্যোগ মোকাবেলার বিষয়ে অবহিত করতে জলবায়ুপরিবর্তনের ঘটনাগুলি পর্যবেক্ষণ ও পূর্বাভাস দেওয়ার জ্ঞান ও সক্ষমতা বিকাশ করা একটি অন্যতম লক্ষ্য। কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে :
যেমনঃ খুব উচ্চ-রেজোলিউশন ডিজিটাল টেরেইন মডেল ব্যবহার করে স্থানীয় ভাবে সৃষ্ট বন্যার প্রাথমিক সতর্কতা মডেলগুলির বিকাশে এখন ভারতের বন্যা-প্রবণ অঞ্চলে বন্যার জন্য সতর্কবার্তা দেওয়া হয়। স্থানীয় ভাবে আগাম সতর্কতার জন্য একটি ওয়েব-ভিত্তিক আধা-স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা রয়েছে।


তাছাড়া, কেন্দ্রীয় জল কমিশন (সিডব্লিউসি) এবং ভারতীয় আবহাওয়া দফতরের (আইএমডি)- র মধ্যে তথ্য আদান- প্রদানে প্রয়োজনানুসারে কার্যকরী মুডে চলে এবং ফলাফলগুলি জিও-পোর্টালগুলির মাধ্যমে প্রচারিত হয়। বন্যা এবং অন্যান্য চরম অবস্থা মূল্যায়নের জন্য, দ্রুত প্রতিক্রিয়া করা ইত্যাদি।

আইএমডি, গ্রীষ্মকালীন আবহাওয়া, মৌসুমি বায়ু প্রবাহ, স্থানীয় ভাবে বিভিন্ন মরশুমের জলবায়ু পরিবর্তনের নিয়মিত পূর্বাভাস দিয়ে থাকে। এগুলো আবহাওয়ার প্রাথমিক সতর্কতা হিসাবেও গন্য হয়ে থাকে। বৃহস্পতিবার রাজ্যসভায় এক লিখিত প্রশ্নের জবাবে এই তথ্য জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিমন্ত্রী শ্রী কীর্তি বর্ধন সিং।