BRAKING NEWS

বিজ্ঞান প্রযুক্তির উন্নয়নে কুসংস্কারে ভর করে আতঙ্কগ্রস্থ গোটা গ্রাম, বিতাড়িত দুই পরিবার, জটিল রোগের আতঙ্ক গ্রাস করেছে গ্রামবাসীকে, পরিস্থিতি সামাল দিতে ময়দানে প্রশাসন

নিজস্ব প্রতিনিধি, বিলোনিয়া, ৩১ জুলাই:
বিজ্ঞান প্রযুক্তির এতটা উন্নতি সত্বেও মানুষ এখনো এই একবিংশ শতাব্দীতে এসে কুসংস্কারে আচ্ছন্ন। বিশেষ করে জনজাতি এলাকাগুলিতে এই কুসংস্কার অনেকটাই সক্রিয়। কুসংস্কারে আবদ্ধ হয়ে একে অন্যের ক্ষতি করতেও পিছপা হন না। কুসংস্কারের বশে মানুষকে জীবনও দিতে হয়।

এই ধরনের একটি ঘটনা প্রকাশ্যে এলো বিলোনিয়া মহকুমার বিলোনিয়া থানাধীন গাবুরছড়া এডিসি ভিলেজের বৃন্দামাটিলা এলাকায়। জনজাতি অধ্যুষিত এই এলাকাটি বিগত প্রায় তিন মাস ধরে গভীর আতঙ্কে ভুগছে এলাকার জনগণ। সমস্যা একটাই নারী পুরুষ সকলে গোপনাঙ্গ ছোট হয়ে যাচ্ছে এবং মানুষ ব্যথা অনুভব করছে একই সাথে মহিলাদের স্তন ও ছোট হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ।
এই ঘটনায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এলাকার মানুষের বক্তব্য এলাকায় তাবিজ করা হয়েছে এবং বালুপড়া দিয়ে এলাকাকে নষ্ট করেছে। এই বিষয়টি আসামের এক তান্ত্রিক ওঝা এলাকাবাসীকে বলেছে এবং দেখিয়ে দিয়েছে কারা করেছে তাই এলাকায় এই সমস্যা হচ্ছে। এই সন্দেহে এলাকা থেকে দুটি পরিবারকে বিতাড়িত করে দেওয়া হয়েছে। একটি পরিবারের বর্তমানে খোঁজ নেই, আরেকটি জনজাতি পরিবার পাহাড় থেকে সমতলে এসে বাঙালি পরিবারে আশ্রয় নিয়ে অর্ধাহার অনাহারে দিন কাটাচ্ছে।

এলাকার স্কুল বিগত প্রায় তিন মাস ধরে বন্ধ শিক্ষক শিক্ষিকারা গেলেও ছাত্র-ছাত্রীরা কেউ যাচ্ছে না। সকলেই অজানা আতঙ্কে ভুগছে। অনেকের দাবি এলাকা থেকে তাবিজ তোলা হয়েছে। আজ এই খবর পেয়ে এলাকায় ছুটে যান  প্রশাসনের আধিকারিক তথা অতিরিক্ত মহকুমা শাসক আশীষ বিশ্বাস,ডিসিএম সঞ্জয় শীল সহ পুলিশ বাহিনী।

এলাকার জনগণের সাথে কথা বলে ঘটনা জানার চেষ্টা করেন এবং পরবর্তী সময়ে এটিকে একটি কুসংস্কার বলে জনগণকে বুঝিয়ে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু কোন অবস্থাতেই এলাকার জনগণ এ বিষয়ে থেকে ফিরে আসতে চাইছে না।

পরবর্তী সময়ে মহকুমা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এলাকায় একটি স্বাস্থ্যশিবির এবং আলোচনা সভা করা হবে বলে এলাকাবাসীকে জানান। সত্য হোক কিংবা মিথ্যা এই ঘটনাটি ঘিরে গোটা এলাকার জাতি জনজাতি মানুষের মধ্যে গভীর চাঞ্চল্যের পাশাপাশি আতঙ্ক বিরাজ করছে।

পরবর্তী সময়ে প্রশাসনের লোক এলাকা ছাড়া, ঘর ছাড়া অসহায় কলিঙ্গ ত্রিপুরা ও তার পরিবারের সাথে দেখা করেন। তিনি প্রশাসনের কাছে তার করুন অবস্থা তুলে ধরেন। বলেন উনি এই বিষয়ে কিছুই জানেন না অযথা তাকে শাস্তি ভোগ করতে হচ্ছে এখন স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে মানুষের বাড়িতে আশ্রয় নিতে হচ্ছে নেই কোন খাবার দাবার।

তিনি আরো জানান প্রথমে যে বাড়িতে ছিলেন সেখানে এসে এলাকাবাসী বাড়ির মালিকসহ তাকে হুমকি প্রদান করেন। তারপর তিনি সেখান থেকে চলে আসেন। বর্তমানে তিনি এবং তার পরিবার প্রচন্ড ভয়-ভীতির মধ্যে দিনযাপন করছেন অনাহার অর্ধাহারে। তাদের আক্রমণের হাত থেকে বাঁচতে তিনি প্রশাসনের কাছে প্রাণভিক্ষা চান কলিঙ্গ ত্রিপুরা।

এখন দেখার বিষয় এলাকার মানুষদের মধ্যে ভয়-ভীতি এবং আতঙ্ক দূর করতে প্রশাসন কতটা কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করে পাশাপাশি নিরীহ কলিঙ্গ ত্রিপুরা ও তার পরিবার প্রশাসনের সহায়তায় আবার নিজ ঘরে ফিরে যেতে পারে কিনা। বর্তমান সময়েও কুসংস্কার যে জনজাতিদের কুরে কুরে খাচ্ছে তারা আবার প্রমাণ পাওয়া গেল এই ঘটনায়। জনজাতিদের এই অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে কিছু চতুর দুষ্ট জনজাতি নিজেদের ওঝাই বলে দাবি করা লোক গ্রামের এই গরিব পরিবার গুলিকে চিকিৎসার নামে শোষণ করছে বলে জানা যায়।

প্রত্যেকটি পরিবার এই রোগ থেকে মুক্ত হতে এই দুষ্ট ও বোঝাইদের হাঁস, মুরগি, গরু, ছাগল এবং বাড়ির অন্যান্য জিনিস বিক্রি করে দিয়ে দিচ্ছে অনায়াসে।এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেন অতিরিক্ত মহকুমা শাসক আশীষ বিশ্বাস। প্রশাসনের মূল উদ্দেশ্য কুসংস্কার থেকে মানুষকে তুলে আনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *