বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য ২৪টি নতুন স্থানের অনুমোদন
আসামের মৈদাম যুক্ত হওয়ার ফলে ভারতে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৪৩
নয়াদিল্লি, ৩১ জুলাই : নয়াদিল্লির ভারত মণ্ডপমে শেষ হল বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটি অর্থাৎ ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির ৪৬তম ঐতিহাসিক বৈঠক| ভারতে প্রথম বারের মত আয়োজিত এই বৈঠকটি বিশ্বের ঐতিহ্য সংরক্ষণের বিভিন্ন দিক দিয়ে এক উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হল| মর্যাদাপূর্ণ এই বৈঠকের সমাপ্তি হয় মঙ্গলবার| অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখওয়াত, ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সেন্টারের চেয়ারম্যান বিশাল ভি. শর্মা, ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সেন্টারের ডিরেক্টর ল্যাজারে এলাউন্দ অ্যাসোম সহ অন্যরা|
সমাপ্তি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখওয়াত এই কর্মসূচির আয়োজন দ্রুততার সঙ্গে করার জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রক এবং ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের প্রশংসা করেন। ভারতের লোকশিল্পের সমৃদ্ধ ঐতিহ্যে অনুপ্রাণিত হয়ে লোকশিল্পের উদযাপনে ‘পরি’ (পি.এ.আর.আই.–পাবলিক আর্ট অফ ইন্ডিয়া) প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নে সংস্কৃতি মন্ত্রকের তিনি প্রশংসা করেন। অনুষ্ঠানে ‘পরি’র ক্যাটালগের উদ্বোধন করা হয়| এই ক্যাটালগে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের শিল্পীরা জাতীয় রাজধানী দিল্লি জুড়ে যে বিভিন্ন শিল্পকর্ম এবং স্থাপনায় তাঁদের শিল্পকে চিত্রায়িত করেছেন, সেগুলো প্রদর্শিত হয়েছে|
ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির ৪৬তম বৈঠক:
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ইউনেস্কোর মহানির্দেশক মিঃ অড্রে আজৌলে এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটি অর্থাৎ ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির ৪৬তম ঐতিহাসিক বৈঠকের উদ্বোধন করেন| প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর মূল ভাষণে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সঙ্গে ভারতের গভীর সংযোগ এবং বিশ্বজুড়ে যে সংরক্ষণের প্রচেষ্টা চলছে, তাতে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার ওপর জোর দেন। তিনি সুস্থায়ী উন্নয়নের সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রেখেই ঐতিহ্যের সুরক্ষা ও প্রসারে ভারতের প্রতিশ্রুতির কথা উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে ‘বিকাশ ভি বিরাসত ভি’ (উন্নয়নও এবং ঐতিহ্যও)-র বিষয়টিকে বিশেষ ভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়| যা ঐতিহ্যের ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির কথা বলে, অর্থাৎ ভবিষ্যতের বিকাশকে সমর্থন করার পাশাপাশি অতীতকেও সম্মান করে।
প্রধানমন্ত্রী ঐতিহ্য সংরক্ষণের ক্ষেত্রে বৈশ্বিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি উদ্যোগের কথা ঘোষণা করেন| তিনি বিশেষ সফর এবং প্রদর্শনীর মাধ্যমে ভারতের সমৃদ্ধ ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটকে অন্বেষণ করতে আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানান|
এই বৈঠকের একটি বিশেষ আকর্ষণ ছিল বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য বিশ্বের ২৪টি নতুন স্থানের অনুমোদন। যেগুলোর মধ্যে আসামের আহোম রাজবংশের প্রাচীন সমাধিক্ষেত্র মৈদাম তার ঐতিহাসিক তাৎপর্যের জন্য স্বীকৃত ও সংযুক্ত হয়েছে। এই সংযোজনে ফলে ভারতে মোট বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ৪৩টি হল| যা দেশের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক ঐতিহ্যকেই প্রদর্শিত করে|
বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটি তাদের তালিকায় থাকা বিশ্বের বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী স্থান, বিশেষ করে যেগুলো ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচিত, সেগুলোর বর্তমান অবস্থাও পর্যালোচনা করে| সেই স্থানগুলোর সংরক্ষণের অবস্থা এবং তাদের সংরক্ষণ সুনিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপ নিয়ে বেশকিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়| যা এইসব অমূল্য সাংস্কৃতিক ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় আন্তর্জাতিক কমিটির নিরন্তর নিবেদনকেই প্রতিফলিত করে|
মূল আলোচনার পাশাপাশি এই বৈঠকে ঐতিহ্য সংরক্ষণের ক্ষেত্রে আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা তুলে ধরে আন্তর্জাতিক সহায়তার জন্য বিভিন্ন অনুরোধের উপর আলোকপাত করা হয়। যেখানে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য কেন্দ্রকে সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণে এবং উন্নয়নশীল দেশগুলির সংরক্ষণ প্রকল্পগুলিকে সহায়তা করতে ১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ভারত|
বৈঠকে ঐতিহ্যের ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন দিক নিয়ে নিবেদিত বেশ কয়েকটি ফোরাম ছিল। এর মধ্যে আছে ‘ইয়ং প্রফেশনালস ফোরাম’ এবং ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট ম্যানেজার’স ফোরাম’| যেগুলো উদীয়মান পেশাদার এবং অভিজ্ঞ ব্যবস্থাপকদের মধ্যে জ্ঞানের বিনিময় এবং সর্বোত্তম অনুশীলন নিয়ে আলোচনার জন্য প্রয়োজনীয় মঞ্চ প্রদান করে|
মূল বৈঠকের পাশাপাশি ছিল সাংস্কৃতিক প্রদর্শনী এবং অন্যান্য অনুষ্ঠান| যার মধ্য দিয়ে ভারতের বৈচিত্র্যময় ঐতিহ্যের রূপরেখা প্রদর্শিত হয়| অনুষ্ঠানগুলির মধ্যে ছিল বিদেশ থেকে ভারতে ফিরিয়ে নিয়ে আসা বিভিন্ন শিল্পকর্ম, ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্প এবং ঐতিহ্যের সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন উদ্ভাবনী পদ্ধতির প্রদর্শন| যা অংশ গ্রহণকারী প্রতিনিধিদের ভারতের সাংস্কৃতিক প্রাকৃতিক প্রেক্ষাপটের উপর একটি বিস্তৃত দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে।.

