নিজস্ব প্রতিনিধি, কল্যাণপুর, ২৫ জুলাই: ত্রিপুরা রাজ্যে তখন বাম-জমানা। কথায় কথায় গগন ব্যাপী প্রসারিত স্লোগান উঠতো, ডানে কারা? বায়ে কারা? উত্তরে কারা? দক্ষিণে কারা? পশ্চিমে কারা? পূর্বে কারা? সবগুলার উত্তরই হতো সিপিআইএম বা বামপন্থা। অস্বীকার করার উপায় নেই তদানীন্তন সময়ে গোটা রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় বামপন্থীরা একাধিপত্ব বিস্তার করে চলেছিল। কিন্তু তারপরেও কিছু কিছু অকুতভয় চিত্তের ব্যক্তি ছিলেন যারা আদর্শে অবিচল থেকে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সমাজের নীতিকে বলিষ্ঠ করতে কখনো পেছনে ফিরে তাকায়নি। তাদের মধ্যে একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব ছিলেন কল্যাণপুরের পশ্চিম ঘিলাতলী গ্রাম পঞ্চায়েতের খগেন্দ্র দেবনাথ।
বামপন্থীদের আধিপত্যের মাঝেও কংগ্রেসের আদর্শে অবিচল থেকে পঞ্চায়েত প্রতিনিধি হয়ে মানুষের কথাকে সরকারের কাছে পৌঁছে দিতে খগেন্দ্র বাবু প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে নির্বাচনে অর্থাৎ গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এবং পঞ্চায়েত প্রতিনিধি হিসেবে বিজয়ী হয়ে নিজের জয়ের শংসাপত্র নিয়ে বাড়ির দিকে ছুটছিলেন। কিন্তু আর বাড়ি যাওয়া হয়নি। মাঝপথে খোয়াই নদীর তীরে নির্মম ভাবে পুরুষাঙ্গ থেতলে দিয়ে, শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আক্রমণ সংঘটিত করে নবনির্বাচিত পঞ্চায়েত প্রতিনিধিকে সেদিন খুন করা হয়েছিল। এরপর পার্শ্ববর্তী খোয়াই নদী দিয়ে অনেক জল প্রবাহিত হয়েছে, কল্যাণপুর তথা রাজ্য রাজনীতির প্রেক্ষাপটে অনেক পরিবর্তন কিংবা পরিবর্ধন সূচিত হয়েছে, কিন্তু আজও কল্যাণপুরের মানুষ নতমস্তকে খগেন্দ্র দেবনাথকে স্মরণে রেখেছেন। স্মরণে রেখেছেন বলেই প্রতিবছর ২৬ শে জুলাই কল্যাণপুরের একটা বিরাট অংশের মানুষ সম্মিলিতভাবে খগেন্দ্র দেবনাথকে স্মরণ করার মাধ্যমে গণতন্ত্রের ধজাকে তুলে ধরার জন্য অকুতোভয় চিত্তে যিনি নিজের প্রাণ বিলিয়ে দিয়েছেন তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ভুলেন না। খগেন্দ্র দেবনাথকে খুন করে গণতান্ত্রিক পন্থা পদ্ধতির উপর বিরাট আঘাত হানার যে প্রয়াস সেদিন গ্রহণ করা হয়েছিল, দুই দশকের বেশি সময় অতিক্রান্ত হলেও আজও কল্যাণপুর সেই দগদগে ক্ষতের চিহ্ন বহন করে চলেছে সমানভাবে। আজও খগেন্দ্র দেবনাথকে ভুলতে পারেনি কল্যানপুর।
2024-07-25