BRAKING NEWS

বাংলাদেশে বিনিয়োগের এখনই উপযুক্ত সময়, চিনা ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান প্রধানমন্ত্রী হাসিনার

।। রাজীব দে ।।   ঢাকা, ৯ জুলাই (হি.স.) : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চিনা ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে পারস্পরিক স্বার্থে বিশ্বের সবচেয়ে উদার বিনিয়োগ ব্যবস্থার সুবিধা নিয়ে বাংলাদেশের প্রধান খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন।  বেইজিংয়ে ‘বাংলাদেশ ও চিনের মধ্যে বাণিজ্য, ব্যবসা এবং বিনিয়োগের সুযোগ’ শীর্ষক এক শীর্ষ সম্মেলনে বক্তৃতাকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখনই বাংলাদেশে বিনিয়োগের উপযুক্ত সময় এবং আমি আত্মবিশ্বাসী যে, আমাদের হাতে হাত মিলিয়ে একসাথে আমরা দুর্দান্ত কিছু অর্জন করতে পারি।’  প্রধানমন্ত্রী চিনা ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে বাংলাদেশের মূল খাতগুলো বিবেচনা করার জন্য উৎসাহিত করে বলেন, ‘আমরা আমাদের অবকাঠামো, জ্বালানি এবং লজিস্টিক খাতে বিনিয়োগকে স্বাগত জানাই’।    চিনে তাঁর চারদিনের দ্বিপাক্ষিক সফরের দ্বিতীয় দিনে আয়োজিত সম্মেলনে যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী হাসিনা বাংলাদেশের সম্ভাব্য খাত আইসিটি, পর্যটন, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প এবং উন্নয়ন খাতে বৃহত্তর পরিমাণে বিনিয়োগ করার জন্য চিনা উদ্যোক্তা এবং বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।  বেইজিং-এ বাংলাদেশ দূতাবাস, বিআইডিএ, বিএসইসি এবং সিসিপিআইটি চায়না ওয়ার্ল্ড সামিট উইং, শাংরি-লা সার্কেল, বেইজিং-এ এই সম্মেলনের আয়োজন করে।  প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, চিনা বিনিয়োগের উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা রয়েছে, বিশেষ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানি সহ জ্বালানি খাতে।’  তিনি আরও বলেন, জলবায়ু-সহনশীল স্মার্ট ফার্মিং চিনের সাথে ক্রয়-ব্যাক ব্যবস্থা সহ কৃষি-প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে সহযোগিতার সুযোগ উন্মুক্ত করে।  শেখ হাসিনা বলেন, তাঁরা তিনটি বিশেষ পর্যটন অঞ্চল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করছেন যেখানে চিন রিয়েল এস্টেট এবং আতিথেয়তা খাতে বিনিয়োগ করতে পারে।  তিনি আরও বলেন, আমি চিনা বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে পোর্টফোলিও বিনিয়োগ অন্বেষণ করার আহ্বান জানাচ্ছি।  প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে আরও আকর্ষণীয় করে তোলার লক্ষ্যে পুঁজিবাজারের আরও উন্নয়নে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।  তিনি বলেন, ‘আমরা একটি শক্তিশালী বন্ড বাজার বিকাশে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছি। আমরা ডেরিভেটিভ পণ্য প্রবর্তনের দ্বারপ্রান্তে রয়েছি, যা আমাদের আর্থিক বাজারকে আরও বৈচিত্র্য ও প্রসারিত করবে।’  বাংলাদেশ ডিজিটাল যুগকে উন্মুক্ত বাহুতে আলিঙ্গন করছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার সক্রিয়ভাবে আইসিটি সেক্টরের প্রবৃদ্ধি জোরদার করছে, স্টার্টআপদের জন্য প্রণোদনা দিচ্ছে, টেক পার্কে বিনিয়োগ করছে এবং উদ্ভাবনা ও উদ্যোক্তাকে উৎসাহিত করে এমন একটি ইকোসিস্টেম গড়ে তুলছে।  তিনি বলেন, ‘আমাদের তরুণ উদ্যোক্তারা বিশ্ব মঞ্চে তাঁদের অবস্থান তৈরি করছেন এবং আমরা আপনাদের এই আকর্ষণীয় যাত্রার শরিক হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।’  প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা নবায়নযোগ্য জ্বালানি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং সবুজ প্রযুক্তিতে অসংখ্য সুযোগ গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।’  শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশ ও চিনের বেশ কয়েকটি কোম্পানির মধ্যে ১৬টি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) বিনিময় হয়েছে।  চিনের ভাইস মিনিস্টার অব কমার্স লি ফেই, চায়না কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান ওয়াং টংঝু, এইচএসবিসি চায়নার প্রেসিডেন্ট ও সিইও মার্ক ওয়াং, হুয়াওয়ের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সাইমন লিন, বাংলাদেশে চিনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন, চিনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মহম্মদ জসিম উদ্দিন এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়াঁ অনুষ্ঠানে বক্তব্য পেশ করেছেন।  অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য পেশ করেছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবায়াত-উল ইসলাম।  বাংলাদেশ ও চিনের কয়েকো ব্যবসায়ী নেতা, বিনিয়োগকারী এবং উদ্যোক্তা এই সম্মেলনে যোগ দেন।  বাংলাদেশে বিনিয়োগের যুক্তি ব্যাখ্যা করে শেখ হাসিনা বলেন, দেশটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পথের সাথে সরাসরি সংযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা দক্ষিণ-এশীয়, দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় এবং পূর্ব-এশীয় প্রবৃদ্ধি সার্কিটের সংযোগস্থলে রয়েছি। আমাদের সমুদ্রবন্দর, বিমানবন্দর এবং স্থল পথগুলোকে আন্তর্জাতিক মান পূরণের জন্য ক্রমাগত উন্নীত, দক্ষ এবং নির্বিঘ্ন লজিস্টিক নিশ্চিত করা হচ্ছে।’  তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের বিশাল অভ্যন্তরীণ বাজার এবং এর সংলগ্ন বাজারসমূহে সমগ্র অঞ্চলের জন্য অফুরন্ত সুযোগ রয়েছে।  শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিনিয়োগকারী হিসেবে আপনি দেখতে পারেন, বাংলাদেশ আপনার ব্যবসায়িক কার্যক্রমকে লাভজনক করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’  প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম উদার বিনিয়োগ ব্যবস্থা প্রদান করছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিডা) বিদেশি বিনিয়োগকারীদের এক ছাদের নীচে অনেকগুলো সেবা প্রদান করে থাকে।  শেখ হাসিনা আরও বলেন, বাংলাদেশ ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এস্ইজেডএস) প্রতিষ্ঠা করেছে। প্রতিটি অঞ্চল অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে সজ্জিত। উপরন্তু, প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রধান অংশীদার দেশগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে বাংলাদেশ সুনির্দিষ্ট পাঁচটি দেশের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছে।  তিনি বলেন, এছাড়া সরকার ব্যবসায়িক কাজকর্মকে আরও সহজ করে তুলতে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। হাসিনা বলেন, সরকার আরও ব্যবসা-বান্ধব পরিবেশ তৈরি এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি নিরাপদ ও পূর্বাভাসযোগ্য পরিবেশ দেওয়ার জন্য একাধিক সংস্কার কাজ শুরু করেছে।  প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার ব্যবসায়িক কার্যক্রমকে মসৃণ ও দক্ষ করে তুলতে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন, সরলীকৃত পদক্ষেপ ও পদ্ধতি তৈরি, স্বচ্ছতা নিশ্চিত এবং উন্নত অবকাঠামো তৈরি করেছে।  হাসিনা আরও বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হলো, বাংলাদেশকে বিশ্বের অন্যতম আকর্ষণীয় বিনিয়োগের গন্তব্য হিসেবে স্থান করে দেওয়া।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশ তাই বিশ্বমানের তথ্য-প্রযুক্তি-ভিত্তিক, সময় ও ব্যয় সাশ্রয়ী, পরিবেশবান্ধব লজিস্টিক সিস্টেম নির্মাণের মধ্য দিয়ে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য একটি প্রথম লজিস্টিক নীতি প্রণয়ন করেছে।  শেখ হাসিনা তাঁর মতামত তুলে ধরে বলেন, নীতিমালায় সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের মাধ্যমে সড়কপথ, রেলপথ এবং সমুদ্রবন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য বেসরকারি খাতের বিনিয়োগকে উৎসাহিত করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।  তিনি আরও বলেন, তাঁরা এই অঞ্চলে এবং এর বাইরে সংযোগ সহ বাংলাদেশকে একটি প্রাণবন্ত লজিস্টিক কেন্দ্রে পরিণত করতে ডিজিটাল এবং ভৌত অবকাঠামো উভয় ক্ষেত্রেই উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ করছে।  প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য প্রদর্শনের জন্য আমরা পদ্মা বহুমুখী সেতু, কর্ণফুলী নদী টানেল, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর, ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সম্প্রসারিত তৃতীয় টার্মিনাল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং ঢাকা মেট্রো-রেল ব্যবস্থার মতো মেগা-প্রকল্পগুলো এগিয়ে নিয়েছি এবং সম্পন্ন করেছি।’  শেখ হাসিনা বলেন, দেশব্যাপী বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সরবরাহের অর্জনও আমাদের রয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রথম যোগাযোগ স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ প্রযুক্তিগত অগ্রগতিতে নতুন। প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, বাংলাদেশে প্রতিযোগিতামূলক মজুরিতে ব্যাপক দক্ষ শ্রমিক রয়েছে।  এছাড়া তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম নিবন্ধিত আইটি ফ্রিল্যান্সার গোষ্ঠী রয়েছে। বলেন, ‘আমরা এমন-কি দূরবর্তী এলাকায় পৌঁছনোর জন্য আমাদের টেলিকমিউনিকেশন অবকাঠামো উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি লাভ করেছি’।  তিনি বলেন, তাঁর সরকার পর্যায়ক্রমে ৩৮টি হাই-টেক পার্ক স্থাপন করছে এবং কিছু প্রতিশ্রুতিশীল খাতে বিদেশি বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানিয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে একটি ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ে তোলা আমাদের ভিশন।’  প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো, দেশের তরুণ ও গতিশীল কর্মীবাহিনী। তিনি বলেন, প্রায় ২৭ বছরের গড় বয়সি বাংলাদেশের জনসংখ্যার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য শক্তি, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা এবং দৃঢ় কর্ম নীতি দ্বারা চিহ্নিত।  শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ এবং উচ্চ শিক্ষার উদ্যোগের মাধ্যমে আমাদের কর্মশক্তির সক্ষমতা বাড়াতে ক্রমাগত কাজ করছি। আমাদের যুবকরা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।’  এভাবে, বাংলাদেশে বিনিয়োগের অর্থ হলো দক্ষ ও অর্ধদক্ষ শ্রমিকের বিশাল অংশকে পাওয়া যা উভয়েই সাশ্রয়ী ও সক্ষমতাপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, চিন আমাদের সবচেয়ে বড় অংশীদার। দেশটির সাথে বছর বছর আমাদের বাণিজ্যের পরিমাণ বাড়ছে।  তবে দু-দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও সম্প্রসারিত করার অপার সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। হাসিনা বলেন, ‘আমরা বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা মোকাবিলা করতে এবং আরও ন্যায়সংগত বাণিজ্যিক সম্পর্ক তৈরি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’  বাংলাদেশ টেক্সটাইল, গার্মেন্টস, চামড়াজাত, পাটজাত ও কৃষিজাত পণ্য সহ চিনে আরও পণ্য রফতানি করতে আগ্রহী উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের রফতানিমুখী শিল্পে চিনা বিনিয়োগকে স্বাগত জানাই, যা আমাদের রফতানিতে বৈচিত্র্য আনতে এবং বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে সাহায্য করবে।’  প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যবসায়িক সহযোগিতা বাড়াতে বাংলাদেশ চিনা কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ গঠনে উৎসাহিত করছে। এই সহযোগিতা উভয় পক্ষের জন্য প্রযুক্তি স্থানান্তর, দক্ষতা উন্নয়ন এবং বাজারে প্রবেশকে সহজতর করবে বলে তিনি তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন।  তিনি তাঁর বলেন, উদ্ভাবন এবং প্রতিযোগিতা বৃদ্ধির জন্য গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বলেন, ‘আমরা আমাদের দক্ষ কর্মশক্তি এবং অ্যাকাডেমিক দক্ষতা ব্যবহার করে চিনা কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশে গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র স্থাপনের জন্য আমন্ত্রণ জানাই।’  হাসিনা বলেন, ‘আমরা যদি ভবিষ্যতের দিকে তাকাই, তা-হলে বাংলাদেশ ও চিনের মধ্যে অংশীদারিত্বে সীমাহীন প্রতিশ্রুতি লক্ষ্য করব। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য আমাদের অভিন্ন লক্ষ্য দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভিত্তিপ্রস্তর তৈরি করছে।’  প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুই দেশ এক সঙ্গে একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যত তৈরি করতে পারে যা আমাদের দেশ ও জনগণ উভয়কে উপকৃত করবে। তিনি বলেন, ‘আসুন আমরা একটি শক্তিশালী, আরও সমৃদ্ধ এবং আরও সংযুক্ত বিশ্ব গড়তে একসাথে কাজ করি।’  বাংলাদেশে ব্যবসা ও বিনিয়োগের সুযোগ অন্বেষণে চিনা ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের আগ্রহের প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই অনুষ্ঠান বাংলাদেশ ও চিনের মধ্যে শক্তিশালী ও স্থায়ী বন্ধুত্বের। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ও চিনের দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা ও পারস্পরিক সমর্থনের দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে।  তিনি আরও বলেন, ‘চিন আমাদের অবকাঠামো প্রকল্প, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং আমাদের অর্থনীতির সামগ্রিক প্রবৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রাখছে।’ শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ ও চিনের বাণিজ্য ও বিনিয়োগে আরও সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র খুঁজে বের করার সময় এসেছে।  প্রধানমন্ত্রী চিনা ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে উদ্দেশ্য করে বলেন, বাংলাদেশ অল্প কয়েকটি দেশের একটি যা  মহামারী চলাকালীনও প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে পেরেছিল। তিনি আরও বলেন, দেশটি এখন ২০২৬ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ হতে প্রস্তুত। বলেন, এই উত্তরণ বাংলাদেশের স্থিতিস্থাপকতা এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার ক্ষমতাকেই তুলে ধরে।  শীর্ষ সম্মেলনে তিনি বলেন, গত দেড় দশকে বাংলাদেশ স্থিতিশীল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, গড়ে যা ৬.৭ শতাংশ। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি ২০০৯ সালে ১০২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ২০২৩ সালে ৪৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। মহামারীর ঠিক আগে, বাংলাদেশের অর্থনীতির বৃদ্ধির হার ৮.১৫ শতাংশে পৌঁছেছিল বলে তিনি উল্লেখ করেন।  প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় এখন ২,৭৮৪ মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে, যা গত দু-দশকে ৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এর রফতানির পরিমাণ ৫০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। এটি ২০২২ সালে ২.৮ বিলিয়ন ডলারের নেট এফডিআই পেয়েছে।  তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ রেমিট্যান্স-অর্জনকারী দেশগুলোর মধ্যে একটি এবং এটি এখন বিশ্বের ৩৩-তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। বিশ্বের স্বনামধন্য থিংক ট্যাংকগুলো অনুমান করেছে, বাংলাদেশ ২০৩০-এর দশকের প্রথমার্ধে ২৪-তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হতে পারে।  শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার সরকার এই লক্ষ্য অর্জনে বেসরকারি খাতের সাথে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছে।’   (শেষ)  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *