নিজস্ব প্রতিনিধি, গণ্ডাছড়া, ১৭ জুন: রাজ্যের সবচেয়ে প্রত্যন্ত মহকুমা হিসেবে পরিচিত গন্ডাছড়া মহকুমা। গন্ডাছড়া মহকুমার মানুষজন শিক্ষা স্বাস্থ্য যোগাযোগ ব্যবস্থা সহ অন্যান্য বিভিন্ন দিক থেকে এখনো অনেক পিছিয়ে। দলপতি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের বেহাল প্রত্যন্ত গন্ডাছড়া মহকুমার দলপতি এডিসি ভিলেজ এলাকার প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত।
২০১৫ সালে তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী বাদল চৌধুরীর হাত ধরে দশ শয্যা বিশিষ্ট এই প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পথ চলা শুরু হয়। বর্তমানে প্রাথমিক হাসপাতালটিতে কর্মী সল্পতা থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ, পানীয় জলের মারাত্মক সমস্যা দেখা দিয়েছে। যে উদ্দেশ্য নিয়ে স্বাস্থ্য কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছিল বর্তমানে একমাত্র স্বাস্থ্য কর্মীর অভাবে পরিষেবার ব্যাঘাত ঘটছে।
দশ শয্যা বিশিষ্ট প্রাথমিক হাসপাতালটি মাত্র একজন চিকিৎসক, দুজন এম.পি.ডাব্লিউ, দুজন জিডিএ স্টাফ দিয়ে কোনরকম ভাবে চলছে। অথচ এই প্রাথমিক হাসপাতালের অধিন দলপতি, কল্যানসিং, ভগিরথ এবং রতননগর ভিলেজের প্রায় ১০ হাজার জনজাতি সম্প্রদায়ের বসবাস।
তাছাড়া এসব এলাকায় কর্মরত ভারত বাংলা সীমান্তবর্তী বাহিনী বিএসএফ এবং টিএসআর ক্যাম্পের জোয়ানেরা অসুস্থ হয়ে পড়লে দুর্গম এলাকার একমাত্র এই হাসপাতালটিতেই পরিষেবা নিতে আসতে হয়। এরকম একটি গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতাল বছরের পর বছর ধরে কর্মী সল্পতায় ভুগছে। এমতাবস্থায় হাতেগোনা মাত্র ২-৪ জন স্বাস্থ্যকর্মী দিয়ে হাসপাতালের পরিষেবা দিতে ভীষণ অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
এর উপর রয়েছে ধারাবাহিকভাবে পাড়ায় পাড়ায় স্বাস্থ্য শিবির। দেখা যায় চিকিৎসকরা স্বাস্থ্য শিবিরে চলে গেলে হাসপাতালের পরিষেবা আরো মারাত্মক আকার ধারণ করে। হাসপাতালের এরকম দৃশ্য বিগত কয়েক বছর ধরে চলে আসলেও স্বাস্থ্য দপ্তর এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। বর্তমানে এলাকার মানুষ প্রাথমিক হাসপাতালটিতে স্বাস্থ্য পরিষেবা নিতে কোন আগ্রহ দেখাচ্ছেনা। তারা বাধ্য হয়ে ২০ থেকে ২৫ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে গন্ডাছড়া মহকুমা হাসপাতালে এসে পরিষেবা নিতে হচ্ছে। তাছাড়া হাসপাতালে নেই কোন ফার্মাসিস্ট, নেই ব্লাড টেকনিশিয়ান, নেই অ্যাম্বুলেন্স।
এছাড়াও হাসপাতালে বিদ্যুৎ এবং পানীয় জলের মারাত্মক সমস্যা রয়েছে। যদিও মহকুমা পানীয় জল সম্পদ দপ্তর থেকে হাসপাতাল এরিয়ায় একটি মিনি ডিপটিউবেল বসানো হয়। কিন্তু আজ অব্দি পাম্প মেশিনটি দিয়ে জল বের হয়নি। বিদ্যুতের সমস্যা যত কম বলা যায় ততই ভালো। দুর্গম এলাকার এই হাসপাতালটিতে মাসের অধিকাংশ সময় বিদ্যুৎ লাইনের সমস্যা থাকে। যদিও হাসপাতালে সোলার লাইটের ব্যবস্থা আছে। কিন্তু এই সোলার লাইট দিয়ে পুরো হাসপাতালটি কাবার হয় না। এছাড়াও হাসপাতাল রোডের রাস্তাটি বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে। এই বেহাল রাস্তা ধরে রোগী নিয়ে আসা-যাওয়া করতে দারুন অসুবিধায় পড়তে হয়।
এসব নানা সমস্যার কারণে সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে হাসপাতাল বিল্ডিং গড়ে তুললেও একমাত্র কর্মী সল্পতার কারণে হাসপাতাল মুখি হচ্ছে না এলাকার জনজাতিরা। দাবি উঠেছে প্রাথমিক হাসপাতালটিতে অতিদ্রুত পর্যাপ্ত সংখ্যক স্বাস্থ্য কর্মী নিয়োগ করে সুষ্ঠু পরিষেবা প্রদানে। এখন দেখার খবর প্রকাশিত হওয়ার পর রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর হাজারো জনজাতিদের কথা চিন্তা করে কোন কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করে কিনা তার দিকে তাকিয়ে আছেন এলাকার সাধারণ মানুষ।