BRAKING NEWS

মৃত হাতির দাঁত নিয়ে বন দপ্তর ও গ্রামবাসীদের মধ্যে ঝামেলা,উত্তপ্ত এলাকা

নিজস্ব প্রতিনিধি, কৈলাসহর, ২ এপ্রিল: মৃত হাতির দাঁত নিয়ে বন দপ্তর এবং গ্রামবাসীদের মধ্যে তমুল বাক বিতন্ডার জেরে রণক্ষেত্র হয়ে উঠে কৈলাসহরের মূর্তিছড়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। সংশ্লিষ্ট এলাকায় তীব্র আতঙ্ক বিরাজ করছে।
জানা গেছে, মূর্তিছড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনস্হ মূর্তিছড়া চা বাগান এলাকায় হাতি হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে মারা যায়। হাতিটি মারা যাবার পর হাতির মালিক পশু চিকিৎসক নিয়ে গিয়ে মৃত হাতির ময়না তদন্ত করিয়ে নেয়। পরবর্তী সময়ে গ্রামবাসীরা হিন্দু রীতিনীতি মেনে মৃত হাতিটির পূজা পাঠ করে মাটিতে বড় গর্ত করে সেই গর্তের মধ্যে মৃত হাতিটিকে রেখে মাটি চাপা দেয়।

হাতির মালিক কৈলাসহরের ইরানী এলাকার বাসিন্দা। মৃত হাতিটি মাটির গর্তে রেখে মাটি ভরাট করার সময় কৈলাসহরের বন দপ্তরের দুইজন কর্মী ঘটনাস্থলে গিয়ে মৃত হাতির দাঁত কেটে আনার জন্য বলে। তবে বন দপ্তরের কর্মীদের পাত্তাই দেয়নি গ্রামবাসীরা।

পরবর্তীতে বন দপ্তরের কর্মীরা বিশাল পুলিশবাহিনী নিয়ে মূর্তিছড়া গ্রামে গিয়ে মৃত হাতিটিকে মাটির নীচ তুলে মৃত হাতিটির দাঁত কেটে আনার জন্য কথা বলাতেই বাঁধে বিপত্তি। বন দপ্তরের কর্মীদের মধ্যে ছিলেন কৈলাসহর মহকুমার বন আধিকারিক হিরনজয় রিয়াং, কৈলাসহরের অতিরিক্ত মহকুমাশাসক নব কুমার জমাতিয়া, চন্ডীপুর বন দপ্তরের রেঞ্জ অফিসার শৈলেন মালাকার, গৌরনগর বন দপ্তরের রেঞ্জ অফিসার সুমন ভৌমিক কৈলাসহর থানার বিশাল পুলিশ, টি.এস.আর সহ বি.এস.এফ জওয়ানরা।

প্রশাসনের এতবড় জাম্বু টিম দেখে গ্রামবাসীরাও উত্তেজিত হয়ে উঠে এবং পুরো গ্রামের মানুষ একত্রিত হয়ে প্রশাসনের সম্মুখীন হয়। গ্রামবাসীরা স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দেয়, কোনো ভাবেই মাটির নীচ থেকে মৃত হাতিটি তোলা যাবেনা। আর যদি, মৃত হাতিটি মাটির নীচ থেকে তোলে মৃত হাতির দাঁত কেটে নিয়ে যেতে হয় তাহলে মৃত হাতিটিকে এই জায়গায় অর্থাৎ মূর্তিছড়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় মৃত হাতিকে মাটির নীচে রাখা যাবেনা। মৃত হাতিকে অন্য এলাকায় নিয়ে যেতে হবে।

এতে পরিস্থিতি প্রচন্ড উত্তপ্ত হয়ে উঠে। গ্রামবাসীরা এও জানান যে, বিগত দেড় বছরের মধ্যে মূর্তিছড়া চা বাগান এলাকায় আরও দুইটি হাতি কাজ করার সময় মারা গেছে। এনিয়ে মোট তিনটি হাতি মূর্তিছড়া চা বাগান এলাকায় মারা গেছে। গ্রামবাসীরা মূর্তিছড়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাটিকে হাতিদের ‘পূর্ণ ভূমি এবং  স্বর্গ-দ্বার’ বলেও উল্লেখ করেন। এই এলাকাটি হাতিদের পূর্ণ ভূমি এবং স্বর্গ-দ্বার না হলে একের পর এক হাতি কেন এই এলাকায় এসে মারা যেত বলে প্রশ্ন করেন গ্রামবাসীরা।

গ্রামবাসীরা মৃত হাতিকে গনেশ রুপে নিষ্ঠার সহিত পূজা পাঠও করেছে। গ্রামবাসীরা সবার সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে গ্রামে একটি গনেশ মন্দির স্থাপন করবেন বলেও জানান। গনেশ মন্দির নির্মানে হাতির মালিকও সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন বলেও জানান গ্রামের বাসিন্দা রাম চন্দ্র কৌরী।

অন্যদিকে গ্রামবাসী সূত্রে জানা যায় যে, হাতির মালিক হাতিকে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাওয়া দাওয়া না করিয়ে অতিরিক্ত কাজ করানোর ফলে হাতিটি মারা গেছে। তাছাড়া হাতিটির মৃত্যুর পর হাতির মালিক বন দপ্তরকে কোনো কিছু না জানিয়ে নিজের মরজিমাফিক পশু চিকিৎসক নিয়ে মৃত হাতির ময়না তদন্তও করিয়ে নেয়। হাতির মালিকের এহেন কান্ড জ্ঞানহীন কাজ করার পরও বন দপ্তরের পক্ষ থেকে হাতির মালিকের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের পদক্ষেপ না নিয়ে বন দপ্তরের আধিকারিকরা উল্টো মৃত হাতির দাঁত কেটে নিয়ে যাবার জন্য রীতিমতো যুদ্ধ বাঁধিয়ে দেয়।

এব্যাপারে কৈলাসহর মহকুমা বন দপ্তরের আধিকারিক হিরনজয় রিয়াং-কে জিজ্ঞেস করলে হিরনজয় রিয়াং নিজেও স্বীকার করেন যে, হাতির মালিক দপ্তরকে না জানিয়ে মৃত হাতির ময়না তদন্ত করেছেন। তাছাড়াও উনি জানান যে, হাতির মালিকের ব্যাপারে সমস্ত কিছু দপ্তরের উচ্চ পদস্থ আধিকারিকদের নজরে নেওয়া হয়েছে। দপ্তরের উচ্চ পদস্থ আধিকারিকরা নিশ্চয়ই এব্যাপারে পদক্ষেপ নেবেন বলে জানান। অন্যদিকে গ্রামবাসীরা তাদের দাবিতে অনড় থাকায় বন দপ্তরের পক্ষ মৃত হাতিটিকে মাটির নীচ থেকে তোলেনি এবং মৃত হাতির দাঁত না নিয়ে খালি হাতে ফিরে আসেন বলে হিরনজয় রিয়াং জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *