মৎস্যচাষে সাফল্য পেল বিষ্ণুপদ নাথ

নিজস্ব প্রতিনিধি, ধর্মনগর, ১ মার্চ: উত্তর ত্রিপুরা জেলার জেলা সদর ধর্মনগর মহকুমা অন্তর্গত যুবরাজনগর ব্লকের অধীন যুবরাজনগর গ্রামের এক নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা বিষ্ণু পদ নাথ( ৪৮) মাছ চাষ এবং সবজি চাষ করে সাফল্যে অর্জন করেছেন। শুধু তাই নয় পরিবার ছেলে মেয়েদের পড়াশোনা ভাতিজাদের পড়াশোনা সবই করাচ্ছে বিষ্ণু।

২০১১সালে বিষ্ণু তার বাড়ির একটি আধকানি পুকুরে মাছ চাষ শুরু করে, বেশ কিছুদিন মাছ চাষ করার পর সেরকম সাফল্য অর্জন করতে পারেনি মাছ চাষে। উন্নতমানের মাছ চাষ করার লক্ষ্যে সে যোগাযোগ করে জেলা সদর ধর্মনগর মৎস্য উপ অধিকর্তা অফিসে।

সেখানে তার সাথে কথা হয় উপ অধিকর্তা বিজয় রায়ের সাথে। তার সমস্ত বিষয় সে খুলে বলে তখন থেকে মৎস্য দপ্তরের যে সকল প্রশিক্ষণ শিবির আয়োজন করা হতো সমস্ত শিবির তার মৎস্য চাষের উপর আগ্রহ দেখে বিষ্ণুকে আহ্বান করা হল প্রশিক্ষণের জন্য।

 বেশ কিছুদিন কেটে যাওয়ার পর উপ অধিকর্তা মৎস্য দপ্তরের উপ-অধিকর্তা বিজয় রায় তার বাড়িতে যায় সেখানে গিয়ে দেখে তার একটি আধ কানি পুকুর রয়েছে কিন্তু মৎস্য চাষের জন্য যে সকল প্রয়োজনীয় জিনিসের প্রয়োজন হয় সেগুলো কোন কিছুই নেই বা তার পদ্ধতি সঠিক নয়।

বিষ্ণু উপ অধিকর্তা কে বলে তার এগারো কানি জায়গা রয়েছে যদি সরকার পক্ষ থেকে তাকে সাহায্য করা হয় তাহলে সে পুকুর খনন করবে। তার কথা শুনে উপ অধিকর্তা তাকে জানান মৎস্য দপ্তরে একটি স্কিম এসেছে প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্পদ যোজনার (PMMSY) তখন সে তার ওই স্কিমের(পরিকল্পনা) জন্য প্রয়োগ করে উপ অধিকর্তা দপ্তরে।  এবং সে সেই স্কিমের সুবিধা পায় সে।

২০২১-২০২২ অর্থবছরে বেনিফিসারি হিসেবে বিষ্ণুর তিন কানি জায়গায় প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্পদ যোজনার অন্তর্গত পুকুর খনন করানো হয় মৎস্য দপ্তর থেকে খননের টাকা, মাছের পোনা,  মাছের চারা, মাছের খাবার, খৈইল, চুন ইত্যাদি প্রয়োজনীয় জিনিস দেওয়া হয়।

প্রথম বছরেই বিষ্ণু নয় টন মাছ বিক্রি করতে সফল হয় যা থেকে আয় হয় তার আনুমানিক তিন লক্ষ টাকার উপরে। বিষ্ণু জানায় বর্তমানে তার নয়টি পুকুর রয়েছে। তার বার্ষিক আয় ১০ থেকে ১২ লক্ষ টাকা। সে মৎস্য উৎপাদন করে কই মাছ, শিং মাছ, দেশীয় মাগুর মাছ, রুই মাছ ,মৃগেল মাছ কাতলা মাছ, সিলভার কাপ, মাছের পোনা, রেনু বিক্রি করে, তাছাড়া রয়েছে একটি হ্যাচারি।

বিষ্ণুর মোট ২৫ কানি জায়গা রয়েছে তার মধ্যে সে ১১ কানি তে পুকুর অর্থাৎ মৎস্য উৎপাদন করছে অন্যদিকে সে পুকুর পাড়েই সবজি চাষ করছে,  এবার সবজি বিক্রি করে তার লাভ হয়েছে তিন লক্ষ টাকার উপরে, সবজির মধ্যে রয়েছে সিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, পটল, ঝিঙ্গা, মিষ্টি কুমোর ইত্যাদি।

বিষ্ণুপদ নাথ জানায় সে কল্পনা করতে পারেনি যে সে কোন দিন এত টাকা রোজগার করতে পারবে বা স্বাবলম্বন হতে পারবে এবং মৎস্য চাষে উৎসাহী বেকার যুবকদেরকে রোজগারের পথ দেখাতে পারবে।

উত্তর ত্রিপুরা জেলা থেকে বিষ্ণুপদ নাথ এবার একা ২০২৪ সালের ২৬ শে জানুয়ারিতে সে ন্যাশনাল ফিশারি ডেভলপমেন্ট বোর্ডের উদ্যোগে প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্পদ যোজনায়  ভালো মাছ চাষ করার সাফল্য অর্জন করার জন্য দেশের রাজধানী দিল্লি থেকে আমন্ত্রিত হয় এবং প্যারেড দেখার সুযোগ পায় ভারতবর্ষের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও সুনামধন্য ব্যক্তিদের সাথে এবং বিষ্ণুর হাতে একটি মেমেন্টো (স্মৃতিচিহ্ন) তুলে দিয়ে তাকে সম্মান জানানো হয়।