রাম মন্দিরে প্রাণপ্রতিষ্ঠা শেষে রাহুল গান্ধীকে বটদ্রবা সত্র পরিদর্শনের আবেদন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্বের

গুয়াহাটি, ২১ জানুয়ারি (হি.স.) : অযোধ্যায় রাম মন্দিরের উদ্বোধন ও রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠা শেষে আগামীকাল রাহুল গান্ধীর প্রস্তাবিত বটদ্রবা সত্র (অসমের বৈষ্ণবধর্ম প্রবর্তক, আধ্যাত্মিক গুরু মহাপুরুষ শ্রীমন্ত শংকরদেবের জন্মভূমি তথা উপাসনাস্থল) পরিদর্শনের আবেদন জানিয়েছেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা।

আজ রবিবার জনতা ভবনে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে এই আবেদন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা। তিনি বলেন, আগামীকাল রামমন্দিরে উদ্বোধন ও রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠার দিন মহাপুরুষ শ্রীমন্ত শংকরদেবের জন্মস্থান দিয়ে রাহুল গান্ধীর ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’য় খুশি নন। মুখ্যমন্ত্রী ড. শর্মা রাহুল গান্ধীকে ওইদিন এ ধরনের কার্যক্রম না করার জন্য অনুরোধ করেছেন। তিনি বলেন, রামমন্দির এবং বটদ্রবা সত্রের মধ্যে রাহুল প্রতিযোগিতায় নামতে চাইছেন। এটা ঠিক নয়। কেননা, দুটি স্থানই তীর্থক্ষেত্র, পবিত্র স্থান। তাই ‘রাহুল গান্ধী ২২ জানুয়ারিকেই বটদ্রবা সত্র পরিদৰ্শন করার দিন হিসেবে বেছে নেওয়ায় আমি ব্যথিত।’ বলেন মুখ্যমন্ত্ৰী।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘রাজ্যের মহান বৈষ্ণব সাধু-পণ্ডিত, কবি, লেখক, নাট্যকার মহাপুরুষ শ্রীমন্ত শংকরদেবের জন্মস্থান বটদ্রবা। টিভিগুলি একদিকে রামমন্দিরের প্রাণপ্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠান দেখাবে, অন্যদিকে রাহুল গান্ধী মহাপুরুষ শ্রীমন্ত শংকরদেবের জন্মস্থান পরিদর্শন করছেন সম্প্রচার করবে, অসমের জন্য এটা ভালো হবে না। তার চেয়ে ভালো, ওইদিন তিনি বেলা দুটার পর বা সকালের দিকে বটদ্রবা যান।’

ড. শর্মা বলেন, ‘আমি বলব, তিনি যদি প্রাণপ্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানের সময় দুই থেকে তিন ঘণ্টার মধ্যে বটাদ্রবায় না যান তবে ভালো হবে।’

সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্ৰী আরও বলেন, ‘অসমে ন্যায় যাত্রা উপলক্ষে রাহুল গান্ধী আজই (রবিবার) বটদ্রবা সত্রে যেতে পারতেন। তবে রামমন্দিরের অভিষেক অনুষ্ঠানের সঙ্গে যাতে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা সংঘটিত হয়, তাই এই পরামর্শ দিচ্ছি।’

রাহুল গান্ধীক উদ্দেশ্য করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন ‘আগামীকাল আপনি মরিগাঁও, নগাঁও, জাগিরোড (মুসলমান সংখ্যাধিক্য এলাকা) যদি এড়িয়ে যান, তা-হলে ভালো হয়। বরং একদিন আপনি বিশ্রাম নিন। এখানকার বাতাস, জল, জমি খুব ভালো। পরিবেশ উপভোগ করুন।’ যোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, বটদ্ৰবা সত্র সমিতির পক্ষ থেকে তাঁর যাত্রাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তিনি নিজে থেকে কর্মসূচি তৈরি করেছেন। তা খুব ভালো, যেহেতু তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি, তাই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার খাতিকে তাঁর কর্মসূচি পরিবর্তন করতেই পারেন রাহুল।

গুয়াহাটিতে রাহুল গান্ধীর ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’র অনুমতি তাঁর সরকার দেয়নি বলে কংগ্রেসের অভিযোগ নস্যাৎ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গুয়াহাটিতে অনুমতি দেওয়া হয়নি এই অভিযোগ ঢাঁহা মিথ্যা। শহরের উপর দিয়ে যাত্রা না করার কথা বলে হয়েছে। কেননা শহরে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ, যানবাহনের ভিড় ইত্যাদি বহু বিষয় রয়েছে। এমতাবস্থায় এই যাত্রা শহরের বুক চিরে গেলে জ্যাম, রোগীর আনাগোনা ও অন্যান্য ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি হবে বলে কংগ্রেস নেতাদের গুয়াহাটি শহরের মধ্য দিয়ে না যেতে বলেছিলেন।

বলেন, ছত্তিশগড়ের সদ্যসমাপ্ত নির্বাচনী প্রচারে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু নির্দিষ্ট একটি জায়গায় প্রচারাভিযানে যেতে কংগ্রেস (তদানীন্তন) সরকার তাঁকে নিষেধ করেছিল। সরকারের আবেদনে সাড়া দিয়ে ওই জায়গায় প্রচারাভিযান বাতিল করেছিলেন তিনি (হিমন্তবিশ্ব শর্মা)। এটা হলো পরিস্থিতি বুঝে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া এবং সরকারের আজ্ঞা পালনের জ্বলন্ত উদাহরণ, বলেন মুখ্যমন্ত্রী।

তবে মুখ্যমন্ত্ৰী শৰ্মা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, জেনেশুনে কংগ্রেস যদি অনুমতি ছাড়াই গুয়াহাটিতে যাত্ৰা করে, তবে ‘জাতীয়স্তরের মিডিয়ায় অপ্রয়োজনীয় লাইমলাইট ’ এড়াতে তাৎক্ষণিক কোনও মামলা দায়ের করা হবে না। কিন্তু পরে একটি মামলা দায়ের করা হবে এবং পরিচয় খোলসা না করে বলেন, লোকসভা নির্বাচনের তিন-চার মাস পর সমাবেশে অংশগ্রহণকারী দুই ‘ব্যাড এলিমেন্টস’কে গ্রেফতার করা হবে।

বলেন, আসাম পুলিশ ইতিমধ্যে যাত্রা এবং এর প্রধান সংগঠক কেবি বাইজুর বিরুদ্ধে যোরহাট শহরে অনুমোদিত পথ থেকে বিচ্যুত হওয়ার অভিযোগে একটি স্বতঃপ্রণোদিত এফআইআর নথিভুক্ত করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *