কলকাতা, ১১ জানুয়ারি (হি.স.): চব্বিশে সাধারণ নির্বাচনের আগে কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী সরকার নয়া বিতর্ক উস্কে দিয়েছে। বিজেপি চাইছে এক দেশ এক ভোটের। অর্থাৎ লোকসভার সঙ্গে সব রাজ্যের বিধানসভা ভোট যেন একসঙ্গে হয়। এই ব্যাপারে তীব্র আপত্তি জানিয়ে চিঠি দিলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
‘এক দেশ এক ভোট নিয়ে’ এবার নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। তিনি সাফ জানিয়ে দিলেন, তিনি এই ভাবনার সঙ্গে সহমত নন।
ইতিমধ্যেই প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গড়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। সেই কমিটির তরফ থেকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে এই নিয়ে মতামত চেয়েছিলেন কমিটির প্রধান নীতেন চন্দ্রা। এই নিয়ে পালটা চিঠি লিখে কড়া প্রতিক্রিয়া দিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী।
সরাসরি তিনি জানিয়ে দিলেন যে, দেশের সংবিধান এক দেশ এক সরকারে বিশ্বাসী নয় ৷ সেখানে কীভাবে এক দেশ এক ভোট কার্যকর হতে পারে ! বৃহস্পতিবার ‘এক দেশ, এক ভোট’ নিয়ে কেন্দ্রের কমিটিকে চিঠি লিখে লোকসভা এবং বিধানসভায় একযোগে নির্বাচনের ধারণার সঙ্গে তাঁর মতানৈক্য প্রকাশ করেছেন। এই সঙ্গে তিনি সাফ জানিয়েছেন, এটি ভারতের সাংবিধানিক মৌলিক কাঠামোর বিরুদ্ধে হবে।
মমতা প্রশ্ন তুলেছেন, এখানে ‘এক দেশ’ বলতে কী বোঝাতে চাইছেন। সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক কিংবা ঐতিহাসিক পটভূমিতে এক দেশের অর্থ আমরা বুঝি। কিন্তু ভারতের সংবিধানের শর্ত অনুযায়ী এক দেশের অর্থ আমার কাছে বোধগম্য নয়।
তাঁর প্রশ্ন, সংবিধানে কি ‘এক দেশ এক সরকারের’ নীতি অনুসরণ করার কথা বলা রয়েছে? ভারত একটি যুক্তরাষ্ট্র। সংবিধানে সেই শর্তের কথা রয়েছে। কোথাও এক দেশ এক সরকারের কথা বলা নেই। এই মৌলিক বিষয়টি এড়িয়ে এক দেশ এক ভোটের কথা ভাবাই যায় না।
প্যানেল সচিবকে লেখা একটি চিঠিতে, মমতা লিখেছেন, “১৯৫২ সালে, প্রথম সাধারণ নির্বাচন একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় এবং রাজ্যস্তরের জন্য পরিচালিত হয়েছিল। পরবর্তী কয়েক বছর ধরে এই ধরনের ব্যবস্থা ছিল। আমি দুঃখিত যে আমি ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ ধারণার সঙ্গে একমত হতে পারছি না৷ আমরা আপনার প্রণয়ন এবং প্রস্তাবের সঙ্গেও একমত নই৷”
অতীতে বাজপেয়ী জমানায় দু’বার কেন্দ্রের সরকারের পতন ঘটেছে। তার ফলে লোকসভা ভোট অনিবার্য হয়ে উঠেছিল। মুখ্যমন্ত্রী মমতার মতে, “একযোগে না-হওয়া যুক্তরাষ্ট্রীয় এবং রাজ্য নির্বাচনগুলি ওয়েস্টমিনস্টার সিস্টেমের একটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য যা পরিবর্তন করা উচিত নয়। ভারতীয় সাংবিধানিক ব্যবস্থার মৌলিক কাঠামোরও অংশ৷”
প্রসঙ্গত, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বে উচ্চস্তরের কমিটি রাজনৈতিক দলগুলিকে এই বিষয়ে তাদের মতামত চেয়ে চিঠি দিয়েছিল।

