শুভেন্দুকে শর্তসাপেক্ষে নেতাইয়ে যাওয়ার অনুমতি হাইকোর্টের

কলকাতা, ৫ জানুয়ারি (হি.স.) : শর্তসাপেক্ষে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে নেতাই গণহত্যার অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাওয়ার অনুমতি দিল কলকাতা হাইকোর্ট। তবে শর্ত দেওয়া হয়েছে, শহিদ বেদীতে মাল্যদান করার সময়ে কোনওরকমের রাজনৈতিক মন্তব্য করতে পারবেন না বিরোধী দলনেতা।

আগামী ৭ জানুয়ারি বিকেল ৫টা থেকে সন্ধে ৬টা পর্যন্ত বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে নেতাই গ্রামের শহিদ বেদীতে পৌঁছে মাল্যদানের অনুমতি দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত। তবে তাঁর সঙ্গে নিরাপত্তারক্ষী ছাড়া সেখানে অন্য কেউ যেতে পারবেন না। নেতাই স্মৃতিরক্ষা কমিটি বিকেল সাড়ে চারটে পর্যন্ত সভা করতে পারবে নেতাইচকে শহিদ বেদী সংলগ্ন এলাকায়। বিকেল পাঁচটা থেকে ছ’টা সেখানে অনুষ্ঠানে শুভেন্দু অধিকারী যেতে পারবেন। সঙ্গে শুধু আবেদনকারীর নিরাপত্তা রক্ষীরা থাকতে পারবেন।

এ দিন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর তরফে আইনজীবী রাজদীপ মজুমদার বলেন, রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শ্রদ্ধা জানাতে যেতে চান, কিন্তু পুলিশ অনুমতি দিচ্ছে না। গত বছরও আদালত অনুমতি দেওয়া সত্ত্বেও পুলিশি হেনস্থার মুখে পড়তে হয়েছিল বিরোধী দলনেতাকে।

রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত বিরোধিতা করে বলেন, “ওখানে নেতাই স্মৃতিরক্ষা কমিটির অনুষ্ঠান আছে। ফলে আইনশৃঙ্খলা অবনতির সম্ভাবনা আছে। ওই অনুষ্ঠানের পর ২ জন গিয়ে শহিদ বেদীতে মাল্যদান করতে পারেন।”

নেতাই স্মৃতিরক্ষা কমিটির আইনজীবী সপ্তাংশু বসু বলেন, “বিগত ১২ বছর ধরে আমরা এই অনুষ্ঠান করে আসছি। এই অনুষ্ঠান কোনও রাজনৈতিক অনুষ্ঠান নয়। সেখানে বিরোধী দলনেতাকে আমরা আমন্ত্রণ জানাইনি। আমাদের অনুষ্ঠান বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত চলবে। ফলে অনুষ্ঠান শেষের পর আমাদের সময় দিতে হবে ওই জায়গা খালি করার। তার মধ্যে যদি উনি যান, সেখানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়তে পারে।”

বিচারপতি সেনগুপ্ত অবশ্য রাজ্য ও স্মৃতিরক্ষা কমিটির বক্তব্য শোনার পর বলেন, মামলায় রাজনৈতিক রং লাগুক তিনি চান না। শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর অধিকার সমস্ত ভারতীয় নাগরিকের আছে। সুতরাং এখানে আবেদনকারীকেও সুযোগ দিতে হবে। যেখানে রাজ্য সরকার চেষ্টা করছে মধ্যস্থতা করে বিষয়টিকে একটি জায়গায় আনার। অ্যাডভোকেট জেনারেলের প্রস্তাবে আদালত সন্তুষ্ট।

কিন্তু শুভেন্দু অধিকারীর আইনজীবী বিকেল পাঁচটার পর মাল্যদানের বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে বলেন, “বিকেল পাঁচটায় অনুষ্ঠান শেষ হলে তারপর অন্ধকার হয়ে যাবে। সকাল ১০টা অথবা বিকেল চারটেয় ওইখানে অনুষ্ঠান করার অনুমতি দেওয়া হোক।”

শেষ পর্যন্ত আদালত বিকেল পাঁচটা থেকে ছ’টার মধ্যে বিরোধী দলনেতাকে ওই স্থানে যাওয়ার ব্যাপারে সম্মতি দেয়। আদালতের নির্দেশ যথাযথভাবে পালন করা হচ্ছে কি না তা দেখতে হবে পুলিশকে। এজন্য পুলিশকে সম্পূর্ণ অনুষ্ঠানের ভিডিওগ্রাফি করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি।

২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি লালগড়ের নেতাই গ্রামে গণহত্যার ঘটনা ঘটে। অভিযোগ, মাওবাদী মোকাবিলার নামে সেই সময় গ্রামের মধ্যেই সশস্ত্র বাহিনীর শিবির গড়েছিল সিপিএম। ৭ জানুয়ারি ওই শিবির থেকে গ্রামের নিরীহ মানুষের ওপরে গুলি চালানো হয় বলে অভিযোগ। মৃত্যু হয় বেশ কয়েকজনের।

ওই বছরই রাজ্যে পালাবদলের ঘটনা ঘটে। তখন থেকে প্রতি বছর নেতাই গ্রামে শহিদদের স্মরণে ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। দল বদলে বিজেপিতে গেলেও ফি-বছরই শুভেন্দুবাবু নেতাই গ্রামের শহিদ বেদীতে গিয়ে মাল্যদান করেন। গত বছর পুলিশ তাঁকে গ্রামে ঢুকতে বাধা দিয়েছিল বলে অভিযোগ।