নজরুলের ‘‘হে পার্থসারথি! বাজাও বাজাও পাঞ্চজন্য শঙ্খ” গানে শুরু হবে লক্ষকণ্ঠে গীতা পাঠের অনুষ্ঠান-দলমত ধর্ম নির্বিশেষে সকলের আমন্ত্রণ

– মুখ্যমন্ত্রীর কাছে টেট পরীক্ষার দিন বদলের আবেদন
কলকাতা, ১৪ ডিসেম্বর (হি.স.) : ‘‘হে পার্থসারথি! বাজাও বাজাও পাঞ্চজন্য শঙ্খ ….’’ আগামী ২৪ ডিসেম্বর ব্রিগেডে অনুষ্ঠিত হতে চলা লক্ষকণ্ঠে গীতা পাঠের অনুষ্ঠান শুরু হবে কাজী নজরুল ইসলামের লেখা এই গানের মাধ্যমেই । আর এই গীতা পাঠের আসরে দলমত ধর্ম নির্বিশেষে সকলকেই আমন্ত্রণ জানাল আয়োজক কমিটি । একই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে টেট পরীক্ষার দিন বদলেরও আবেদন জানান হয় ।

বৃহস্পতিবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলনে আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে স্বামী প্রদীপ্তানন্দ ওরফে কার্তিক মহারাজ জানান, এবছর গীতাজয়ন্তী আগামী ২৩ ডিসেম্বর । আর গীতাজয়ন্তীর পরের দিন রবিবার ২৪ ডিসেম্বর লক্ষকণ্ঠে গীতা পাঠের আয়োজন করা হয়েছে । যা নিয়ে অভূতপূর্ব সাড়া মিলেছে । অনুষ্ঠানে সভাপতি হিসেবে থাকবেন দ্বারকার শঙ্করাচার্য স্বরূপানন্দ সরস্বতী। সাধুসন্তদের সঙ্গে গীতা পাঠের আগ্রহ প্রকাশ করেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, এমনটাই জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা । তাই হাজির থাকার কথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুও । আমন্ত্রণ জানানোর জন্য সময় চাওয়া হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ।তবে তিনি এখনও সময় দেননি।

আগামী ২৪ ডিসেম্বর ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে ‘লক্ষ কণ্ঠে গীতা পাঠ’ কর্মসূচি শুরু হবে কাজী নজরুল ইসলামের লেখা, ‘‘হে পার্থসারথি! বাজাও বাজাও পাঞ্চজন্য শঙ্খ, চিত্তের অবসাদ দূর কর কর দূর….’’ গানের মাধ্যমে। হঠাৎ এধরনের নজরুল গীতি দিয়ে ‘লক্ষ কণ্ঠে গীতা পাঠ’-এর আয়োজন কি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা দিতেই? এমন প্রশ্ন শুনে আয়োজক কমিটির সভাপতি স্বামী প্রদীপ্তানন্দ মহারাজ বলেন, লক্ষ কণ্ঠে গীতা পাঠ কর্মসূচি কখনও নির্দিষ্ট ধর্ম বা বর্ণের মধ্যে বেঁধে দেওয়া হয়নি। নেই কোনও রাজনৈতিক বাছবিচারও। ‘গীতা’ জীবন বোধ, তা যেমন মানুষের কী খাওয়া উচিত সেটাও বলে, তেমনি সুশৃঙ্খল জীবন গঠনের উপায়ও শেখায়। ‘লক্ষ কণ্ঠে গীতা পাঠ’ কর্মসূচিতে রাজনৈতিকভাবে বিজেপির কর্মসূচি বলায় প্রায়াস উড়িয়ে দিয়ে বলা হয়, শ্রীরামপুরে গীতাপাঠের আসরে হাজির ছিলেন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় । যদিও রবিবারের এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত রয়েছেন সকল সাংসদ ।

গীতার মোট ৫টি অধ্যায় পাঠ হবে। সেদিন পুরুষরা ধুতি পাঞ্জাবি ও মহিলারা শাড়ি পরে আসবেন। হাতে থাকবে গীতা। বসার জন্য থাকবে আসন। সম্ভব হলে সঙ্গে একটি করে শঙ্খ আনতে বলেছেন মহারাজরা। তাঁরা জানান।

এই অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দিক থেকে বাধা আসছে উল্লেখ করে বলা হয় । বিভিন্ন স্থানে বাস দেওয়া নিয়ে আপত্তি করা হচ্ছে। নানা স্থানে অনুষ্ঠানে যোগ না দেওয়ার জন্য হুমকি দেওয়া হচ্ছে । দিনকয়েক আগেই পূর্ব নির্ধারিত ১০ ডিসেম্বরের পরিবর্তে ২৪ ডিসেম্বর প্রাথমিকে টেট পরীক্ষা ঘোষণা করেছে রাজ্যসরকার। অনুষ্ঠানের দিনই প্রাথমিক টেটের আয়োজন নিয়ে মহারাজরা বলেন, ওই দিন তো টেট হওয়ার কথা ছিল না। তাই সমস্যা তো হবেই। মহারাজ বলেন, আমরা তো অনেক আগেই ঘোষণা করেছিলাম, ২০২৩ সালের হবে এমন কর্মসূচি। গত কয়েকমাস ধরে সংবাদমাধ্যমেও একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে এটা নিয়ে। প্রশাসনের সর্বোচ্চ আধিকারিকরাও জানেন। তারপরেও কেন ওই দিনে টেট পরীক্ষার দিন দেওয়া হল বোঝা যাচ্ছে না। তবে আজ তিনি সংবাদ মাধ্যমের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ওই দিনের টেট পরীক্ষা যাতে পিছিয়ে দেওয়া হয় তার আবেদন করেন ।

লক্ষ কণ্ঠে গীতাপাঠ নজিরবিহীন। তাই এত মানুষের গীতাপাঠের অনুষ্ঠানে থাকবেন গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ড’-এর প্রতিনিধিরাও। সেদিন লক্ষ কণ্ঠে গীতাপাঠ-এর সঙ্গে ৫০ হাজার শঙ্খধ্বনি বিশ্ব রেকর্ড হবে বলে দাবি করা হয় উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে । পাশাপাশি ১ লক্ষ কণ্ঠে “‘‘হে পার্থসারথি! বাজাও বাজাও পাঞ্চজন্য শঙ্খ…” গানটিও বিশ্ব রেকর্ড করবে বলে দাবি । -হিন্দুস্থান সমাচার / কাকলি