আগরতলা, ২৫ নভেম্বর।। অভাবের তাড়নায় বিক্রি হওয়া শিশু কন্যা সন্তান প্রশাসনিক তৎপরতায় উদ্ধার হয়েছে। সদ্যজাত ওই শিশুটি পুষ্টির অভাবে শারীরিকভাবে অসুস্থ হওয়ায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি রাখা হয়েছে। খোয়াই জেলাশাসক চাঁন্দনি চন্দ্রন জানিয়েছেন, শিশু বিক্রির ঘটনায় তদন্ত হবে। শিশুটির অভিভাবক তাকে নিজের কাছে রাখতে অসম্মতি জানালে তাঁদের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। প্রসঙ্গত, গতকাল মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক (ডা.) মানিক সাহা অভাবের তাড়নায় শিশু বিক্রির ঘটনায় তদন্তের নির্দেশে কয়েক ঘন্টার মধ্যেই এই পরিণাম পরিলক্ষিত হয়েছে।
মাত্র ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে সদ্যজাত শিশু কন্যাকে বিক্রি করে দিয়েছিলেন তাঁর পিতা। তেলিয়ামুড়া মহকুমার মুঙ্গিয়াকামী ব্লকের অন্তর্গত বংশীপাড়ায় ওই ঘটনায় রাজ্য জুড়ে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। বংশীপাড়া এলাকার বাসিন্দা খোকেন দেবর্বমা স্ত্রীকে ঘুমে রেখেই তাঁর কন্যা সন্তানকে বিক্রি করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘুম থেকে উঠে কন্যা সন্তানকে কাছে দেখতে না পেয়ে তাঁর মা আর্তনাদ শুরু করেছেন। সন্তানকে ফিরে পাওয়ার জন্য তিনি দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। বিষয়টি জানাজানি হতেই জনমনে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে এই খবর প্রকাশিত হওয়ার পর প্রশাসনও নড়েচড়ে বসেছে। গতকাল সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী অভাবের তাড়নায় সন্তান বিক্রির ঘটনায় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এরপরই ওই কন্যা সন্তানকে খুঁজে পাওয়ার জন্য খোয়াই জেলা প্রশাসন বিশেষ দল গঠন করেছিল।
এ বিষয়ে খোয়াই জেলা শাসক চান্দনি চন্দ্রন জানিয়েছেন, পুলিশ ও চাইল্ড লাইনকে সাথে নিয়ে ডিসিএম সৌরভ দাসের নেতৃত্বে একটি দল গঠন করা হয়েছিল। তেলিয়ামুড়া থেকে ওই দলটি অভাবের তাড়নায় বিক্রি হওয়া শিশু কন্যাটিকে খুঁজে বের করতে অভিযানে নেমেছিল। তাকে খুঁজে পাওয়া গেছে এবং বর্তমানে হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছে।
তিনি বলেন, ওই ঘটনায় বিস্তারিত তদন্ত হবে। শিশু কন্যাটির অভিভাবকদের সাথে বিস্তারিত আলোচনার পর পরবর্তী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তাঁর বক্তব্য, কন্যা সন্তানকে বাবা-মার কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে। কিন্তু তাঁরা ওই সন্তানকে নিজের কাছে রাখতে না চাইলে পরবর্তীতে কি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন সে বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করবে প্রশাসন। প্রয়োজনে ওই শিশু কন্যাকে হোমে রাখার ব্যবস্থার বিষয়েও চিন্তাভাবনা করা হবে।
তেলিয়ামুড়া হাসপাতালে জনৈক চিকিৎসক জানিয়েছেন, করবুক থেকে আজ ভোর সাড়ে তিনটা নাগাদ সিডিপিও এবং মুঙ্গিয়াকামী থানার পুলিশ ওই শিশু কন্যাকে হাসপাতালে এনেছে। পুষ্টির অভাবে শিশুটি শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাই তাকে ও তার মাকে হাসপাতালে ভর্তি রাখা হয়েছে।
ওই শিশু কন্যার পিতা জানিয়েছেন, আর্থিক দিক দিয়ে তিনি খুব দুর্বল। ভাঙ্গা ঘরে সন্তানকে রাখা এবং তাকে খাওয়ানো-পড়ানোর সামর্থ্য নেই তাঁর। তাই ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে সদ্যজাত শিশু কন্যাকে বিক্রি করেছিলেন তিনি।