দুর্গাপুর, ২৭ অক্টোবর (হি. স.) : ‘ রাজ্যের নজরদারি নেই। কৃত্রিম সঙ্কট তৈরী করেছে রাজ্যের তৃণমূল সরকার। যার ফলে মাথায় হাত পড়েছে চাষীদের। রমরমিয়ে চলছে রাসায়নিক সারের কালোবাজারি। রাসায়নিক সার সঙ্কটে রাজ্যের উদাসীনতাকেই দায়ী করলেন কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী (রাষ্ট্র) সুভাষ সরকার।
প্রসঙ্গত, রাসায়নিক সার সঙ্কটে রাজ্যের আলু চাষীরা। পিছন দরাজায় চলছে অবাধে কালোবাজারি। চড়া দামে বিকোচ্ছে রাসায়নিক সার। আবার কোথাও চরম সঙ্কট ভারত এনপিকে ১০:২৬:২৬ রাসায়নিক সার। জমি তৈরী করেও আলু বীজ বসাতে বিপাকে পড়েছে রাজ্যের চাষীরা। শীতকালীন চাষের শুরুতেই মাথায় হাত পড়েছে চাষীদের। কালোবাজারি রুখতে রাজ্যের ব্যার্থতাকে দায়ী করেছে বিজেপি ও কৃষক সভা। দুই বর্ধমানের দামোদর ও অজয় নদ তীরবর্তী মানাচর অন্যতম চাষাবাদ। একই সঙ্গে বাঁকুড়ার জেলার একপ্রকার অর্থনীতির অন্যতম উৎস চাষাবাদ। বর্তমান সময়ে যেকোন চাষে রাসায়নিক সারের ব্যবহার অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়েছে। ধান, গম সরষে থেকে শুরু করে আলু, পেয়াঁজ শীতকালীন সবরকম সব্জি চাষে রাসায়নিক ব্যাবহার অবশ্যম্ভাবী। গত কয়েক বছর দফায় দফায় ঘুর্নিঝড় ও প্রাকৃতিক দুযোগে চাষে প্রচুর লোকসান হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের কৃষকদের। তাই চলতি বছর শীতকালীন মুনাফার আশায় কোমর বেঁধে আলু চাষে নেমেছে চাষীরা। মরশুমের শুরুতেই মুলত আলু চাষ হয়। অক্টোবরের শেষ ও নভেম্বর গোড়া থেকে অনুকুল আবহাওয়ায় হাসি ফুটেছিল চাষীদের। মুনাফার আশায় আলু চাষের জমি তৈরীও করে। সেই মতো অনেক চাষী আগাম বীজও কিনে নেয়। এপর্যন্ত সবই ঠিক ছিল। কিন্তু, ভাল ফলনের জন্য আলু বীজ বসানোর সময় জমিতে রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হয়। মুলত ভারত এনপিকে ১০:২৬:২৬ র মতো রাসায়নিক সার প্রয়োগ করে চাষীরা। যদিও ভারত এনপিকে ১০:২৬:২৬ বেশী ব্যাবহার করা হয়। তাই ওই সারের চাহিদা প্রচুর। আর ওই রাসায়নিক সার কিনতে গিয়ে চক্ষু চড়কগাছ চাষীদের। সমবায়ে সার নেই। খোলাবাজারের সারের দোকানের সদর দরজায় সার অমিল। পিছনের দরজায় চড়া দামে দেদার বিকোচ্ছে ভারত এনপিকে ১০:২৬:২৬ মতো রাসায়নিক সার। আবার কোথাও ম্যান ম্যাড সঙ্কট তৈরী করা হচ্ছে। রাজ্যের পুর্ব বর্ধমান, পশ্চিম বর্ধমান, হুগলি, বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর সহ বিস্তীর্ণ অংশে আলু লাগানোর মরশুমে রাসায়নিক সারের সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
অভিযোগ, রাসায়নিক সারের সঙ্কট ‘ম্যানমেড’। পিছনের দরজায় অবাধে চড়া দামে বিকোচ্ছে রাসায়নিক সার। রমরমিয়ে ‘কালোবাজারি’ চলছে বলে অভিযোগ। যেখানে ভারত এনপিকে ১০:২৬:২৬ মুদ্রিত দাম ১৪৭০ টাকা সেখানে তা বিক্রি হচ্ছে ১৮৫০ থেকে ২০০০ টাকায়। অতিরিক্ত দাম নিলেও কোন ‘রসিদ’ দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ। আলু লাগানোর মরশুম, তাই বাধ্য হয়েই কৃষিজীবি মানুষ ওই অতিরিক্ত দাম দিয়েই ওই রাসায়নিক সার কিনতে বাধ্য হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন দামোদর তীরবর্তী বাঁকুড়া মানাচরের চাষীদের।
তাদের অভিযোগ,” ভালো ফলনের জন্য আলু বীজ বসানোর আগে ভারত এনপিকে ১০:২৬:২৬ সার দেওয়া আবশ্যিক। কিন্তু, গুরুত্বপুর্ন ওই রাসায়নিক সারের কৃত্রিম সঙ্কট দেখাচ্ছে সার ব্যাবসায়ীরা। আবার একটু বেশী দাম দিলেই পিছনের দরজায় পর্যাপ্ত মিলছে ওই সার।” আর এই সার সঙ্কটে মাথায় হাত চাষীদের। তাই নিয়ে রীতিমতো শোরগোল পড়েছে রাজনৈতিক মহলে। তবে রাজ্যের ব্যার্থতা ও নজরদারিকে দুষছে বামফ্রন্ট ও বিজেপি। সিপিএমের কৃষক সভার রাজ্য সম্পাদক অমল হালদার বলেন,” বামফ্রন্টের সময় সমবায় মাধ্যমে রাসায়নিক সার বিক্রি হত। গরিব মানুষ ঋণ পেত। এখনকার সরকার সেসব সমবায় ভেঙে তছনছ করে দিয়েছে। সমবায়ের বদলে ব্যাবসায়ীদের মাধ্যমে সার বিক্রি হচ্ছে। ম্যানম্যড কৃত্রিম সঙ্কট তৈরী করা হয়েছে। তার জেরে কালোবাজারি বাড়ছে। গতবছর ভেজাল রাসায়নিক সার দিয়েছে। চাষজমিতে দেওয়ার পর ওই সার মাটির ঢেলার মত বসে ছিল। সারের কালোবাজারি রুখতে রাজ্য সরকার ব্যার্থ।”
কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী (রাষ্ট্র) সুভাষ সরকার বলেন,” রাজ্য সরকার উদাসীন। কোনরকম নজরদারি নেই। কৃত্রিম রাসায়নিক সারের সঙ্কট তৈরী করছে রাজ্যের তৃণমূল সরকার। যার ফলে সঙ্কটে পড়েছে চাষীরা।” তিনি আরও বলেন,” চাষীরা যাতে নাহ্য দামে সার পায় তার ব্যবস্থা রাজ্যকে করতে হবে।” যদিও এবিষয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের কেউ কোন মন্তব্য করতে চায়নি।