আগরতলা, ১১ অক্টোবর : রাজ্যের প্রতিটি ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার প্রতিচ্ছবি প্রতিফলিত হচ্ছে। স্বচ্ছ প্রশাসনের চিত্র আজ রাজ্যের মানুষ প্রত্যক্ষ করতে পারছেন। নাগরিকগণ বর্তমান সরকারের জনকল্যাণমুখী কর্মসূচিগুলিও অনুধাবন করতে পারছেন। আজ প্রজ্ঞাভবনে প্রতি ঘরে সুশাসন ২০ নিয়ে প্রস্তুতি সভায় মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডাঃ) মানিক সাহা একথা বলেন। তাছাড়াও এই সভায় মেরি মাটি মেরা দেশ অভিযানের সমাপ্তি ও রাজ্যে বিভিন্ন দপ্তরে ই-অফিস বাস্তবায়নের পর্যালোচনা করা হয়। সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সরকারের বিভিন্ন জনকল্যাণমুখী প্রকল্পগুলি সমাজের প্রত্যেকটি নাগরিকের কাছে পৌঁছে দিতে সরকারি কর্মচারিরাই আসল কারিগর। সবার মিলিত প্রয়াসের ফলেই রাজ্য সরকারের প্রকল্পগুলি সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে। রাজ্যের অধিকাংশ অফিস ই-অফিসের আওতায় চলে আসছে। এই ই-অফিস সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়িত হলে অফিসের সময় বাঁচানোর সাথে সাথে সরকারি খরচ বাঁচানোও সম্ভব হবে। পাশাপাশি স্বচ্ছতার সঙ্গে সরকারি কাগজপত্রের গোপনীয়তা রক্ষা করা আরও বেশি পরিমাণে সম্ভব হবে। কম সময়ে অধিক কাজ করা সম্ভব হবে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরাতে ইতিমধ্যেই ই-ক্যাবিনেট চালু করা হয়েছে। দেশের মধ্যে ই-ক্যাবিনেট রূপায়ণে চতুর্থ রাজ্য। তিনি বলেন, ত্রিপুরা আজ যে দ্রুততার সাথে ডিজিটাইলাইজেশনের দিকে এগোচ্ছে, আর বেশি দিন অপেক্ষা করতে হবে না যখন সম্পূর্ণ রাজ্য ডিজিটাইলাইজেশনের আওতায় চলে আসবে। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, যেদিন ত্রিপুরায় প্রথম স্মার্ট ট্রেনিং সেন্টার চালু করা হয় সেদিনই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি টাইট করে রাজ্যের এই ডিজিটাল কর্মসূচির সাফল্যের জন্য শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্য সরকারের উদ্যোগে প্রতি ঘরে সুশাসনের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হতে যাচ্ছে। রাজ্যের প্রান্তিক জনপদের মানুষের কাছে সরকারের জনকল্যাণমুখী প্রকল্পগুলি পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে প্রতি ঘরে সুশাসন অভিযান চালু করা হয়। সবার মিলিত প্রয়াসের ফলে প্রথম পর্যায়ের এই অভিযান সফলতা অর্জন করে। প্রথম পর্যায়ে এই অভিযান বাস্তবায়নে কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। এগুলিকে কাটিয়ে উঠে দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও সফলতার দিকে এগিয়ে যেতে হবে। সমাজের প্রতিটি মানুষের কাছে সরকারি প্রকল্পগুলির সুযোগ পৌঁছে দেওয়াই প্রধান লক্ষ্য হতে হবে।
সভায় মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, দেশাত্মবোধের ভাবনাকে জাগ্রত করতে এবং দেশের জন্য যারা জীবন বলিদান দিয়েছেন তাদের সম্মানার্থেই মেরি মাটি মেরা দেশ অভিযানের সূচনা হয়েছিল। দেশের প্রতিটি গ্রামস্তর থেকে মাটি সংগ্রহ করে সর্বশেষে দেশের রাজধানীতে অমৃত বাটিকা তৈরি করা হবে। রাজ্যস্তরেও এই অভিযান পালন করা হবে। দেশের প্রতিটি মানুষের মধ্যে দেশমাতৃকার প্রতি দেশপ্রেম গড়ার লক্ষ্যেই এই অভিযান কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই এর দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হবে। তিনি বলেন, সমাজের সকল মানুষকে এর আওতায় নিয়ে এলেই এই অভিযানের প্রকৃত সফলতা আসবে।
বৈঠকে তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের সচিব ড. পি কে চক্রবর্তী প্রতি ঘরে সুশাসন অভিযানের দ্বিতীয় পর্যায়ে রাজ্যে বাস্তবায়িত হতে যাওয়া এই অভিযানের বিভিন্ন উদ্যোগের বিষয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ জনকল্যাণমূলক প্রতিটি প্রকল্প ও পরিষেবা একেবারে গ্রাম পঞ্চায়েত বা এডিসি ভিলেজ থেকে শুরু করে ব্লক, শহর বা নগর উন্নয়ন সংস্থা, জেলা পর্যায় এবং পুর নিগমের প্রতিটি মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে চালু করা হয়েছে। তিনি বলেন, আগামী বছর ২১ জানুয়ারি পূর্ণরাজ্য দিবসের দিন এই অভিযানের রিপোর্ট প্রকাশ করা হবে। সচিব “মেরি মাটি মেরা দেশ’ দ্বিতীয় পর্যায়ের অভিযান কর্মসূচি সম্পর্কেও বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, আজাদি কা অমৃত মহোৎসবের সমাপ্তি উপলক্ষে এই অভিযান কর্মসূচি চালু করা হয়। যুবক যুবতীদের মধ্যে দেশপ্রেম জাগ্রত করতে এবং দেশের জন্য জীবন বলিদান দিয়েছেন তাদের স্মরণ করার জন্য এই অভিযান কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রথম পর্যায়ের অভিযান রাজ্যে সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে রাজ্যে ১২ থেকে ১৬ অক্টোবর ২০২৩ তারিখ পর্যন্ত এই অভিযান কর্মসূচি চলবে। ১৭ অক্টোবর প্রতিটি ব্লকে আনুষ্ঠানিকভাবে সমাপ্তি অনুষ্ঠান সম্পন্ন হবে। রাজ্য পর্যায়ের অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে ১৮ অক্টোবর ২০২৩ সচিবালয়ের নিকটে স্ক্র্যাপ গার্ডেনে।
বৈঠকে তথ্য ও প্রযুক্তি দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে সচিত্র প্রতিবেদনের মাধ্যমে রাজ্যে বিভিন্ন দপ্তরে ই অফিস বাস্তবায়নের সুফল নিয়ে আলোচনা করেন। বৈঠকে স্বাগত বক্তব্য রাখেন তথ্য ও প্রযুক্তি দপ্তরের প্রধান সচিব পুনীত আগরওয়াল। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন মুখ্যসচিব জে কে সিনহা। বৈঠকে এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের বিভিন্ন দপ্তরের সচিব, অধিকর্তা এবং উচ্চপদস্থ আধিকারিকগণ। উল্লেখ্য, অনুষ্ঠানে রাজ্যের বিভিন্ন দপ্তরে ১০০ শতাংশ ই-ফাইলিং বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অধিকর্তাদের শংসাপত্র প্রদান করা হয়। মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডাঃ) মানিক সাহা শংসাপত্র তাদের হাতে তুলে দেন।