অসম-মেঘালয় আন্তঃরাজ্য সীমান্তবর্তী ১২-র মধ্যে ছয়টি এলাকার বিবাদ নিস্পত্তি হয়েছে, বিধানসভায় মন্ত্ৰী অতুল

গুয়াহাটি, ১৩ সেপ্টেম্বর (হি.স.) : অসম এবং প্রতিবেশী রাজ্য মেঘালয়ের ১২টি এলাকায় সীমা বিবাদ ছিল। এগুলি তারাবাড়ি, গিজাং, হাহিম, বকলাপাড়া, খানাপাড়া-পিলিংকাটা, রাতাছড়া, লাম্পি, দেশডুমরিয়া, বরদুয়ার, নংওয়া মউতামুড় (গড়ভাঙা), ব্লক ১ ও ব্লক ২ এবং পিচিয়ার খান্দুলি। এগুলির মধ্যে ছয়টি সীমান্ত এলাকার বিবাদ নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। আজ বুধবার অসম বিধানসভার শরৎকালীন অধিবেশনের তৃতীয় দিনের কার্যক্রমণিকায় প্ৰশ্নোত্তর পর্বে বিরোধী দলনেতা কংগ্ৰেসের দেবব্ৰত শইকিয়ার অসম এবং প্রতিবেশী রাজ্যের সীমা বিবাদ সম্পর্কিত এক প্ৰশ্নের জবাবে এ তথ্য দিয়েছেন সীমান্ত সুরক্ষা ও উন্নয়ন দফতরের মন্ত্ৰী অতুল বরা।

মন্ত্ৰী অতুল বরা জানান, প্রথম পর্যায়ে এই ১২টি এলাকার ছয়টি অঞ্চলের জন্য তিনটি করে আঞ্চলিক কমিটি গঠন করে উভয় রাজ্যের মধ্যে পারস্পরিক আঞ্চলিক কমিটিগুলো সীমান্ত এলাকাগুলো যৌথভাবে পরিদৰ্শনের পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেছে। উভয় পক্ষ আলোচনা ছাড়াও কমিটিগুলির সঙ্গে পরস্পরিক মতবিনিময়ের মাধ্যমে আন্তঃরাজ্য সীমা বিবাদ নিস্পত্তি করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

সে অনুয়ায়ী মেঘালয়ের দাবিমতো ১২টি অঞ্চলের ওপর ২০২২ সালের ২৯ মার্চ সমঝোতা চুক্তি হয়। মেঘালয়ের দাবিকৃত ১২টি অঞ্চলের প্ৰথম পৰ্যায়ে তারাবাড়ি, গিজাং, হাহিম, বকলাপাড়া, খানাপাড়া-পিলিংকাটা এবং রাতাছড়া, এই ছয়টি এলাকার সীমা বিবাদ নিষ্পত্তি করা হয়েছে। বাকি ছয়টি বিবদমান অঞ্চলের জন্যও তিনটি আঞ্চলিক কমিটি গঠন করা হয়েছে। পারম্পরিক আলোচনা করে এগুলোরও সমস্যা সমাধান করতে পর্যায়ক্রমে বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলেও সদনকে জানান মন্ত্ৰী বরা।

মন্ত্ৰী অতুল বরা বলেন, অসমের সঙ্গে প্রতিবেশী রাজ্যের সীমা বিবাদের ক্ষেত্ৰে অসম সরকার কেন্দ্ৰীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্ৰালয়ের পরামর্শ অনুয়ায়ী মেঘালয় এবং অরুণাচল প্ৰদেশ সরকারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা চুক্তির মাধ্যমে বিবাদ নিষ্পত্তি করতে আঞ্চলিক কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটিগুলি সংশ্লিষ্ট আন্তঃরাজ্যসমূহের বিবাদ নিষ্পত্তি করতে ব্যবস্থা নিচ্ছে।

অতুল বরা বলেন, অসম-অরুণাচলের সীমা বিবাদ নিষ্পত্তি করতে উভয় রাজ্য সরকার ১২টি করে আঞ্চলিক কমিটি গঠন করেছে। দুই রাজ্যের পারস্পরিক আঞ্চলিক কমিটিগুলি সীমান্ত এলাকাসমূহে যৌথভাবে পরিদৰ্শন এবং স্থানীয়দের সঙ্গে আলোচনা ও মতবিনিময়ের মাধ্যমে আন্তঃরাজ্য সীমা বিবাদ নিষ্পত্তি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী অরুণাচল প্ৰদেশের দাবিকৃত ১২৩টি গ্রামের ওপর সমঝোতা চুক্তি করা হয়েছে। এই সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী অসম-অরুণাচল প্রদেশের দাবি অনুসারে সম্পূৰ্ণ সীমার মোট ১২৩টি গ্রামের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৭১টি গ্রামের সীমা বিবাদ নিষ্পত্তি করা হয়েছে।

তিনি জানান, অসম-অরুণাচলের সম্পূৰ্ণ সীমার অরুণাচল প্ৰদেশের দাবিকৃত সৰ্বমোট ১২৩টি গ্রামের বাকি ৫২টি গ্রামের সীমা নির্ধারণের প্ৰক্ৰিয়া চলছে। আঞ্চলিক কমিটিগুলির সঙ্গে চলতি ২০২৩ সালের ২০ এপ্রিল স্বাক্ষরিত সমঝোতা চুক্তির পর ছয় মাসের মধ্যে সীমা বিবাদ নিষ্পত্তি করতে বলা হয়েছে বলেও জানান মন্ত্ৰী বরা।

অতুল বরা যোগ করেন, অসম-অরুণাচল প্রদেশের সীমা বিবাদ নিষ্পত্তি করতে যৌথ আলোচনার মাধ্যমে উভয় রাজ্য সরকার চলতি ২০২৩ সালের ২০ আগস্ট নয়াদিল্লিতে কেন্দ্ৰীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্ৰীর উপস্থিতিতে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত করেছে। সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী, অরুণাচল প্ৰদেশের দাবিকৃত ১২৩টি গ্রামের মধ্যে ৭১টি গ্রামের সীমা বিবাদ নিষ্পত্তি করা হয়েছে। বাকি ৫২টি গ্রামের সীমা নির্ধারণ প্ৰক্ৰিয়া এখনও চলছে এবং আঞ্চলিক কমিটিগুলির সঙ্গে চলতি বছরের ২০ এপ্রিল স্বাক্ষরিত চুক্তির দিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে সীমা বিবাদ নিষ্পত্তি করতে বলা হয়েছে।

মন্ত্ৰী জানান, যেহেতু অরুণাচল প্ৰদেশের দাবিকৃত গ্রামগুলির সবটাই আন্তঃরাজ্য সীমান্তঘেঁষা, তাই আংশিক ভাবে জেলাগুলি সম্পর্কিত জট নিষ্পত্তি হয়েছে। এখান পর্যন্ত ওদালগুড়, শোণিতপুর, বিশ্বনাথ (একাংশ), লখিমপুর (অংশ), ধেমাজি (অংশ), তিনসুকিয়া (অংশ), ডিব্ৰুগড় এবং চড়াইদেও (অংশ)-এর নিষ্পত্তি হয়েছে।

এদিকে অসম সরকারের সপক্ষে বাউন্ডারি কমিশন, উচ্চতম ন্যায়ালয়ের রায়গুলির বিপরীতে এখন নতুন করে কোনেও অঞ্চল প্রতিবেশী রাজ্য অরুণাচল প্ৰদেশ দাবি করেনি। সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ীই সীমা স্থির করা হচ্ছে। তাছাড়া সীমান্তবৰ্তী অঞ্চলসমূহের উন্নয়নে উন্নয়নমূলক তহবিল থেকে বিধায়ক তহবিলের ব্যবস্থা এখনও হাতে নেওয়া হয়নি বলে বিধানসভায় জানান সীমান্ত সুরক্ষা ও উন্নয়ন দফতরের মন্ত্ৰী অতুল বরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *