ডিলিমিটেশনের বিরুদ্ধে বরাক জুড়ে ধারা আন্দোলন, সিদ্ধান্ত নিতে ২০ আগস্ট শিলচরে সভা

শিলচর (অসম), ১৩ আগস্ট (হি.স.) : অসমের বিধানসভা এবং সংসদীয় নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণে নির্বাচন কমিশনের চূড়ান্ত বিজ্ঞপ্তিকে অযৌক্তিক, অসাংবিধানিক বলে আখ্যা দিয়ে এর বিরুদ্ধে আগামী ২০ আগস্ট বরাক উপত্যকার তিন জেলার আন্দোলনকারী সব কয়টি রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংস্থা ও ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে এক সভার আহ্বান জানিয়েছে নাগরিক অধিকার রক্ষা সমন্বয় কমিটি, অসম-এর কেন্দ্রীয় কমিটি। অনুষ্ঠেয় ওই সভায় আলোচনার মাধ্যমে উপত্যকাজুড়ে কালো দিবস, হরতাল ইত্যাদি পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

আজ রবিবার নাগরিক অধিকার রক্ষা সমন্বয় কমিটি, অসম-এর কেন্দ্রীয় কমিটি পদাধিকারীরা শিলচরের ট্রাংকরোডে অবস্থিত সিটিভিওএ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ খবর জানানো হয়েছে। সাংবাদিক সম্মেলনে সংগঠনের কো-চেয়ারম্যান সাধন পুরকায়স্হ, সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে কিশোরকুমার ভট্টাচার্য, অরুণাংশু ভট্টাচার্য, নেকিব হুসেন চৌধুরী প্রমুখ বলেন, রাজ্যের উগ্র-সাম্প্রদায়িক ও উগ্র-প্রাদেশিকতাবাদী শক্তির কুচক্রান্তকে বাস্তবায়িত করতেই অসম সরকারের নিৰ্দেশে নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ একতরফাভাবে চূড়ান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। বরাকের দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিধানসভা আসন কমিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে উপত্যকার সব কয়টি সংগঠনের প্রতিনিধিদের আপত্তি জানানো সত্ত্বেও তাতে বিন্দুমাত্র কর্ণপাত করেনি নির্বাচন কমিশন।

তাঁরা বলেন, অসমের মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচন কমিশনের খসড়া প্রকাশের পর থেকেই তথাকথিত খিলঞ্জিয়ার স্বার্থে তা তৈরি হয়েছে বলে যে প্রচার চালাচ্ছেন তাতে এটা পরিষ্কার, রাজ্যের ভাষিক সংখ্যালঘুদের প্ৰতিনিধিত্ব কমিয়ে দিতেই এই চক্রান্ত রচিত হয়েছে। সংগঠনের সহ-সভাপতি সিহাব উদ্দিন আহমেদ, সুব্রতচন্দ্র নাথ, দীপঙ্কর চন্দ প্রমুখ বলেন, উপত্যকার দুটি বিধানসভা আসন হ্রাসের ফলে বরাকের জনগণের শুধু সাংবিধানিক অধিকার খর্ব হয়েছে তা নয়, এলাকা উন্নয়নের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণও সংকুচিত হবে।

সংগঠনের সম্পাদক হিল্লোল ভট্টাচার্য, আইনজীবী আব্দুল হাই লস্কর, আইনজীবী আলি রাজা ওসমানি বলেন, বরাক উপত্যকার জনগণের প্রতি অসম সরকারের বৈষম্যের অন্যতম নজির হয়ে থাকবে ভারতের নির্বাচন কমিশনের বিধানসভা ও লোকসভার সীমানা পুনর্নির্ধারণের চূড়ান্ত বিজ্ঞপ্তি।

তাঁরা বলেন, বরাক উপত্যকার জনগণের মাতৃভাষার অধিকার কেড়ে নেওয়া, অর্থনৈতিক উন্নয়নের ন্যূনতম সুযোগ কেড়ে নিতে চিনি কল, কাগজ কল, সুপারি ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া ও সরকারি কার্যালয়ের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগে স্থানীয়দের সুযোগ না দিয়ে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা থেকে নিয়োগ প্রদান এবং নাগরিকত্ব ও সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নিতে প্রথমে এনআরসি এবং বর্তমানে ডিলিমিটেশন সহ একের পর এক আক্রমণ করা হচ্ছে।

সংগঠনের সম্পাদক রাজেশকুমার সিংহ, গোপাল পাল এবং সংগঠনের কাছাড় জেলা কমিটির সম্পাদক মধুসূদন কর বলেন, এই আক্রমণকে প্রতিহত করতে বরাক উপত্যকার তিন জেলার নাগরিকদের জাতি, ধর্ম, ভাষা, বর্ণ নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

বক্তারা বলেন, ডিলিমিটেশনের বিজ্ঞপ্তি জারি শুধু একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, এটা বরাক উপত্যকার জনগণের সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নেওয়ার ধারাবাহিক ষড়যন্ত্র। তাই একে প্রতিহত করতে প্রয়োজনে সুপ্রিম কোর্টে যে মামলা রুজু হয়েছে তাতে যোগ দিয়ে ডিলিমিটেশনের বিজ্ঞপ্তি জারির পেছনে যে গভীর চক্রান্ত রয়েছে তা তথ্য সহকারে তুলে ধরা হবে। সাংবাদিক সম্মেলনে এছাড়া উপস্থিত ছিলেন নিশা শর্মা, শাহ আলম খান, মিন্টু শীল, বিজিতকুমার সিংহ প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *