নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৬ জুলাই৷৷ ইচ্ছা শক্তির কাছে স্বপ্ণ পূরণ করা নিশ্চিত সম্ভব৷ ইচ্ছা থাকলে অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়৷ কোন বাধাই স্বপ্ণ পূরণ ঠেকাতে পারে না৷ এমনি একটি ঘটনা ধলাই জেলার প্রত্যন্ত গন্ডাছড়া মহকুমার নারায়নপুর এডিসি ভিলেজের মগ পাড়ার বাসিন্দা তথা অটোচালক মঙ্গল মগের পরিবারে৷ তার চার মেয়ে এক ছেলে সহ তাদের সাতজনের পরিবার৷ ছোট মেয়ে সোনা উং মগ ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদ প্রচলিত ২০২৩ ইং সনের মাধ্যমিক পরীক্ষায় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ স্মৃতি বিদ্যাভবন দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয় থেকে ৩৬২ নম্বর পেয়ে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়৷ এরপর রাজস্থানের কোটায় কোচিংয়ে ভর্তির জন্য গত জুন মাসে সুপার থার্টি পরীক্ষায় বসে৷ সুপার থার্টি পরীক্ষায় মহকুমা এলাকার ১৪ জন পরীক্ষার্থীদের মধ্যে একমাত্র সে চান্স পায়৷ এই খবরে তার সুকলের শিক্ষক-শিক্ষিকা, ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে আত্মীয়-স্বজন, এলাকাবাসীদের মধ্যে আনন্দ উল্লাস ছড়িয়ে পড়ে৷ মেয়ের এই ভালো ফলাফলে মা নিউ চাং মগ চোখের জল ধরে রাখতে পারেনি৷ তিনি জানান তার এক মেয়ে আগরতলায় অংক অনার্স নিয়ে পড়াশোনা করছে, আর এক মেয়ে নবোদয়, একমাত্র ছেলে গন্ডাছড়া সেন্ট আর্নল্ড ইংলিশ মিডিয়াম সুকলে পড়াশোনা করছে৷ তাদের পড়াশোনার খরচ চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে৷ এখন আবার ছোট মেয়েকে কিভাবে রাজস্থান পাঠাবে তা ভেবে পাচ্ছে না৷ যদিও সরকারি খরচে সেখানে পড়াশোনা করবে৷ কিন্তু তার আসা যাওয়ার খরচ কিভাবে জোগাড় করবে এই নিয়ে তার মা বাবা চিন্তায় আছেন৷ তার বাবা মঙ্গল মগ একজন অটো চালক৷ অটো চালিয়ে যে টাকা রোজগার করে তা দিয়ে কোনক্রমে সংসার চলে৷ এর উপর ছেলেমেয়েদের পড়াশুনার খরচ জোগাড় করা খুবই কষ্টকর হয়ে পড়ে৷ এমত অবস্থায় বাড়ির জায়গার কাগজপত্র দিয়ে লোনের জন্য ব্যাংকের দরজায় দরজায় ঘুরেও লোন পাচ্ছে না৷ ব্যাংক থেকে স্পষ্ট বলে দেওয়া হয় সরকারি কর্মচারীর গ্যারান্টার ছাড়া লোন দেওয়া যাবে না৷ হতদরিদ্র জনজাতি এই পরিবারটি একপ্রকার অসহায় হয়ে পড়ে৷ কোথায় গেলে যে লোন পাবে তা ভেবে পাচ্ছেন না৷ মা নিউ চাং মগ আরো জানান কিভাবে যে তাদের সংসার চলে কেউ জানে না, একমাত্র ভগবান জানে৷ এত অভাবের মাঝেও মা তার মেধাবী সন্তানদের সাহস জুগিয়ে যাচ্ছেন৷ আর বলছেন তোমরা ভাল করে পড়াশুনা কর, আমি রক্ত বেঁচে হলেও পড়াশোনার খরচ চালিয়ে যাব৷ এখন দেখার এই অসহায় জনজাতি পরিবারের মেধাবী ছেলে মেয়েদের উচ্চ শিক্ষার জন্য লোনের ব্যবস্থা হয় কিনা তার দিকে তাকিয়ে আছেন গোটা পরিবারের লোকজন৷
2023-07-16