ত্রিপুরায় গত পাঁচ বছরে ৬৭৬৬ জন শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে, এখনো ঘাটতি ৫১৫৫ জন শিক্ষকের, বিধানসভায় জানালেন মুখ্যমন্ত্রী

আগরতলা, ১২ জুলাই (হি.স.) : ত্রিপুরায় গত পাঁচ বছরে ৬৭৬৬ জন শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে। এরপরও ৫১৫৫ জন শিক্ষকের ঘাটতি রয়েছে। ত্রিপুরা বিধানসভায় বাজেট অধিবেশনের তৃতীয় দিনে বিরোধী দলনেতা অনিমেষ দেববর্মার দৃষ্টি আকর্ষণী নোটিশের জবাবে ওই তথ্য দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক (ডা.) মানিক সাহা। 

আজ বিধানসভায় প্রশ্নোত্তর পর্বে শিক্ষা সংক্রান্ত একাধিক বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। বিরোধীরা শিক্ষক স্বল্পতা নিয়ে ত্রিপুরা সরকারকে চেপে ধরার আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। এমনকি, শিক্ষার অধিকার আইন এবং নতুন শিক্ষা নীতি নিয়ে বাকবিতণ্ডা হয়েছে। এমনকি চাকুরিচ্যুত ১০৩২৩ শিক্ষকদের নিয়েও মুখ্যমন্ত্রীকে বিরোধীরা নিশানা করার জবাব তিনি দিয়েছেন। 

এদিন দৃষ্টি আকর্ষণী নোটিশের জবাবে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরায় গুণগত শিক্ষা প্রসারের ক্ষেত্রে শিক্ষার পরিকাঠামো এবং শিক্ষক এই দুইটি বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন। তিনি স্বীকার করেছেন, বর্তমানে ত্রিপুরায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষকের স্বল্পতা রয়েছে। তবে, তার জন্য নির্দিষ্ট কারণের ব্যাখ্যাও তিনি দিয়েছেন। তাঁর কথায়, নিয়মিতভাবেই প্রতি মাসে কিছু সংখ্যক শিক্ষক অবসর গ্রহণ করেন। তাছাড়া সুপ্রীম কোর্টের আদেশ মূলে ২০২০ সালে ১০,৩২৩ জন শিক্ষকের নিযুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়া শিক্ষকের স্বল্পতার পেছনে আরও একটি কারণ।

এদিন মুখ্যমন্ত্রী শিক্ষা দফতরের স্কুলগুলিতে বিভিন্নস্তরে শিক্ষক ঘাটতির তথ্য দিয়েছেন। তিনি বলেন, অস্নাতক শিক্ষক ১৬১৫ জন, স্নাতক শিক্ষক ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত ১৬৪৩ জন, স্নাতক শিক্ষক নবম থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত ১২৩৯ জন, বিষয় শিক্ষক ৫৪৬ জন এবং স্পেশাল এডুকেটর ১১২ জন মোট ৫১৫৫ জন শিক্ষকের ঘাটতি রয়েছে। 

তবে চলমান প্রক্রিয়া হিসাবে ত্রিপুরা সরকার প্রতি বছর নতুন শিক্ষক নিয়োগ করেছে, দাবি করেন তিনি। তাঁর দাবি, টিআরবিটি নিয়মিতভাবে টেট পরীক্ষা নিচ্ছে এবং যোগ্য প্রার্থীদের বাছাইয়ের মাধ্যমে দপ্তর অস্নাতক এবং স্নাতক শিক্ষক নিয়োগ করছে। তাছাড়া মাধ্যমিক স্তরের স্নাতক শিক্ষক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরে বিষয় শিক্ষকের জন্য নিয়মিত টিআরবিটি-র মাধ্যমে চাকুরির পরীক্ষা গ্রহণ করা হচ্ছে। সাথে তিনি যোগ করেন, গতবছর প্রথমবারের মত স্পেশাল এডুকেটর নিয়োগ করা হয়েছে। এসব পদ্ধতির মাধ্যমে বিগত ৫ বছরে বিভিন্ন স্তরে রাজ্যে বেশ কিছু সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে।

সেই তথ্য তুলে ধরে মুখ্যমন্ত্রী জানান, অস্নাতক শিক্ষক ১০৬২ জন, স্নাতক শিক্ষক ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত ৩৭০১ জন, স্নাতক শিক্ষক নবম থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত ১৪৭১ জন, বিষয় শিক্ষক ৪৪৪ জন এবং স্পেশাল এডুকেটর ৮৮ জন মোট ৬৭৬৬ জনকে নিয়োগ করা হয়েছে।

তাঁর কথায়, সরকারের আর্থিক সংস্থানের উপর নির্ভর করে প্রত্যেক বছর শিক্ষক নিয়োগ করা হচ্ছে। প্রত্যেক বছর শিক্ষক নিয়োগের ফলে আমাদের রাজ্যে বর্তমানে ত্রিপুরা সরকার পরিচালিত বিদ্যালয়গুলির মধ্যে একজন শিক্ষক দিয়ে পরিচালিত বিদ্যালয় এখন আর নেই। তবে বিভিন্ন স্তরে শিক্ষকের শূন্যপদে নিয়োগের এই প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

সাথে তিনি যোগ করেন, মাধ্যমিক স্তরে ২৩০ টি পদের জন্য টিআরবিটি স্নাতক শিক্ষক নবম থেকে দশম শ্রেণীর জন্য নিয়োগের পরীক্ষা গ্রহণ করেছে। কিন্তু ২৩০ টি পদের সংরক্ষণের উপর একটি মামলার রায়ে প্রচলিত সংরক্ষণ ব্যবস্থার পরিবর্তনের সিদ্ধান্তের ফলে এব্যপারে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়নি। 

তিনি জানান, উচ্চ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হবে ত্রিপুরা সরকার। তিনি বলেন, ধারাবাহিক নিয়োগ প্রক্রিয়া গ্রহণ করার মাধ্যমে আশা করা যায় যে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে শিক্ষকের শূন্যপদের সংখ্যা অনেকটাই হ্রাস করা সম্ভব হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *