শ্বশুরবাড়িতে নির্যাতন, করিমগঞ্জে মায়ের বাড়ি এসে গলায় ওড়না জড়িয়ে আত্মঘাতী গৃহবধূ যুবতী

করিমগঞ্জ (অসম), ৮ জুলাই (হি.স.) : শ্বশুরবাড়ির নির্যাতন সহ্য করতে পারেননি উত্তর করিমগঞ্জের সুতারকান্দি কুরিখালা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাধীন ডিমপুরের এক মেয়ে। তাই বাবার বাড়ি এসে গলায় ওড়না জড়িয়ে আত্মহত্যা করেছেন বিবাহিতা যুবতী। অভিযুক্তের কাঠগড়ায় প্রবাসী স্বামী ও শাশুড়ি।

জানা গেছে, জড়েরবাজারের পার্শ্ববর্তী ডিমপুর গ্রামের নজমা বেগমের মেয়ে বছর ২২-এর সুলতানা বেগমের বিয়ে হয়েছিল উত্তর করিমগঞ্জের দক্ষিণ মানিকোণায়। ধর্মীয় রীতিনীতি অনুযায়ী দু-বছর আগে দক্ষিণ মানিকোণার আব্বাস আলির সঙ্গে বিয়ে হয়। কিন্তু বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই স্বামী আব্বাস আলি ও তাঁর মা-বোনরা মিলে সুলতানার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করেন। সুলতানার বাবা হুসেন আহমেদ জীবিত থাকলেও তাঁর মায়ের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই, অনেক আগেই তাঁর মা-বাবার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। যার ফলে সুলতানা ও তাঁর ছোট্ট বোনকে নিয়ে মা নজমা বেগম ডিমপুরে তার বাবার বাড়িতে আলাদা করে স্থায়ীভাবে বসবাস করতেন। পাড়া প্রতিবেশীদের ঘরে কাজ করে দুই মেয়েকে বড় করেছেন দরিদ্র নজমা বেগম। যার দরুন মেয়ে শ্বশুরবাড়িতে অত্যাচারের শিকার হলেও কোনও আইনি সহায়তা নিতে পারেননি তিনি। আট থেকে দশবার গ্রামীণ সালিশি সভা ডেকে মেয়েকে স্বামীর ঘরে খাওয়ানোর চেষ্টা করছিলেন, জানান মৃত যুবতীর মা নজমা বেগম।

কিন্তু পরবর্তীতে মেয়ের স্বামী আব্বাস আলি কর্মসূত্রে বেঙ্গালুরু চলে যায়। আর এদিকে মেয়ের উপর শাশুড়ি ধারাবাহিকভাবে মারধর ও নির্যাতন শুরু করেন। ফোনে স্বামী আব্বাস আলিও মানসিকভাবে নির্যাতন এবং গালিগালাজ করতে থাকে, অভিযোগ মেয়ের মা নজমা বেগমের।
এর জেরেই এক সময় মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে মেয়ে তার মায়ের কাছে আসতে বাধ্য হয়। দারিদ্র্যের জন্য মাও তেমন কোনও পদক্ষেপ নিতে পারেননি। শেষমেশ গতকাল রাতে স্বামী আব্বাস আলির সঙ্গে ফোনে ঝগড়াঝাটি হয়। সে নাকি অনেক গালিগালাজ করেছে বউ সুলতানাকে। আর এর জেরে আজ শনিবার সকালে ঘরে একা থাকার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি।

আজ সকালে নজমা বেগম পার্শ্ববর্তী এক বাড়িতে কাজের জন্য গিয়েছিলেন। তাঁর ছোট মেয়েও অপর এক বাড়িতে কাজে ছিল। ছোট্ট ঘরে একা ছিল মেয়ে সুলতানা। আর একাকিত্বের সুযোগকে হাতিয়ার করে দরজা বন্ধ করে ঘরের চালের বাঁশের এক চৌকাঠায় ওড়না বেঁধে তা দিয়ে গলায় ফাঁস জড়িয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি।
প্রতিবেশীর ঘরে কাজ শেষ করে তাঁর ছোট বোন ঘরে আসলে দরজা বন্ধ পায়। বার-কয়েক সুলতানাকে ডাকাডাকি করে কোনও সাড়াশব্দ পায়নি। তাই কাঁচা ঘরের বাঁশের দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে ছোট বোন। ঢুকেই দেখতে পায় গলায় ওড়না জড়িয়ে ফাঁস লাগিয়ে ঝুলে রয়েছে তাঁর বোন‌। তার কান্না ও চিৎকার শুনে প্রতিবেশিরা জড়ো হয়ে পুলিশকে খবর দেন। সদর পুলিশ গিয়ে ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য করিমগঞ্জ অসামরিক হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *