BRAKING NEWS

তুমুল গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব! প্রাকৃতিক দুর্যোগের জের, মানকরে অধিবেশন মঞ্চেই উঠলেন না অভিষেক

দুর্গাপুর, ১৬ মে (হি. স.) বুথ সভাপতি থেকে অঞ্চল সভাপতি। উধাও ঘোষিত নামের তালিকা। প্রার্থী পদে গরমিলের অভিযোগ। আর তাই নিয়ে নব জোয়ার ঢোকার আগেই তুমুল গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব শুরু হল তৃণমূল কংগ্রেসের। এমনকি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আসার আগে দুই গোষ্ঠীর দ্বন্দ্বে উত্তাল হয়ে উঠল অধিবেশনস্থলের বাইরে। আবার আউশগ্রামের বিধায়কের প্যাড নকল করারও অভিযোগ ওঠে। সব মিলিয়ে অনেকে ভোটাভুটিতে বুথ মুখোই হলেন না বহু তৃণমূল কর্মী। তার ওপর ঝড়বৃষ্টির জেরে কর্মীরা পৌঁছাতে না পারায় অধিবেশনস্থলের চেয়ার কার্যত ফাঁকা পড়ে রইল। নব জোয়ারে এসেও মঞ্চেই উঠলেন না তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার এমনই ঘটনাটি ঘটেছে মানকরে তৃণমূলের নব জোয়ার অধিবেশনে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে সুষ্ঠভাবে ভোট দিয়ে কর্মীরা বাড়ী ফিরতে যাতে সমস্যা না হয়, সে কারনে মঞ্চে উঠলেন না বলে সাফাই দিয়েছে তৃণমূল নেতৃত্ব।

প্রসঙ্গত, দরজায় কড়া নাড়ছে পঞ্চায়েত নির্বাচন। তার আগে রাজ্যে শিক্ষাক্ষেত্র সহ নানান দিকে আষ্টেপিষ্টে দুর্নীতিতে জড়িয়ে তৃণমূল। তার ওপর কয়লা, গরু পাচারে বিদ্ধ শাসকদলের একাধিক নেতা। আর ওই ইস্যুকে হাতিয়ার করেছে গেরুয়া শিবির। পাল্লা দিয়ে দুর্নীতিকে ইস্যু করে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বামশিবির। তারওপর গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জেরবার। দলীয় কর্মসূচীতে বারংবার প্রকাশ্যে এসেছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে
সংগঠনকে মজবুত রাখতে আসরে নেমেছে তৃণমূল সাংসদ তথা তৃণমূলে সেকেন্ড ইন্ কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। গত কয়েকদিন ধরে জেলায় জেলায় নব জোয়ার কর্মসূচী শুরু হয়েছে। বাতানুকুল বিশেষ গাড়ীতে চলছে তাঁর জেলা সফর। জেলা সফরের মধ্যেই কোথায় জনসভা, কোথায় শোভাযাত্রা আবার কোথায় অধিবেশন করছেন। তার সঙ্গে এলাকায় নিশিযাপনও করছেন। আর এই কর্মসূচীর মাধ্যমে আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে স্বচ্ছ ভাবমুর্তির প্রার্থী বাছাই কাজ চলছে। তার জন্য শিবির করে দলীয় প্রার্থী নির্বাচন চলছে। সোমাবার বুদবুদের মানকরে ছিল নব জোয়ারের অধিবেশন। মানকর ফুটবল ময়দানে বিশেষ শিবিরে ছিল প্রার্থী নির্বাচনের ভোটাভুটি। এদিন গলসী-১ ও ২নং ব্লক, আউশগ্রাম ১ ও ২ নং ব্লক, মঙ্গলকোট, ভাতার ব্লকের ভোটাভুটি ছিল। ভোটাভুটির আগে চরম গোষ্ঠীকোন্দল প্রকাশ্যে চলে আসে তৃণমূলের। গলসী -১ নং ব্লকে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি জনার্দ্দন চটোপাধ্যায় ও প্রাক্তন ব্লক সভাপতি জাকির হোসেনের দ্বন্দ্ব আবারও প্রকাশ্যে চলে আসে। এদিন বিকাল নাগাদ দলের ভোটারদের রেজিষ্ট্রেশন শুরু হয়। ভোটাভুটির শুরুতেই অভিযোগ ওঠে, প্রার্থীপদে সব ব্লক সভাপতি অনুগামীদের নাম। ঠাঁই পায়নি অপর গোষ্ঠীর অনুগামীদের প্রার্থী। আর তাতেই ক্ষোভে ফেটে পড়ে তৃণমূলের নীচুতলার কর্মীদের একাংশ। শুধু তাই নয়। সন্ধ্যা নাগাদ দুই গোষ্ঠীর মধ্যে তুমুল বচসা শুরু হয়। একটা সময় উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। মারপিট হওয়ার পর্যায়ে চলে আসে। তবে পুলিশের তৎপরতায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। মানকর পঞ্চায়েতের ১ নং গ্রাম সাংসদের সদস্য রাজীব খান। নবজোয়ার কর্মসূচীকে সফল করতে গত ৩ দিন ধরে ময়দানে নেমে কাজ করে চলেছে। একরাশ ক্ষোভ উগরে জানান,” গত লোকসভা, বিধানসভার নিরিখে আমার সাংসদে দলকে বিপুল ভোটে লিড দিয়েছি। বিধানসভা নির্বাচনে যারা মসজিদে বিজেপির পতাকা বাঁধতে এসেছিল, তাদের করজোড়ে পতাকা বাঁধতে নিষেধ করেছিলাম। আজ ওই সব বিজেপির পতাকা ধারীরা দলের ভোটে অংশগ্রহনে অধিকার পেয়েছে। আমাদের ভেতরে ঢোকার কোন গুরুত্ব পেলাম না। এর থেকে লজ্জার কিছু নেই।” শুধু তাই নয়। আউশগ্রাম-২ ব্লকে বিধায়কের ভোটের প্যাড জালের অভিযোগ ওঠে। তার জেরে ভোটাভুটিতে অংশ না নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। যদিও, সে বিষয়ে আউশগ্রামের বিধায়ক খোলসা করে না বললেও, তিনি সাফাই দিয়ে বলেন,” অভ্যন্তরীন ব্যাপার। যা কিছু ঘটনা ঘটেছে দলকে জানিয়েছি।” তবে এদিন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মঞ্চে না ওঠায়, আগত কর্মীরা কিছুটা হতাশ হয়ে পড়েন। অশোক ভট্টাচার্য্য গলসী-১ নং ব্লকের চাকতেঁতুল পঞ্চায়েতের প্রধান। তিনি বলেন,” দলের যুবরাজ কর্মীদের কি বার্তা দেয়। আশাই ছিলাম, ওনার বার্তা গ্রামে ফিরে দলীয় কর্মীদের শোনাবো। সেটা শোনার জন্য এসেছিলাম। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারনে মঞ্চে উঠলেন না। কিছুটা হতাশ হলাম।” যদিও, পঞ্চাায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার বলেন,” দলে অনেক অবর্জনা এসেছে। এসব নজরে পড়ছে। নেতৃত্ব অভিমব সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গনতন্ত্রকে আরও বেশী শক্তিশালি করার জন্য, সাধারন মানুষ, বুথস্তরের কর্মীর মতামত নিয়ে প্রার্থী নির্বাচন করা হচ্ছে।” আউশগ্রামের প্যাড নকল প্রসঙ্গে বলেন,” এধরনের অন্যায় হয়ে থাকলে, আবারও নতুন করে ভোট হবে। এরকম অভিযোগের তদন্ত বর্ষিয়ান নেতাকে দিয়ে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছে নেতৃত্ব।” অভিষেকের মঞ্চে না ওঠা প্রসঙ্গে তিনি বলেন,” বৃষ্টিতে বহু কর্মী ভিজে গেছে। ভেজা জামা কাপড়ে ছিলেন। ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন কর্মীরা। তাই কর্মীদের কথা চিন্তাভাবনা করে আর মঞ্চে আসেননি।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *