বেআইনি হস্তক্ষেপ ক্রীড়া দপ্তরের!
বিশেষ প্রতিনিধি।। ফের একই ভুল! ত্রিপুরা ক্রীড়া পর্ষদে আবারও বেআইনি হস্তক্ষেপ শুরু করেছে ক্রীড়া দপ্তর! স্বশাসিত ক্রীড়া সংস্থা ত্রিপুরা ক্রীড়া পর্ষদকে কতিপয় অজ্ঞ ক্রীড়া প্রশাসক নতুন মন্ত্রীকে টুপি পড়িয়ে অবৈধ ও বেআইনি বানিয়ে দিয়েছে। এতে ক্রীড়ামোদী মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। সব থেকে অবাক করার বিষয়, সব জেনেও মুখ্যমন্ত্রী কেন এই বেআইনি ও অবৈধ প্রক্রিয়ায় সিলমোহর লাগাতে দিচ্ছেন?
ক্রীড়া দপ্তর সূত্রের সংবাদ, ২০১৮ সালের মত ২০২৩ বিধানসভা নির্বাচনের পরে রাজ্য মন্ত্রিসভা গঠন হয়ে দুমাস পেরিয়ে গেলেও ত্রিপুরা ক্রীড়া পর্ষদের কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া অজ্ঞাত কারণে ঝুলিয়ে রেখেছে সরকার। ২০১৮’তে সেসময়ের অধিকর্তা উদয়ন সিনহা এক বেআইনি ও অবৈধ আদেশে সেসময়ের সহ-অধিকর্তা সমীর দেববর্মাকে ক্রীড়া পর্ষদের ভারপ্রাপ্ত সচিবে বানিয়ে প্রায় ছয় মাস পর্ষদ কব্জা করে যথেচ্ছ করিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। ভাল মানুষ হিসেবে পরিচিত প্রাক্তন মন্ত্রী মনোজ কান্তি দেবের সরলতার সুযোগ নিয়ে ক্রীড়া পর্ষদে একপ্রকার লুটপাট চালানো হয় সেসময়। খেলার নাম করে, সংবর্ধনার নাম করে ও ক্রীড়া সরঞ্জাম কেনার নামে লক্ষ কোটি টাকা তছরুপের অভিযোগ রয়েছে। সবশেষে কয়েক কোটি টাকা বাধারঘাটের ট্রাস্টের নাম করে ক্রীড়া পর্ষদ থেকে সমীর দেববর্মাকে দিয়ে সরিয়ে পর্ষদকে কাঙ্গাল বানিয়ে দেয়া হয়! পরবর্তী সময়ে সেপ্টেম্বরে পর্ষদের কমিটি গঠন করা হলে এক বিভৎস অবস্থার মধ্যে চলতে হয় বলে অভিযোগ। তহবিল তলানিতে এসে যায়। যার খেসারত দিতে হয় অনুমোদিত ক্রীড়া সংস্থাগুলিকে।
একই ঘটনার রি-প্লে এবার ২০২৩ নির্বাচনের পর হতে চলেছে বলে ধারণা। গত ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত ছিল ত্রিপুরা ক্রীড়া পর্ষদের সর্বশেষ কমিটির বর্ধিত মেয়াদ। শুধু চেয়ারম্যান হিসেবে মন্ত্রী টিংকু রায়কে নিযুক্তি দিলেও সরকার অজ্ঞাত কারনে পুরো কমিটি দিতে পারে নি। এতে কর্মচারীদের বেতন আটকে গেছে। আটকে গেছে স্বাভাবিক কাজ। স্পর্শকাতর বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ক্রীড়ামন্ত্রী এমনকি মুখ্যমন্ত্রীও। এই অবস্থায় পর্ষদের বেতনভাতা চালাতে নাকি ক্রীড়া উপ-অধিকর্তা বিপ্লব কুমার দত্তকে নিযুক্তি দেয়া হয়। ক্রীড়া অধিকর্তা সত্যব্রত নাথ এক বিজ্ঞপ্তিতে নাকি বিপ্লবকে নিযুক্তি দেন। এই নিযুক্তি নিয়েই বিতর্ক দেখা দিয়েছে। কারণ ত্রিপুরা ক্রীড়া পর্ষদ সম্পূর্ণ একটি স্বশাসিত সংস্থা। ক্রীড়া দপ্তরের কোন এক্তিয়ার নেই পর্ষদের আভ্যন্তরীন বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার। ক্রীড়া পর্ষদ চলে সমবায় দপ্তরের নির্দেশিত সংবিধান মেনে। তাহলে কিভাবে ক্রীড়া অধিকর্তা বিজ্ঞপ্তি জারি করে পর্ষদের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করাচ্ছেন? পাঁচ বছর আগে উদয়ন সিনহা যে বেআইনি ও অবৈধ আদেশ দিয়েছিলেন, সেই একই ভুল করলেন বর্তমান অধিকর্তা সত্যব্রত নাথ!
মুখ্যমন্ত্রী স্বচ্ছ প্রশাসনের কথা বললেও বাস্তবে তা যে হচ্ছে না, এই ঘটনাই তার প্রমাণ। মন্ত্রী হিসেবে দায়ীত্ব নেয়া টিংকু রায় প্রথমবার কাজ করছেন। ফলে অজ্ঞতা থাকতেই পারে। কিন্তু এর সুযোগে অবৈধ ও বেআইনি কাজ করলে মুখ তো পুড়তেই হবে। পর্ষদ কোন ভাবেই দপ্তরের নিয়ন্ত্রিত কোন ইউনিট নয়, এটা বুঝতে না পারাটা দপ্তরের আধিকারিকদের অজ্ঞতা। অবিলম্বে এবিষয়ে পদক্ষেপ না নেয়া হলে অবৈধ প্রক্রিয়ায় জড়িয়ে যাবে ক্রীড়া দপ্তরের প্রশাসন।