করিমগঞ্জে বন্যা ব্যবস্থাপনার পর্যালোচনা সভা


করিমগঞ্জ (অসম), ১১ মে (হি.স.) : করিমগঞ্জে বৃহস্পতিবার জেলাশাসক কার্যালয়ের সভাকক্ষে এডিসি ও জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের মুখ্য কার্যবাহী আধিকারিক জেমস আইন্ডের পৌরোহিত্যে চলতি বছরে বর্ষার মরশুমে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে এক পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই পর্যালোচনা বৈঠকে সহযোগী বিভাগের কর্মকর্তা সহ অসম রাজ্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের কারিগরি পরামর্শদাতা রাজেশ দত্ত এবং প্রজেক্ট অফিসার সৈয়দ শারিক রহমান অংশগ্রহণ করেন।

সভায় করিমগঞ্জ জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের ডিস্ট্রিক্ট প্রজেক্ট অফিসার সিজু দাস পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে বিগত বছরের বন্যার ক্ষয়ক্ষতি সহ ত্রাণ ব্যবস্থা ইত্যাদির খতিয়ান তুলে ধরেন। সভায় তিনি জানান, ২০২৩-২৪ বছরের বন্যার জন্য প্রস্তুতি হিসেবে ইতিমধ্যে পুরো পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। উদ্ধার ও ত্রাণকার্য সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনা করতে গোটা জেলাকে সার্কল অফিসারদের দায়িত্বে পাঁচটি জোনে ভাগ করা হয়েছে। সার্কেল পর্যায়ের আধিকারিক ও কর্মীরা উদ্ধার ও ত্রাণকার্যে জোনাল অফিসারকে সব ধরনের সহযোগিতা করবেন।

উদ্ধারের কাজে এসডিআরএফ ও এনডিআরএফ-এর সাথে আপদা মিত্র, প্রতিরোধী বন্ধু, স্বেচ্ছাসেবক, সিডিএমসি, ডাব্লুডিএমসি, ভিএলএম সিসিদের কাজে লাগানো হবে। বন্যা পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতির নিরূপণ এবং পুনর্বাসন ইত্যাদির জন্য সার্কল পর্যায়ে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। এতে জানানো হয়েছে, প্রয়োজন অনুসারে জোনাল অফিসাররা ত্রাণ সামগ্রীর চাহিদা দাখিল করবেন। এ ব্যাপারে খাদ্য ও অসামরিক সরবরাহ বিভাগ থেকে ত্রাণ সামগ্রীর জন্য দরপত্র ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। ত্রাণ সামগ্রীর সরবরাহকারী ও সরবরাহের হার নির্ধারণ করা হয়েছে এবং ত্রাণ সামগ্রী সংগ্রহ কমিটিও গঠিত হয়েছে।

এদিন জানানো হয়েছে, জেলায় ২১৯টি বেশি এবং খুব বেশি বন্যাপ্রবণ গ্রাম চিহ্নিত করা হয়েছে। ত্রাণ শিবির চিহ্নিত করা হয়েছে ১৭৪টি, যার মধ্যে কোভিড প্রটোকল মেনে ১৬ হাজার ১১ জন আশ্রিতকে রাখার ক্ষমতা থাকবে।
শিবিরগুলিতে শিশুদের সুবিধাযোগ্য স্থানও থাকবে। জেলায় নৌকার ব্যবস্থা রয়েছে ১০৩টি, যার মধ্যে আইআর নৌকা ৭ টি, ৭৯ টি দেশি নৌকা এবং ১৭ টি মোটর চালিত নৌকা রয়েছে। এসডিআরএফ পার্সোনালদের প্রাচুর্য রয়েছে ২৬ জন। পাশাপাশি ৬ জন ডুবুরি রয়েছেন। গবাদি পশুর জন্য ৮ জায়গায় উঁচু স্থান চিহ্নিত রয়েছে। অস্থায়ী হেলিপেডের জন্য ৯ টি স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। খাদ্য সামগ্রী, ঔষধ, জ্বালানি ইত্যাদির পর্যাপ্ত ভাণ্ডার মজুত রয়েছে। সব পাইকারি ও খুচরো বিক্রেতাদের খাদ্য সামগ্রীর পর্যাপ্ত ভাণ্ডার মজুত রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, ভারতীয় খাদ্য নিগমের এরিয়া ম্যানেজারকে বদরপুরঘাট ও নিলামবাজারে বর্ষার মরশুমে বন্যা পরিস্থিতির মোকাবিলায় চালের পর্যাপ্ত ভাণ্ডার মজুত রাখতে বলা হয়েছে।
জরুরিকালীন পরিস্থিতির মোকাবিলায় জেলায় সব এলপিজি ডিস্ট্রিবিউটরদের পর্যাপ্ত গ্যাস সিলিন্ডার এবং মোটর স্পিরিট ও হাই স্পিড ডিজেল ডিলারদের অন্তত ৩ হাজার লিটার ডিজেল এবং ১ হাজার লিটার মোটর স্পিরিট মজুত রাখতে বলা হয়েছে। সভায় জানানো হয়েছে, বন্যার জন্য জেলায় জরুরি ঔষধের ভাণ্ডার মজুত রয়েছে। প্রতিটি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে এবং চিকিৎসকদের প্রতিটি জোন, সাব-জোন ও আরবান সেক্টরের জন্য চিহ্নিত করে রাখা হয়েছে। যারা বন্যাকালীন পরিস্থিতিতে ত্রাণ শিবির এবং বন্যাকবলিত এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করবেন।
গবাদি পশুর জন্য জরুরিকালীন ঔষধ মজুত রয়েছে। চলতি প্রাক বর্ষাকালীন টিকাকরণের জন্য গবাদি পশুর ৪৬ হাজার টিকার ডোজ পাওয়া গেছে। গো-খাদ্যের জন্য ১৫ হাজার কুইন্টাল গো-খাদ্যের অগ্রিম চাহিদা সরকারের কাছে জমা করা হয়েছে। এ ব্যাপারে সরবরাহকারী ও মূল্য হার নির্ধারণ করে রাখা হয়েছে।
জানানো হয়েছে, এসডিআরএফের কাজের অধীনে নদী বাঁধের ১৮ টি স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে যার মধ্যে জলে প্লাবিত হয়ে যাওয়া এবং দুর্বল অবস্থানে থাকা বাঁধ রয়েছে। এগুলির ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।

জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগ থেকে জানানো হয় যে বন্যা পরিস্থিতিতে বিশুদ্ধ পানীয় জলের পাউচ প্রস্তুত করার জন্য একসাথে ১০ হাজার প্যাকেট তৈরি করার মত যন্ত্র সচল রয়েছে। পাশাপাশি জল বিশুদ্ধিকরণের জন্য হ্যালোজেন ট্যাবলেট ও অন্য রসায়নের ভান্ডার মজুত আছে। এদিকে ডিস্ট্রিক্ট ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার বা ডিইওসি-র টোল ফ্রী কন্ট্রোল রুম নম্বর ১০৭৭ এবং ০৩৮৪৩-২৬৫১৪৪ চব্বিশ ঘন্টা কার্যকরী রয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে জল সম্পদ বিভাগের ২৪ ঘন্টা কার্যকরী থাকা কন্ট্রোল রুম, নম্বর ০৩৮৪৩-২৬২১৮০। এছাড়া এদিনের পর্যালোচনা সভায় কারিগরি পরামর্শদাতা রাজেশ দত্ত বন্যা পরিস্থিতিতে প্রস্তুতির বিষয়গুলি পর্যালোচনা করা সহ রাজ্যের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের অনুকূলে জেলার পূর্ত, জনসিঞ্চন তথা অন্যান্য বিভাগের অত্যন্ত জরুরী কালীন পরিস্থিতিতে মেরামতির ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয় সম্পর্কে পরামর্শ দেন। তিনি বন্যার ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ অনলাইন রিপোর্টিং সিস্টেম এফআরআইএমএস–এ দাখিল করতে আহ্বান জানান।

এদিনের পর্যালোচনা বৈঠকে জেলা পরিষদের মুখ্য কার্যবাহী আধিকারিক রুথ লিয়ানথাং, বদরপুরের চক্র আধিকারিক তোয়াহির আলম, করিমগঞ্জের চক্র আধিকারিক অন্তরা সেন, রামকৃষ্ণ নগরের চক্র আধিকারিক সতীশ প্রসাদ, নিলাম বাজারের চক্র আধিকারিক সাজ্জাদ হোসেন, অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার ও করিমগঞ্জ পৌরসভার কার্যবাহী আধিকারিক বিক্রম চাষা সহ জল সম্পদ, পূর্ত, খাদ্য ও অসামরিক সরবরাহ, জলসিঞ্চন, জনস্বাস্থ্য কারিগরি, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য সহযোগী বিভাগের কর্মকর্তারা এতে অংশগ্রহণ করেন। পাশাপাশি এদিনই আসাম রাজ্যিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের কারিগরি পরামর্শদাতা রাজেশ দত্ত, জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের ডিপিও সিজু দাস সহ অন্যান্যরা করিমগঞ্জ শহরের চিহ্নিত করা ত্রাণ শিবির রবীন্দ্রসদন মহিলা মহাবিদ্যালয় ও পাবলিক উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সুযোগ সুবিধা গুলি খতিয়ে দেখেন। তারপর গান্ধাইমুখে নদী ভাঙ্গন, শ্রীগৌরী হাই স্কুলের পাশে নদী ভাঙন এবং কৃষ্ণপুরে সম্পূর্ণ হওয়া বাঁধের কাজ পরিদর্শন করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *