ইটানগর, ১০ মে (হি.স.) : অরুণাচল প্রদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পেপার ফাঁসের পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন কর্তৃক পরিচালিত সমস্ত পরীক্ষা বাতিল সহ ১৩ দফা দাবির ভিত্তিতে প্যান অরুণাচল জয়েন্ট স্টিয়ারিং কমিটি (পিএজেএসএস) আহূত ৭২ ঘণ্টা বনধ-এর প্রথমদিন ব্যাপক প্রভাব পড়েছে অরুণাচল প্রদেশের রাজধানী ইটানগরে। সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা।
হাসপাতাল এবং কয়েকটি জরুরি পরিষেবা ছাড়া ইটানগর রাজধানী অঞ্চল সম্পূর্ণ অচল হয়ে পড়েছে। কয়েকটি ব্যক্তিগত যানবাহন ছাড়া কোনও গাড়ি-ঘোড়া, দোকানপাট এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ। এককথায় জনমানবশূন্য গোটা রাজধানী।
এদিকে ইটানগর ক্যাপিটাল রিজিয়ন (আইসিআর)-এর জেলাশাসক তালো পোটম বলেছেন, জেলা প্রশাসন অরুণাচল প্রদেশ বেআইনি কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইন ২০১৪ জারি করেছে। তিনি বলেন, বনধ-এর ডাক সুপ্রিম কোর্ট বেআইনি এবং অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা করেছিল। ‘১৯৯৭ সালের সিভিল আপিল নম্বর ৭৭২৮/২৯-এ ভারতের মাননীয় সুপ্রিম কোর্ট (সিভিএলভিআরএস ভারত কুমার এবং অন্যান্য) যে কোনও রাজনৈতিক দল, সংগঠন বা সমিতি বা গোষ্ঠী বা ব্যক্তির দ্বারা যে কোনও বনধ আহ্বানকে অসাংবিধানিক এবং বেআইনি ঘোষণা করেছে৷ তাই আহূত বনধ-কে বেআইনি বলে আইনের প্রাসঙ্গিক বিধান অনুসারে সংশ্লিষ্টের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রদত্ত ক্ষমতা বলে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৪ ধারাও জারি করেছেন। ফলে একত্রে পাঁচ জনের বেশি লোকের সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে, বলেন আইসিআর-এর জেলাশাসক তালো পোটম।
জেলাশাসক জানান, নির্দিষ্ট আইনের বলে পুলিশ সক্রিয় হয়েছে। আইনের অধীনে পুলিশ আদেশ লঙ্ঘনকারীদের গ্রেফতার বা আটক করতে পারে। ইতিমধ্যে বনধ আহ্বানকারী নেতা সহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি বলেন, গুজব ছড়িয়ে যাতে অশান্তি সৃষ্টি করা না হয়, তারজন্য সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা।
এসডিপিও কমদম সিকোম সতর্ক করে বলেন, আইন লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, বিশেষ করে মেডিক্যাল পরিষেবার সঙ্গে জড়িত এবং সাধারণ নাগরিকদের সঙ্গে বেলেল্লাপনা করলে অনস্পট গ্রেফতার করে কড়া শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। এসডিপিও বলেন, বনধ-এর সময় হিংসা হতে পারে। তা মাথায় রেখে গোটা রাজধানী কমপ্লেক্সে যাতে কেউ অশান্তি সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য ৪১৫ নম্বর জাতীয় সড়কের পার্শ্ববর্তী দোকানপাট থেকে নুড়ি পাথর, বোল্ডার, লোহার পাইপ, টায়ার সরিয়ে নিতে গতকালই সংশ্লিষ্ট দোকানদারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, এখন পর্যন্ত কোনও অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, ইতিমধ্যে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি আন্দোলনকারী প্যান অরুণাচল জয়েন্ট স্টিয়ারিং কমিটি-র সমস্ত দাবির প্রতি ঐকমত্যে এসেছিল রাজ্য সরকার। রাজ্যে উদ্ভূত অশান্ত পরিস্থিতির সমাধানসূত্র বের করতে এদিন ইটানগরে অবস্থিত সিভিল সেক্রেটারিয়েটে ছয়তলায় মুখ্যমন্ত্রী পেমা খান্ডু তাঁর কার্যালয়ে পিএজেএসএস-এর পদাধিকারীদের সাথে প্ৰায় তিন ঘণ্টার বৈঠক করেছিলেন। বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী পেমা খান্ডুর সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব সহ কয়েকজন শীর্ষ আধিকারিক। পিএজেএসএস-এর পক্ষে ছিলেন সোল ডোডম, তেচি পুরু, তাদাক নালো, লীনা সোরা, তেলি ইয়ামি, কিপা চম্পা, কাম্পু দোলো, তেচি রানা এবং টেচি টাকার। কিন্তু সব দাবি পূরণের সরকারি আশ্বাস পেয়েও ফের ৭২ ঘণ্টার বনধ কেন, উঠেছে প্রশ্ন।

