তিনটি বিশেষ বিমানে মণিপুর থেকে ত্রিপুরার ২০৮ জন ছাত্রছাত্রীকে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে : মুখ্যমন্ত্রী

আগরতলা, ৬ মে (হি. স.) : তিনটি বিশেষ বিমানে মণিপুর থেকে ত্রিপুরার ২০৮ জন ছাত্রছাত্রীকে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। আজ মধ্যরাতে তাঁরা মণিপুর থেকে রওয়ানা দেবেন। শনিবার সচিবালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে একথা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক(ডা.) মানিক সাহা। সাথে তিনি যোগ করেন, ত্রিপুরা সরকার আধিকারিকদের টিম মণিপুর পাঠিয়েছে। তাঁরা সেখানে আরও ২/৩ দিন থাকবেন। ত্রিপুরা আসতে চাইছেন এমন কেউ থাকলে তাঁদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করবেন।
প্রসঙ্গত, হিংসাজর্জর মণিপুরে ত্রিপুরার পাঠরত ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে তাঁদের অভিভাবক এবং রাজ্য সরকার ভীষণ চিন্তায় রয়েছেন। ত্রিপুরা সরকার মণিপুরের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করছে। হেল্পলাইন নম্বর চালু করেছে। শুধু তাই নয়, মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর সাথে সহায়তা চেয়ে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী ফোন করেছেন। সকলেই সমস্ত সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মণিপুরে রিমস, কেন্দ্রীয় কৃষি মহাবিদ্যালয় এবং রিজিউনাল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি কলেজে পাঠরত ত্রিপুরার ছাত্রছাত্রী রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অনেকের অভিভাবকরা ইতিমধ্যে ত্রিপুরা সরকারের সাথে যোগাযোগ করেছেন। মণিপুরে পাঠরত ছাত্রছাত্রীরাও সহায়তা চেয়ে যোগাযোগ করেছেন। তাঁদের ত্রিপুরায় ফিরিয়ে আনার জন্য বিশেষ বিমানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তাঁর কথায়, মণিপুরে কেন্দ্রীয় কৃষি মহাবিদ্যালয়ের আশেপাশের এলাকায় সবচেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে। অবশ্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকায় এখনো কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তিনি জানান, সেখানে ত্রিপুরার ৩৭ জন ছাত্রছাত্রী রয়েছেন। এছাড়া রিমসে ১৭১ জনকে বিশেষ বিমানে ত্রিপুরায় ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা হয়েছে। তাতে, সমস্ত খরচ ত্রিপুরা সরকার বহন করবে। শুধু তাই নয়, যাঁরা নিজেদের টাকায় বিমানের টিকেট ক্রয় করে ফিরছেন তাঁদেরকেও সরকার থেকে ওই টিকিটের মূল্য ফিরিয়ে দেওয়া হবে, আশ্বাস দেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মণিপুর থেকে বিমানে ত্রিপুরার ছাত্রছাত্রীদের একত্রে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিয়েছিল। কারণ, ইমফল থেকে সমস্ত বিমানের টিকিট পাওয়া যাচ্ছিল না। তাই, কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রীর কাছে সহায়তায় আবেদন জানিয়েছিলাম। খুব দ্রুততর সাথে ওই আবেদনে কেন্দ্রীয় সরকার সাড়া দিয়েছে। তাঁর দাবি, তিনটি বিশেষ বাণিজ্যিক বিমানে ত্রিপুরার ছাত্রছাত্রীদের রাজ্যে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা হয়েছে।
তিনি জানান, আজ মধ্যরাত ১২ টা ১৫ মিনিট নাগাদ বিশেষ বিমান ১৭১ জনকে নিয়ে আগরতলার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেবে। বিমানবন্দরে তাঁদের অভ্যর্থনায় ত্রিপুরা মন্ত্রিসভার একজন সদস্য এবং কয়েকজন আধিকারিক উপস্থিত থাকবেন। অন্যদিকে, অপর একটি বিমান কেন্দ্রীয় কৃষি মহাবিদ্যালয়ের ৩৭ ছাত্রছাত্রীকে নিয়ে মধ্যরাত ১টা ৪০ মিনিট নাগাদ গুয়াহাটির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেবে। গুয়াহাটি থেকে আগামীকাল দুপুর ১২টা ১৫ মিনিট বিমান আগরতলায় পৌছাবে। এক্ষেত্রে গুয়াহাটি ত্রিপুরা ভবনের রেসিডেন্ট কমিশনার তাঁদের থাকা এবং পুণরায় বিমানে আগরতলায় আসার সমস্ত ব্যবস্থা করবেন।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সমস্ত আয়োজন সত্বেও ত্রিপুরার ছাত্রছাত্রীদের বিমানবন্দরে নিতে সমস্যা দেখা দিয়েছিল। কিন্তু, মণিপুরের এখন ত্রিপুরা থেকে সিআরপএফ একটি ব্যাটেলিয়ান জরুরি ভিত্তিতে নেওয়া হয়েছে। ফলে, সিআরপিএফের আইজি-র মাধ্যমে যাবতীয় ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাঁর দাবি, আজকেও মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রীর সাথে সামগ্রিক বিষয় নিয়ে কথা বলেছি। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন ত্রিপুরার সমস্ত ছাত্রছাত্রীদের নিরাপদে বাড়ি ফিরতে সহায়তা করবেন। এছাড়া যাঁরা মণিপুর থেকে ত্রিপুরায় ফিরবেন না, তাঁদেরও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করবেন।
এদিন ত্রিপুরা পুলিশের মহানির্দেশক অমিতাভ রঞ্জন জানিয়েছেন, একজন বরিষ্ঠ পুলিশ আধিকারিক এবং সাধারণ প্রশাসনের বরিষ্ঠ আধিকারিকের নেতৃত্বে একটি বিশেষ টিম মণিপুর পাঠানো হয়েছে। তাঁরা বিমানবন্দর এবং কলেজের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে ত্রিপুরার ছাত্রছাত্রীদের রাজ্যে ফিরিয়ে আনার যাবতীয় ব্যবস্থা করবেন। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, তাঁরা আরও ২/৩ দিন সেখানে থাকবেন। ত্রিপুরার অন্য কেউ যদি ফিরতে চান তাহলে তাঁরা সমস্ত ব্যবস্থা করবেন। জানা গেছে, ত্রিপুরা স্টেট রাইফেলস পঞ্চম ব্যাটেলিয়ানের কমান্ডেন্ট অনন্ত দাস এবং পরিবার কল্যাণ ও রোগ প্রতিরোধ দফতরের অধিকর্তা ডা. সুপ্রিয় মল্লিকের নেতৃত্বে বিশেষ টিম মণিপুর গেছে। এদিকে, এখন পর্যন্ত ত্রিপুরার হেল্পলাইন নম্বরে ৭৭ জন যোগাযোগ করেছেন।