নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৯ এপ্রিল৷৷ কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে তপশিলী জাতিভুক্ত জনগণের আর্থিক মনোন্নয়নে সরকার পরিকল্পনা গ্রহণ করে কাজ করছে৷ এক্ষেত্রে তপশিলী জাতি কল্যাণ দপ্তরকে বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করে পরিকল্পনা রূপায়ণে উদ্যোগী হতে হবে৷ আজ সচিবালয়ের ২ নং সভাকক্ষে তপশিলী জাতি কল্যাণ দপ্তরের পর্যলোচনা সভায় মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা একথা বলেন৷ সভায় তপশিলী জাতি কল্যাণ দপ্তরের বিভিন্ন প্রকল্পের পর্যলোচনা করে মুখ্যমন্ত্রী (ডা.) সাহা বলেন, তপশিলী জাতিভুক্ত দিব্যাঙ্গজনদের চিহ্ণিত করে তাদের সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তরের বিভিন্ন প্রকল্পের সুুবিধা প্রদানে দপ্তরকে আরও আন্তরিক হতে হবে৷ প্রি-মেট্রিক ও পোস্ট মেট্রিক স্কলারশিপ পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনও ছাত্রছাত্রী যাতে বি’ত না হয় সে বিষয়েও দপ্তরকে বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে৷ সভায় তপশিলী জাতি অংশের মানুষ বেশি বসবাস করেন এমন ৩২টি আদর্শ গ্রামে এখন পর্যন্ত কি কি কর্মসূচি রূপায়ণ করা হয়েছে সে বিষয়েও বিস্তারিত খোঁজখরব নেন মুখ্যমন্ত্রী৷
সভায় তপশিলী জাতি কল্যাণ দপ্তরের সচিব অভিষেক চন্দ্রা জানান, রাজ্যে বর্তমানে তপশিলী জাতিভুক্ত লোকসংখ্যা রয়েছেন ৬ লক্ষ ৫৪ হাজার ৯১৮ জন৷ যা রাজ্যের মোট জনসংখ্যার ১৭.৮ শতাংশ৷ রাজ্যে তপশিলী জাতি অধ্যুষিত বসতি রয়েছে ৪০৪টি৷ রাজ্য সরকার ৩২টি এসসি অধ্যুষিত গ্রামকে আদর্শ গ্রাম হিসেবে ঘোষণা করেছে৷ সেই গ্রামগুলিতে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচি রূপায়ণ করা হচ্ছে৷ সচিব জানান, তপশিলী জাতি কল্যাণ দপ্তরের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় প্রকল্পে ২০১৮-১৯ থেকে ২০২২-২৩ এই পাঁচটি অর্থবর্ষে ৩৯ হাজার ৪৫৫ জন তপশিলী জাতিভুক্ত ছাত্রছাত্রীকে প্রি-মেট্রিক স্কলারশিপ (নবম ও দশম শ্রেণী) প্রদান করা হয়েছে৷ তাতে মোট ব্যয় হয়েছে ১১ কোটি ২২ লক্ষ টাকা৷ এছাড়াও রাজ্য প্রকল্পে ঐ পাঁচ অর্থবর্ষে প্রি-মেট্রিক স্কলারশিপ (ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণী) প্রদান করা হয়েছে ৯২ হাজার ৬৩৭ জন ছাত্রছাত্রীকে৷
সচিব জানান, কেন্দ্রীয় প্রকল্পে ২০১৮-১৯ থেকে ২০২২-২৩ এই পাঁচ অর্থবর্ষে ৮৫ হাজার ৩০৫ জন ছাত্রছাত্রীকে পোস্ট মেট্রিক স্কলারশিপ প্রদান করা হয়েছে৷ এছাড়া ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে ২২ হাজার ৯০০ জনকে পোস্ট মেট্রিক স্কলারশিপ প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে দপ্তর৷
তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী অনুসূচিত জাতি অভ্যুদয় যোজনায় (পিএম-অজয়) ২০১৮-১৯ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবর্ষের ১৬১টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে৷ এই প্রকল্পে গত পাঁচ বছরে ৫০ হাজার ৯৯৫ জন সুুবিধাভোগীকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে৷ এছাড়াও ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে ২৩ হাজার ৩০০ জনের রোজগার সৃষ্টির লক্ষ্যে আর্থিক সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে৷ সচিব জানান, দপ্তরের মাধ্যমে গত পাঁচ বছরে ৪৬৮৭ জনকে বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতা উন্নয়নের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে৷ এছাড়া চলতি অর্থবর্ষে ২০৯২ জনকে দক্ষতা উন্নয়নের প্রশিক্ষণ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে৷ এছাড়া বাবু জগজীবনরাম ছাত্রাবাস যোজনায় ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে ৩টি ছাত্রাবাস নির্মাণেরও লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে দপ্তর৷
সচিব জানান, রাজ্য সরকারের প্রকল্পে ২০১৮-১৯ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে ৩০ হাজার ৮৩৭ জন ছাত্রছাত্রীকে ড. বি আর আম্বেদকর মেরিট অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়েছে৷ এরমধ্যে ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে মেরিট অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়েছে ৯৩৩২ জনকে৷ তিনি জানান, গত বছর ১০২৬ জন ছাত্রছাত্রীকে বোর্ডিং হাউস স্টাইপেণ্ড প্রদান করা হয়েছে৷ এছাড়াও গত পাঁচ বছরে ৯৩৫২ জন সুুবিধাভোগীকে মুখ্যমন্ত্রী স্বনির্ভর পরিবার যোজনায় বিভিন্ন সহায়তা প্রদান করা হয়েছে৷ সচিব জানান, তপশিলী জাতিভুক্ত ৬৪৫৯ জন সুুবিধাভোগীকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে ২০১৮-১৯ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পে সংশ্লিষ্ট নিগমগুলি থেকে মোট ৫৬ কোটি ৩৩ লক্ষ টাকার ঋণ দেওয়া হয়েছে৷ পর্যালোচনা সভায় মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও তপশিলী জাতি কল্যাণমন্ত্রী সুুধাংশু দাস, মুখ্যসচিব জে কে সিনহা, মুখ্যমন্ত্রীর সচিব ড. প্রদীপ চক্রবর্তী উপস্থিত ছিলেন এবং আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন৷