দুর্গাপুর, ১৮ এপ্রিল (হি. স.) শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ। মন্ডল সভাপতিসহ দুই কর্মীকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বহিস্কার করল বিজেপির আসানসোল সাংগঠনিক জেলা নেতৃত্ব। ইতিমধ্যে সেই চিঠি দলের শীর্ষ নেতৃত্বকেও পাঠিয়েছে। আর তাতেই বিস্তর শোরগোল পড়েছে শিল্পাঞ্চলের রাজনৈতিক মহলে।
জানা গেছে, গত ১৭ এপ্রিল বিজেপির শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির সুপারিশে দুর্গাপুর পশ্চিম বিধানসভার ১ নং মন্ডলের সভাপতি ধ্রুবজ্যোতি মুখার্জী ও সুমন গোপ ( রাজা) নামে দুজনকে অনির্দিষ্ট কালের জন্য বহিস্কার করে বিজেপির আসানসোল সাংগঠনিক জেলা নেতৃত্ব। চিঠিতে বিজেপির আসানসোল সাংগঠনিক জেলা সভাপতি দিলীপ দে জানিয়েছেন, দল বিরোধী কাজে লিপ্ত থাকায় ও অতিতে দলের বিরুদ্ধে কুরুচিকর মন্তব্য করায় অনির্দিষ্ট কালের জন্য বহিস্কার করা হল।’ যদিও বহিস্কারের বিষয়ে দুর্গাপুর পশ্চিম বিধানসভার ১ নং মন্ডলের সভাপতি ধ্রুবজ্যোতি মুখার্জী জানান,” এরকম কোন চিঠি পাইনি। আমি দলের শৃঙ্খলাপরায়ন একনিষ্ঠ কর্মী। দলের কাজ করে চলেছি।” এদিকে দলের মন্ডল সভাপতিকে আচমকা বহিস্কার করায় রীতিমতো চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে রাজনৈতিক মহলে। কিছুদিন আগে দুর্গাপুর গোপালমাঠে শ্মশানের পর্যাপ্ত রাস্তার দাবীতে অনশন শুরু করে। ধ্রুবজ্যোতির ওই অনশন মঞ্চে সাংসদ সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়াও গিয়েছিলেন। আর ওইরকম এক দলীয়কর্মীকে বহিস্কার করায় রীতিমতো শোরগোল পড়েছে রাজনৈতিক মহলে।
প্রসঙ্গত, গত ১১ এপ্রিল দুর্গাপুর পুরসভা নির্বাচনের দাবী সহ একাধিক ইস্যু নিয়ে প্রতিবাদ মিছিল ও দুর্গাপুর নগরনিগম ঘেরাও করে বিজেপি। ওই বিক্ষোভ মিছিল ও সভায় উপস্থিত ছিলেন দলের রাজ্য সভাপতি তথা সাংসদ সুকান্ত মজুমদার। বিকাল ৫ টা নাগাদ গান্ধীমোড় সার্কাস ময়দান থেকে মিছিল শুরু হয়। মিছিলে তখন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, কুলটির বিধায়ক অজয় পোদ্দার, জেলা সভাপতি দিলীপ দে সহ একাধিক জেলা নেতৃত্ব। মিছিল কিছুটা যাওয়ার পরই আসানসোল সাংগঠনিক জেলার মহিলা মোর্চার সভানেত্রী ভারতী চ্যাটার্জীর ওপর হামলা হয় বলে অভিযোগ। হামলার অভিযোগ ওঠে দলের কয়েকজন কর্মীর বিরুদ্ধে। ঘটনায় গুরুতর জখম হয় ভারতীদেবী। বিষয়টি নজরে পড়তেই ভারতীদেবীর সহকর্মীরা সহ আরও কয়েকজন বিজেপিকর্মী তাকে উদ্ধার করে দুর্গাপুরে এক বেসরকারী হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখান থেকে তাকে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এদিকে, ঘটনায় বিস্তর বিতর্ক শুরু হয়। দুর্গাপুর পুরসভা ভোটের আগে চরম অস্বস্তিতে পড়ে বিজেপির আসানসোল জেলা নেতৃত্ব। প্রশ্ন ওঠে, যে দল নারিদের দেবী রূপে সম্মান করে। সে দলের কর্মীদের হাতে নিগৃহীত হতে হল দলের জেলা সভানেত্রীকে। এমনকি ঘটনায় ঘরে বাইরে সমালোচনার পাশাপাশি বিরোধীদের কটাক্ষের মুখে পড়ে। ঘটনায় তৃণমূলের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাপতি তথা পান্ডবেশ্বরের বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেন,” উৎশৃঙ্খল দল বিজেপি। মহিলাদের সম্মান দেয় না। এটাই তাদের সংস্কৃতি। ওই মহিলার যদি কোন সাহায্য লাগে, পাশে থাকবো।” যদিও শেষ পর্যন্ত দলের ভাবমুর্তি রক্ষা করতে নড়ে চড়ে বসে বিজেপি। স্বচ্ছ ভাবমুর্তি বজায় রাখতে শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি তদন্ত শুরু করে। বিজেপির আসানসোল সাংগঠনিক জেলা সভাপতি দিলীপ দে বলেন,” দলের আভ্যন্তরীন বিষয়। শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির সিদ্ধান্ত ও দলের রাজ্য নেতৃত্বের অনুমতিতে ওই দুজনকে বহিস্কার করা হয়েছে।”