নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৪ এপ্রিল৷৷ বাংলা নববর্ষ৷ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ৷ ক্যালেন্ডারের পাতায় আরো একটি বছর লিপিবদ্ধ হলো৷ ১৪২৯ এর শেষ আর ১৪৩০এর শুরু৷ জীবন খাতায় গাথা হয়ে রইলো গেল বছরে যাবতীয় হিসাব নিকাশ৷ দুঃখ যন্ত্রণা ভালবাসা আনন্দ মিশেই যে একটি বছরের শেষ আরো একটি বছরের পথ চলা৷ সুখ শান্তি সমৃদ্ধি এই প্রত্যাশা নিয়ে শুরু হবে নতুন বছর৷ কে বলতে পারে নতুন বছর কার জীবনে কি রকম হবে? তবু বছর আসে যায়৷ মানুষের সুখ দুঃখ ভালোবাসার মধ্যেই বছরকে যেমন বিদায় জানাতে হয় তেমনি নতুন বছর কেও স্বাগত জানাতে হয়৷ এটাই আমাদের পরম্পরা৷ আর এই পরম্পরা ধরেই চৈত্রের শেষ আর বৈশাখের আগমন৷তাই নতুন বছরকে বা পয়লা বৈশাখকে স্বাগত জানাতে ব্যাস্ত সবাই৷ এক দফা ঝাড় পোচ শেষ৷ দোকানিরা নতুন করে সিদ্ধিদাতা গণেশ কে প্রতিষ্ঠা করেছেন দোকানে৷ নতুন করে লেবু কাঁচা লঙ্কা মালা যেতে তার দুয়ারে লাগানো হয়েছে৷ ইঁদুরের ফোটা প্রতিটি দরজায় এবং ক্যাশ বাক্স রয়েছে৷ প্রতি বছরের মতো এবারও নববর্ষের সকালে ব্যবসায়িরা নতুন হাল খাতা নিয়ে লক্ষীনারায়ণ বাড়ি, সেন্ট্রাল রোড শিববাড়ি কৃষ্ণনগর মেহার কালীবাড়ি আনন্দময়ী আশ্রম ইন্দ্রনগর কালিবাড়ি সহ বিভিন্ন ঠাকুর মন্দিরে যাবেন৷ পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে লক্ষীনারায়ণ বাড়ি প্রাঙ্গনে মেলায় পসরা সাজিয়ে বসতে ইতিমধ্যেই ব্যবসায়িরা আয়োজন শুরু করে দিয়েছে৷৷ অন্যদিকে নতুন বছরের আগমনকে কেন্দ্র করে শুক্রবার রাজ্যের প্রধান প্রধান বাজার গুলিতে এক প্রস্থ মহারাও শেষ হয়ে গেছে৷ ভুরিভোজের আয়োজনে প্রস্তুতি এখন ঘরে ঘরে৷ তবে তার আগে বাজারে পদ্মা ইলিশ আনতে ব্যস্ত দোকানীরা৷ কারণ পয়লা বৈশাখের সকালে বাজারে রূপালী ইলিশের সৌন্দর্য যাতে ক্রেতারা মুগ্দ হন এইদিকেই চোখ ঘুরিয়ে দিতে ব্যস্ত মাছ ব্যবসায়ী৷ দাম যাই হোক না কেন৷ এমনটাই বললেন মহারাজ গঞ্জ বাজারের মৎস্য ব্যবসায়ী হরেন্দ্র দাস৷ তিনি বলেন এই সময়ে পদ্মার ইলিশ পেলেও রমজান মাসে কারণে বাংলাদেশ থেকে আনতে কিছুটা হলেও অসুবিধায় পড়তে হবে আমাদের৷ তবে বাঙালির পাতে ইলি শ চাই এই ইচ্ছা পূরণে ব্যস্ত এখন ব্যবসায়ীরা৷ তিনি বলেন দাম ১৬০০ থেকে ২ হাজার এক কিলো ওজনের ইলিশ কিনতে এমনটাই দাম হতে পারে তার ধারণা৷ তবে ইলিশের আমদানির উপরেই দাম নির্ভর করবে বলে তিনি জানান৷ এছাড়া মাংস ও মিষ্টির দোকান গুলিতে নববর্ষের সকাল থেকেই ক্রেতাদের ভিড় জমাবেন৷ তাই তার আগে প্রস্তুতি সেরে নিচ্ছেন মিষ্টি ব্যবসায়ীরাও৷
এদিকে আবহমানকাল ধরেই বাংলা ও বাঙালির চিরাচরিত বিভিন্ন ঐতিহ্যকে ধারণ করে আসছে চৈত্র সংক্রান্তিতে৷ পুরাতনকে বিদায় ও নতুন বর্ষকে বরণ করার জন্য বছরের এ দিনটিকে ঘিরে থাকে বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানের আয়োজন৷ পিছনে পড়ে থাকবে বাংলা ১৪২৯৷ শুরু হবে নতুন বছর ১৪৩০ বঙ্গাব্দ৷ চৈত্র সংক্রান্তিকে ঘিরে এখনও বাংলা ও বাঙালির চিরাচরিত ঐতিহ্য এবং পরম্পরা টিকে আছে৷ যার অন্যতম প্রধান উৎসব হচ্ছে চড়ক পুজো ও মেলা৷ এটি সনাতন হিন্দু সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী লোক সংসৃকতি ও লোক উৎসব মেতে উঠেন৷ পুরো চৈত্র মাস ধরে চলে শিবের গাজন৷ চৈত্রের শেষদিন চড়ক পুজোর আয়োজিত হয়েছে এবারও৷ রাজধানীর প্রতাপগড় লংকামুড়া চানমারি বলদাখাল সহ বিভিন্ন এলাকায় এই চড়ক পুজোর আয়োজন করা হয়েছে৷ এই পুজায় প্রচলিত লোক সংসৃকতির বিশেষ কিছু রীতি রয়েছে৷ যেমন জলন্ত ছাইয়ের উপর হাঁটা, কাঁটা, ছুরি বা ধারালো কিছুর উপর লাফানো, অগ্ণিনৃত্য ইত্যাদি এই পুজোর বিশেষ অঙ্গ৷ মনে করা হয়, নানা রকমের দৈহিক যন্ত্রণা ধর্মের অঙ্গ৷ চড়ক গাছের সাথে ভক্তদের লোহার বড়শি দিয়ে গেঁথে দ্রুতবেগে ঘোরানোর রীতি রয়েছে৷ সেইসাথে পিঠে, হাতে, পায়ে, জিভে এবং শরীরের নানা অঙ্গে লোহা গেঁথে দেওয়া হয়৷ যদিও সময়ের সাথে সাথে এবং আধুনিকতার ছোঁয়ায় যুগ যুগ ধরে চলে আসা বাংলা ও বাঙালির এই ঐতিহ্যবাহী লোকসংসৃকতি আজ বিলুপ্তির পথে৷ তবুও রাজধানীর প্রতাপগড় লংকামুড়া চানমারি বলদাখাল সহ বিভিন্ন জায়গায় এদিন চৈত্র মাসে বাড়ি বাড়ি শিবের গাজন, চৈত্র সংক্রান্তির দিনে চড়ক পুজোর প্রচলন লক্ষ্য করা গেছে৷ উপজাতিরাও তাদের চিরাচরিত গড়িয়া বিজু বৈশ্য মত পার্বণ রয়েছে যা চৈত্র সংক্রান্তির শেষ দিকেই অনুষ্ঠিত হয়৷ রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন হচ্ছে৷ জাতি ও উপজাতি সকল অংশের মানুষ এই সম্প্রীতির মেলবন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছেন৷ ইংরেজি নববর্ষের মত বাংলা নববর্ষে চাকচৌক্য বা জৌলশ না থাকলেও উৎসাহ বা আনন্দের কোন ভাটা পড়ে নি৷ বিভিন্ন সাংসৃকতিক প্রতিষ্ঠান আয়োজন করেছে বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণের৷ শুক্রবার সন্ধ্যায় কাব্য লোকের উদ্যোগে আগরতলার তুলসীবতী বালিকা বিদ্যালয় অনুষ্ঠিত হয় বিদায় অনুষ্ঠান৷ আগামীকাল হবে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান৷ অনুষ্ঠানে ত্রিপুরার লোকসংসৃকতি ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের বিখ্যাত ছৌ নৃত্য পরিবেশিত হবে৷ রাজ্যের বিভিন্ন সাংসৃকতিক প্রতিষ্ঠানের শিল্পীরা দুদিন ব্যাপী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন৷ এছাড়া নতুন বছরে রবীন্দ্রভবনে হবে ত্রিপুরা দর্পণের উদ্যোগে সাংসৃকতিক অনুষ্ঠান৷ নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত গোটা রাজ্য৷ কাক ভোরে অনেকেই নদীর জলে পিতৃপুরুষদের উদ্দেশ্যে তর্পনও করবেন৷ মন্দিরে মন্দিরে হবে পুজপাঠ৷ বাড়িতেও বিভিন্ন পূজার আয়োজনের মধ্য দিয়ে নতুন বছরের শুভ সূচনা হবে৷ এরপর বাঙালি মেতে উঠবে ভুরি ভোজে৷ টুইটারে ভেসে উঠবে নতুন বছরের শুভেচ্ছা বিনিময়৷ আলিঙ্গনের পর্ব শেষ হলেও ইন্টারনেটে যুগে এখনো নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানাতে ভুলে না আম আদমি৷ বিদায় ১৪২৯ স্বাগত ১৪৩০৷
2023-04-14

