হাফলং (অসম), ১৩ এপ্রিল (হি.স.) : ডিমা হাসাও জেলায় পঞ্চায়েতরাজ প্রবর্তন নিয়ে পুনরায় বিতর্ক উস্কে দিয়েছে ডিমা হাসাও জেলা কংগ্রেস। গত ১০ এপ্রিল মাইবাঙে জেলা সম্পদ কেন্দ্রের শিলান্যাস অনুষ্ঠানে আয়োডিত জনসভায় পঞ্চায়েতরাজ ব্যবস্থা প্রবর্তন নিয়ে প্রদত্ত মন্তব্য বিতর্ককে পুনরায় উস্কে দিয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার হাফলং রাজীব ভবনে এক সাংবাদিক সম্মেলন করে ডিমা হাসাও জেলা কংগ্রেসের উপ-সভাপতি অরিপম বডো বলেন, ২০১৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠ তফশিলির অধীন ডিমা হাসাও জেলায় পঞ্চায়েতরাজ প্রবর্তন নিয়ে উত্তর কাছাড় পার্বত্য স্বশাসিত পরিষদে ক্ষমতাসীন বিজেপির কার্যনির্বাহ কমিটি অনুমোদন জানানোর বিষয়টি জনসমক্ষে আসার পর পাহাড়ি জেলায় পঞ্চায়েতরাজ ব্যবস্থা প্রবর্তনের তীব্র বিরোধিতা করে কংগ্রেস সহ জেলার বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও সামাজিক সংগঠন সরব হয়ে উঠেছিল। এমন-কি পঞ্চায়েতরাজ ব্যবস্থা প্রবর্তনের বিষয়টি ডিমা হাসাও জেলা কংগ্রেস পাহাড়ি জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদী কার্যসূচিও পালন করেছে।
অরিপম বডো বলেন, পঞ্চায়েতরাজ প্রবর্তন ইস্যুতে হাফলং লেডিজ ওয়েল ফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাকক্ষে ডিমাসা স্টুডেন্টস ইউনিয়ন এক সভার আহ্বান করেছিল। ওই সভায় কংগ্রেস বিজেপি সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ছাত্র সংগঠন ও সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। ওই সভায় বর্তমান মন্ত্রী তথা তৎকালীন উত্তর কাছাড় পার্বত্য স্বশাসিত পরিষদের কার্যনির্বাহী সদস্য নন্দিতা গার্লোসা উপস্থিত ছিলেন। অরিপম বলেন, ওই সভায় কংগ্রেস দল পঞ্চায়েতরাজ ব্যবস্থা প্রবর্তনের ইস্যু নিয়ে একটি কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছিল। কিন্তু সে সময় নন্দিতা গার্লোসার মন্তব্য ছিল, ষষ্ঠ তফশিলির বিষয়ে ভালো জ্ঞাত লোক বা সম্যক ধারণা সংবলিত লোক ডিমা হাসাও জেলায় কম রয়েছেন। তাই কমিটি গঠনের পোষকতা তিনি করেননি, অভিযোগ উত্থাপন করেন অরিপম বডো।
তিনি বলেন, উল্টে বিজেপি সে সময় পঞ্চায়েতরাজ ব্যবস্থা ডিমা হাসাও জেলায় কোনও দিন প্রবর্তন হবে না, এ নিয়ে কংগ্রেস অযথা অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে বিবৃতি প্রদান করেছিল। কিন্তু ১০ এপ্রিল মাইবাঙে এক জনসভায় রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী নন্দিতা প্রকাশ্য জনসভায় বলেন, উত্তর কাছাড় পার্বত্য পরিষদের অনুমোদনে ডিমা হাসাও জেলায় পঞ্চায়েতরাজ ব্যবস্থা প্রবর্তন হতে চলছিল। কিন্তু তিনি মন্ত্রী হওয়ার পর তা আটকাতে ব্যবস্থা নিয়েছেন এবং এনিয়ে উত্তর কাছাড় পার্বত্য পরিষদের মুখ্য কার্যনিৰ্বাহী সদস্য তাঁকে আনন্দ কমিশনে এই পঞ্চায়েতরাজ ব্যবস্থা প্রবর্তনের যে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল তা আটকে নতুন প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন মন্ত্রী নন্দিতা গার্লোসা।
মন্ত্রীর ওই মন্তব্যের সূত্র ধরে ডিমা হাসাও জেলা কংগ্রেসের উপ-সভাপতি অরিপম বডোর প্রশ্ন, তা-হলে কি আনন্দ কমিশন ডিমা হাসাও জেলায় পঞ্চায়েতরাজ ব্যবস্থা প্রবর্তনের প্রস্তাব খারিজ করে পার্বত্য পরিষদের নতুন প্রস্তাব গ্রহণ করেছে? যদি তা হয়ে থাকে, তা-হলে তা অবিলম্বে জনসমক্ষে প্রকাশ করার দাবি জানিয়েছেন অরিপম বডো।
সাংবাদিক সম্মেলনে অরিপম বডো বলেন, ষষ্ঠ তফশিলির অধীন ডিমা হাসাও জেলায় পঞ্চায়েতরাজ প্রবর্তন নিয়ে পার্বত্য পরিষদ ২০১৯ সালে যে অনুমোদন জানিয়েছিল এতে পার্বত্য পরিষদের মুখ্য কার্যনির্বাহী সদস্য দেবোলাল গার্লোসা স্বাক্ষর করেছিলেন। অরিপম বডোর অভিযোগ, যে সময় এই পঞ্চায়েতরাজ ব্যবস্থা প্রবর্তন নিয়ে অনুমোদন জানানো হয়, সে সময় এ বিষয়ে অনুমোদন জানিয়েছিলেন উত্তর কাছাড় পার্বত্য পরিষদের কার্যনির্বাহী সদস্য স্যামুয়েল চাংসন।
অরিপম বডো বলেন, ডিমা হাসাও জেলায় যেখানে পঞ্চায়েতরাজ প্রবর্তন করা হলে ষষ্ঠ তফশিলির অধীনস্থ ডিমা হাসাও জেলায় বসবাসরত মানুষের অধিকার খর্ব হবে, সে অবস্থায় একজন উচ্চ শিক্ষিত হয়ে কীভাবে স্যামুয়েল চাংসন এতে অনুমোদন জানিয়েছিলেন? প্রশ্ন তুলে ডিমা হাসাও জেলা কংগ্রেসের উপ-সভাপতি অরিপম বডো বলেন, তা-হলে কি স্যামুয়েল চাংসন উত্তর কাছাড় পার্বত্য স্বশাসিত পরিষদের মুখ্য কার্যনির্বাহী সদস্য দেবোলাল গার্লোসাকে ভুল পথে পরিচালিত করেছিলেন?
বৃহস্পতিবার ডিমা হাসাও জেলা কংগ্রেসের সাংবাদিক সম্মেলনে অন্যন্যদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন জেলা কংগ্রেসের কার্যনিৰ্বাহী সভাপতি কালিজয় সেংইয়ং এবং উপ-সভাপতি লালথাংসাঙ্গা মার।