প্রত্যাশিত জয় বিজেপির, ত্রিপুরা গেরুয়াময়

আগরতলা,২ মার্চ(হি.স.): প্রত্যাশিতভাবেই ত্রিপুরায় বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি জোটের প্রত্যাবর্তন হয়েছে।  বিজেপি ৩২টি এবং আইপিএফটি ১টি আসনে জয়ী হয়েছে। এছাড়া, তিপরা মথা ১৩টি, সিপিএম ১১টি এবং কংগ্রেস ৩টি আসনে জয় নিশ্চিত করেছে। ফলাফল ঘোষণার পর থেকেই গেরুয়া আবির খেলায় মেতেছেন বিজেপি কর্মীরা। দলের নির্বাচন কার্যালয়ের বাইরে মুখ্যমন্ত্রী ডা: মানিক সাহা, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার, নির্বাচন প্রভারী মহেন্দ্র সিং, শিক্ষা মন্ত্রী রতন লাল নাথ সহ মহিলা মোর্চা ও যুব মোর্চার কর্মীরা আবির খেলেছেন। ঢাক-ঢোল পিটিয়ে উল্লাসে মেতেছেন। 

প্রসঙ্গত, আজ সকালে গণনা শুরু হওয়ার পর থেকে শাসক দল বিজেপি এবং বিরোধীদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখা গেছে। বেলা যতই গড়িয়েছে ছবি ততই বদলেছে। আসনের নিরিখে বিজেপির সাথে তিপরা মথা, সিপিএম-কংগ্রেসের ব্যবধান বেড়েছে। দুপুরের আগেই বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতায় পৌছে গিয়েছিল। স্বাভাবিকভাবেই পদ্ম শিবিরের উল্লাস তখন থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল। আবির খেলা এবং বাজি পুড়ানো শুরু করে দিয়েছিলেন বিজেপি কর্মীরা। 

দুপুরের পর ক্রমশ বিজেপির পক্ষে আসন নিশ্চিত হতে শুরু হয়ে যায়। এক এক করে ৩২টি আসনে বিজেপি একাই জয় নিশ্চিত করেছে। আইপিএফটি ৬টি আসনের মধ্যে কোনক্রমে ১টি আসনে জয়ী হয়ে ইজ্জত রক্ষা করেছে। তবে, তেইশের নির্বাচনে সবচেয়ে লাভবান হয়েছে কংগ্রেস। ২০১৮ বিধানসভা নির্বাচনে শতবর্ষ প্রাচীন ওই ঝুলি খালি ছিল। গত উপনির্বাচনে একটি আসন কংগ্রেস দখলে নিতে সক্ষম হয়েছিল। এবার বামফ্রন্টের সাথে আসন সমঝোতায় গিয়ে কংগ্রেস তিনটি আসনে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে। কংগ্রেসের সুদীপ রায় বর্মণ, গোপাল রায় এবং বীরজিৎ সিনহা জয়ী হয়েছেন। এক্ষেত্রে বামেদের ক্ষতিই হয়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ২০১৮ বিধানসভা নির্বাচনে বামফ্রন্ট ১৬টি আসনে জয়ী হয়েছিল। এবার কমে দাঁড়িয়েছে ১১টি আসন। ফলে একথা স্বীকার করতেই হবে, ত্রিপুরার মানুষ বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের আসন সমঝোতা কার্যত প্রত্যাখান করেছেন। 

তেইশের বিধানসভা নির্বাচনে সবচেয়ে বড় চমক দিয়েছে তিপরা মথা। এডিসি নির্বাচনে আত্মপ্রকাশের মধ্য দিয়ে তেইশের মহারণে তিপরা মথা দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে উঠে এসেছে। শুধু তাই নয়, কোনধরণের অঘটন না ঘটলে প্রদ্যোত কিশোরের এই আঞ্চলিক দল প্রধান বিরোধী দলের তকমা পেতে চলেছে। 

তবে, ক্ষমতায় ফিরেও ফলাফল বিজেপিকে অনেকটাই চিন্তায় রেখেছে। ২০১৮ সালের বিধানসভা নির্বাচনের সাথে তুলনা টেনে আনা হলে বিজেপির আসন এবং ভোটের হার অনেকটাই কমেছে। তাছাড়া, দলের দুই হেভিওয়েট প্রার্থী প্রদেশ সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্য এবং উপমুখ্যমন্ত্রী জিষ্ণু দেববর্মার পরাজয় পদ্ম শিবিরকে নতুন করে ভাবনায় ফেলেছে।

২০১৮ সালে বিজেপি ৩৬টি আসনে জয়ী হয়ে ৪৩.৫৯ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। পাশাপাশি জোটসঙ্গী আইপিএফটি ৮টি আসনে জয়ী হয়ে ৭.৫ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। অন্যদিকে সিপিএম ১৬টি আসনে জয়ী হয়ে ৪২.২২ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। সেই তুলনায় তেইশের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ৩২ আসনে জয়ী হয়ে ৩৮.৯৭ শতাংশ ভোট এবং আইপিএফটি ১টি আসনে জয়ী হয়ে ১.২৬ শতাংশ ভোট পেয়েছে। অন্যদিকে সিপিএম ১১টি আসনে জয়ী হয়ে ২৪.৬২ শতাংশ ভোট এবং কংগ্রেস ৩টি আসনে জয়ী হয়ে ৮.৫৬ শতাংশ ভোট পেয়েছে। দ্বিতীয় বৃহত্তম দল তিপরা মথা ১৩টি আসনে জয়ী হয়ে ২০ শতাংশের কাছাকাছি ভোট পেয়েছে। 

সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হল, তিপরা মথার প্রার্থীরা অনেকেই বিশাল ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন। টাকারজলা কেন্দ্রে ৩৯৯৯৩টি ভোট পড়েছে। তার মধ্যে তিপরা মথার প্রার্থী বিশ্বজিত কলই একাই পেয়েছে ৩৪৭১৭টি ভোট। তেইশের বিধানসভা নির্বাচনে তিনি সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছেন। 

এদিকে, ত্রিপুরায় তৃণমূল কংগ্রেস মুখ পুড়িয়ে নোটা থেকেও কম ভোট পেয়েছে। শুধু তাই নয়, অধিকাংশ আসনেই প্রার্থীদের জামানত জব্দ হয়েছে। এছাড়া, বামফ্রন্টে শুধুই সিপিএম প্রার্থীর জয়ী হতে পেরেছেন। শরিক তিনদলের একজন প্রার্থীও জয়ী হতে পারেননি। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *