নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৯ জানুয়ারী৷৷ আমাদের রাজ্য বাঁশ, রাবার, প্রাক’তিক গ্যাস সহ প্রচুর প্রাক’তিক সম্পদে ভরপুর৷ রাজ্যের এই সমস্ত নিজস্ব প্রাকৃতিক সম্পদকে ভিত্তি করে ছোট বড় শিল্প স্থাপনে রাজ্য সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে৷ কারণ শিল্প স্থাপনের মাধ্যমে রাজ্যের জিডিপি ব’দ্ধি করাই সরকারের অন্যতম লক্ষ্য৷ আর এক্ষেত্রে ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি এন্টারপ্রাইজ মন্ত্রক অন্যতম ভূমিকা পালন করতে পারে৷ আজ প্র’া ভবনে ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি এন্টারপ্রাইজ মন্ত্রকের উদ্যোগে এমএসএমই-র টেকসই উন্নয়নের উপর দু’দিনের আ’লিক সম্মেলনের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডাঃ) মানিক সাহা একথা বলেন৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে ছোট বড় অনেক শিল্প কারখানা রয়েছে৷ সেগুলিকে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে উন্নয়ন করে রাজ্যের জিডিপি ব’দ্ধির লক্ষ্যে রাজ্য সরকার কাজ করছে৷ বিগত দিনে দেখা গেছে আন্দোলনের নামে রাজ্যের শিল্প কারখানাগুলিকে ধংসের পথে ঠেলে দেওয়া হয়েছে৷ শিল্প স্থাপনেও সে সময় সঠিক কোনো পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি৷ বর্তমান রাজ্য সরকার রাজ্য শিল্প বান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলেছে৷ ফলে রাজ্য বহু ছোট বড় শিল্প ইউনিট নতুনভাবে চালু হয়েছে৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের অর্থনীতি মূলত ক’ষির উপর নির্ভরশীল৷ রাজ্যের জনসংখ্যার প্রায় ৪৪ শতাংশ সরাসরি ক’ষি এবং ক’ষি সম্পর্কিত কাজের উপর নির্ভরশীল৷ রাজ্যের মোট জমির প্রায় ২৬ শতাংশ ক’ষি উৎপাদনের উপযোগী৷ আগামী দিনে ক’ষিকে কেন্দ্র করে রাজ্যের জিডিপি কিভাবে আরও বাড়ানো যেতে পারে সে বিষয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করে কাজ করা হচ্ছে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাবার উৎপাদনে ত্রিপুরা দেশের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে৷ রাবারকে কেন্দ্র করে রাজ্যে শিল্প স্থাপনেও সরকার পরিকল্পনা গ্রহণ করে কাজ করছে৷ এছাড়াও রাজ্যের বিখ্যাত আনারস, আগর, বাঁশ ইত্যাদি প্রাক’তিক সম্পদকে কেন্দ্র করে রাজ্যে শিল্প স্থাপনে সরকার উদ্যোগীদের বিভিন্নভাবে উৎসাহিত করছে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের বিগত সাড়ে ৪ বছর সময়কালে রাজ্যের যোগাযোগ ব্যবস্থায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে৷ কেন্দ্রীয় সরকারের আন্তরিক উদ্যোগের ফলে রাজ্যে ৬টি জাতীয় সড়ক নির্মাণের কাজ চলছে৷ এছাড়া আরও ৭টি জাতীয় সড়ক এবং ৪টি রোপওয়ে নির্মাণের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার অনুমোদন দিয়েছে৷ এর জন্য ১০ হাজার ২২২ কোটি টাকা ম’র করেছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ইন্টারনেট পরিষেবার উন্নতির ক্ষেত্রে রাজ্য বর্তমানে দেশের মধ্যে ত’তীয় শ্রেষ্ঠ রাজ্য৷ উন্নত ইন্টারনেট পরিষেবাকে ব্যবহার করে রাজ্যের যুবক যুবতীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে৷ রেল যোগাযোগের ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে রাজ্য থেকে বর্তমানে ১১টি এ’প্রেস ট্রেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলাচল করছে৷ পাশাপাশি আগরতলা রেল স্টেশনটিকে দেশের অন্যতম আধুনিক রেল স্টেশনে পরিণত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ প্রধানমন্ত্রীর মার্গদর্শনে রাজ্যের সার্বিক উন্নয়নের মাধ্যমে জিডিপি বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েই সরকার কাজ করে যাচ্ছে৷
সম্মেলনে ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি এন্টারপ্রাইজ মন্ত্রকের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নারায়ণ রানে বলেন, ত্রিপুরা সহ উত্তর পূর্বা’লের রাজ্যগুলিকে আর্থিক প্রব’দ্ধির ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি এন্টারপ্রাইজ মন্ত্রক কিভাবে সহযোগিতা প্রদান করতে পারে সে বিষয়কেই সম্মেলনে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে৷
উত্তর পূর্বা’লের রাজ্যগুলির প্রতিটি ক্ষেত্রের উন্নয়নে ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি এন্টারপ্রাইজ মন্ত্রক সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও উত্তর পূর্বা’লের রাজ্যগুলির উন্নয়নের জন্য ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি এন্টারপ্রাইজ মন্ত্রকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করতে বার বার বলেছেন৷তিনি বলেন, বর্তমান রাজ্য সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টার ফলে ত্রিপুরা আজ উন্নতির পথে এগুচ্ছে৷ আর এই উন্নয়নকে ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি এন্টারপ্রাইজ মন্ত্রক-এর মাধ্যমে কিভাবে আরও গতি দেওয়া যেতে পারে সে লক্ষ্যেই এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে৷ ত্রিপুরার সার্বিক উন্নয়নে কেন্দ্রীয় সরকার বিশেষ দ’ষ্টি দিয়েছে৷ তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার চায় প্রতিটি রাজ্যেরই মাথাপিছু গড় আয় ব’দ্ধি পাক৷ এর জন্য প্রতিটি রাজ্যেই রোজগার ব’দ্ধির মাধ্যমে জিডিপি ব’দ্ধি করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করছে৷ তিনি বলেন, ত্রিপুরায় প্রাক’তিক গ্যাস, আনারস, বাঁশ, রাবার ইত্যাদি প্রাক’তিক সম্পদে ভরপুর৷ সেগুলিকে ভিত্তি করে রাজ্যের জিডিপি বাড়ানোর জন্য রাজ্য সরকারকে আরও প্রয়াস নিতে হবে৷ এছাড়া ত্রিপুরার অর্থনৈতিক উন্নয়নে পর্যটন ক্ষেত্র একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে৷ কারণ পর্যটন হল এমন একটি ক্ষেত্র যা কম সময়ে দেশ বা রাজ্যের আর্থিক প্রব’দ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে৷ ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি এন্টারপ্রাইজ মন্ত্রক মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী আত্মনির্ভর ভারত গড়ার কথা বলেছেন৷ প্রধানমন্ত্রীর এই স্বপের বাস্তবায়নে ত্রিপুরা সহ উত্তর-পূর্বা’লের রাজ্যগুলিকেও সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে৷ দেশের গরিব, মধ্যবিত্ত সহ প্রত্যেক জনগণের কল্যাণে কেন্দ্রীয় সরকার বহু প্রকল্প চালু করেছেন৷ এই সমস্ত জনকল্যাণমুখী প্রকল্পগুলির সুুবিধা জনগণের মধ্যে ১০০ শতাংশ পৌছানোর লক্ষ্যেও রাজ্যগুলিকে সচেষ্ট থাকতে হবে৷
অনুষ্ঠানে ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি এন্টারপ্রাইজ মন্ত্রকের রাজ্য প্রতিমন্ত্রী ভানুপ্রতাপ সিং ভার্মা বলেন, ২০১৪ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেত’ত্বে কেন্দ্রীয় সরকার উত্তর পূর্বা’লের সার্বিক উন্নতির জন্য ’লুক ইস্ট’ পলিসিকে পরিবর্তন করে ’অ্যাক্ট ইস্ট’ পলিসি গ্রহণ করেছে৷ এই পলিসির মাধ্যমে উত্তর পূর্বা’লের রাজ্যগুলির উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রকল্পের সুুবিধা পৌঁছানো হচ্ছে৷ ফলে ত্রিপুরা সহ উত্তর পূর্বা’লের রাজ্যগুলি ক্রমশ উন্নতির পথে অগ্রসর হচ্ছে৷ আর উত্তর পূর্বা’লের প্রক’ত উন্নয়ন হলেই দেশের উন্নতির গতি তরান্বিত হবে৷ তিনি বলেন, জিডিপি ব’দ্ধির মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি এন্টারপ্রাইজ মন্ত্রক অন্যতম ভূমিকা নিচ্ছে৷ ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি এন্টারপ্রাইজ মন্ত্রক-এর যে সমস্ত প্রকল্প রয়েছে সেগুলির সুুবিধা গ্রহণ করার জন্য উত্তর পূর্বা’লের উদ্যোগীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি৷ অনুষ্ঠানে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন মুখ্যসচিব জে কে সিনহা, কেভি আইসি-র চেয়ারম্যান মনোজ কুমার, ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি এন্টারপ্রাইজ মন্ত্রকের সচিব বি বি সোয়াইন, রাজ্য সরকারের শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের সচিব অভিষেক চন্দ্র প্রমুখ৷
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি এন্টারপ্রাইজ মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব মার্সি ইপাও, কে ভি আইসি-র সিইও বিনীত কুমার প্রমুখ৷ অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি এন্টারপ্রাইজ মন্ত্রকের মন্ত্রী নারায়ণ রানে র্যাম্প পোর্টাল, গোমতী সিটি গ্যাস প্রকল্প, স্ফুর্তি প্রকল্পে পশ্চিম ত্রিপুরা ব্যাম্ব ম্যাট ক্লাস্টারের ভার্চয়ালি উদ্বোধন করেন৷ এছাড়া পি এম ই জি পি প্রকল্পে ত্রিপুরা সহ উত্তর পূর্বা’লের রাজ্যগুলির সুুবিধাভোগীদের জন্য মার্জিন মানি সাবসিডি প্রকাশ করা হয়৷এছাড়াও অনুষ্ঠান মে’ পিএমইজিপি প্রকল্পে ১০ জন সফল উদ্যোগীকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়৷সংবর্ধনাস্বরূপ তাদের হাতে ট্রফি তুলে দেন অনুষ্ঠানের অতিথিগণ৷
2023-01-09