প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, রাজ্যবাসীকে হীরা দেবেন, এখন হীরার সাথে মানিকও দিয়েছেন, ত্রিপুরায় জনবিশ্বাস যাত্রার সূচনায় প্রশংসা অমিত শাহের

আগরতলা, ৫ জানুয়ারি (হি. স.) : ত্রিপুরায় ২০১৮ বিধানসভা নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, রাজ্যবাসীকে হীরা দেবেন। এখন হীরার সাথে মানিকও দিয়েছেন। ত্রিপুরায় ধর্মনগরে জনবিশ্বাস যাত্রা উপলক্ষ্যে আয়োজিত জনসভায় রাজ্যের উন্নয়নের জন্য প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব এবং বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর(ডা:) মানিক সাহার প্রশংসায় একথা বলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ। তাঁর কথায়, ত্রিপুরার উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নকে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব এবং বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী ডা: মানিক সাহা সফল রূপ দিচ্ছেন।

জনবিশ্বাস যাত্রার সূচনায় আগরতলায় এসেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ। মহারাজা বীর বিক্রম বিমান বন্দরে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী সহ অন্যান্যরা তাঁকে অভ্যর্থনা জানিয়েছেন। তিনি গতকাল বুধবার রাতে আগরতলায় আসবেন বলে স্থির হয়েছিল। কিন্তু, ঘন কুয়াশার কারণে তাঁর বিমান আগরতলায় অবতরণ করা সম্ভব হয়নি। ফলে, তিনি গুয়াহাটি চলে গিয়েছিলেন। আজ সকালেও ঘন কুয়াশার কারণে আগরতলায় আসতে তাঁর বিলম্ব হয়েছে। আগরতলায় পৌছে তিনি হেলিকপ্টারে সোজা ধর্মনগরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন।

এদিন জনসভায় মহিলা মোর্চার তরফে বিধায়িকা মালিনা দেবনাথ ঊনকোটির প্রতিকৃতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর হাতে তুলে দিয়ে তাঁকে সম্বর্ধনা জানিয়েছেন। ত্রিপুরা বিধানসভার উপাধ্যক্ষ বিশ্ববন্ধু সেনও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর প্রতিকৃতি তাঁর হাতে তুলে দিয়ে তাঁকে সম্বর্ধিত করেছেন।

এদিন তিনি খারাপ আবহাওয়ার জন্য ধর্মনগরে জনসভায় আসতে বিলম্ব হওয়ার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন। তিনি বলেন, হেলিপ্যাডে নেমে জনসভা স্থল পর্যন্ত ৪ কিমি রাস্তায় দুই ধারে অগুনিত মানুষের উপস্থিতি, তাঁদের ভালবাসা ও বিশ্বাস প্রমাণ করেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, বিজেপি, বিপ্লব কুমার দেব ও মানিক সাহার উপর সকলের আস্থা রয়েছে। আজ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ত্রিপুরার মহারাজা বীর বিক্রম মাণিক্য এবং এস ডি বর্মণকেও স্মরণ করেছেন।

এদিন তিনি বলেন, আজ ত্রিপুরায় জনবিশ্বাস যাত্রার সূচনা হচ্ছে। এই যাত্রার নাম জনবিশ্বাস রাখার জন্য তিনি প্রদেশ বিজেপি-কে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, গণতন্ত্রে সরকারের কাজের মাধ্যমে মানুষের ভরসা জয় করা সম্ভব। তাঁর দাবি, ২০১৮ সালে বলেছিলাম ত্রিপুরার মানুষকে কমিউনিষ্টদের কুশাসন থেকে মুক্তি দেব। তাঁদের শিকড় ত্রিপুরার পবিত্র মাটি থেকে উপরে ফেলে দেব। সেই লক্ষ্যে চলো পাল্টাইয়ের শ্লোগান দিয়েছিলাম। ত্রিপুরার মানুষ সেই প্রয়াস সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে সার্থক করেছেন। তাঁর বক্তব্য, ত্রিপুরায় বিজেপির একজনও বিধায়ক ছিল না। সেই অবস্থা থেকে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার গঠন, ব-ভারতে কেউ দেখেননি। বিজেপির প্রতি অগাধ আস্থা, বিশ্বাস ও ভরসা রাখার জন্য আজ তিনি ত্রিপুরাবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

তাঁর কথায়, ২০১৮ সালের বিধানসভা নির্বাচন ত্রিপুরাকে কমিউনিষ্টদের কুশাসন থেকে মুক্তির জন্য ছিল। তাঁদের তিন দশকের শাসনে উন্নয়ন হয়নি, উল্টে জল, রেশন এমনকি থানায় মামলা করার জন্য ক্যাডারদের কাছে যেতে হতো। প্রশাসন ক্যাডারদের দ্বারাই পরিচালিত হতো, সেই নির্বাচন ওই পরিস্থিতির পরিবর্তনের লক্ষ্যে ছিল। তেইশের নির্বাচন বিকাশের ভীত মজবুত করে সমৃদ্ধ ত্রিপুরা নির্মাণের লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত হবে, দৃঢ় প্রত্যয়ের সুরে বলেন তিনি।

তাঁর দাবি, যুব প্রজন্মের কর্মসংস্থান, মহিলাদের সুরক্ষা এবং জনজাতিদের অধিকার সুনিশ্চিত করার জন্যই তেইশের নির্বাচনে বিজেপির পাশে দাঁড়াতে হবে। কারণ, সমৃদ্ধ ও সুস্থ ত্রিপুরার শ্লোগান দিয়ে জনবিশ্বাস যাত্রার আজ সূচনা করছি।

তাঁর কথায়, ২০১৮ সালে বিধানসভা নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন বিজেপিকে সরকার গঠনের সুযোগ দিন, ত্রিপুরাকে হীরা দেব। প্রধানমন্ত্রীর সেই প্রতিশ্রুতি বিপ্লব কুমার দেব ও ডা: মানিক সাহা পূরণ করেছেন। তিনি প্রশংসার সুরে বলেন, প্রধানমন্ত্রী হীরার সাথে মানিকও দিয়েছেন। এদিন তিনি ২০১৮ সালে ত্রিপুরা বিজেপি জোট সরকার প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর জনকল্যাণে কাজের দীর্ঘ তালিকা তুলে ধরেন। তাঁর দাবি, এনএলএফটি উগ্রপন্থীদের সাথে শান্তি সমঝোতা, ব্রু শরণার্থীদের দুই দশকের অধিক সময়ের সমস্যা সমাধান বর্তমান সরকারের জন্যই সম্ভব হয়েছে। সাথে তিনি যোগ করেন, ২.৭০ লক্ষ পরিবারের কাছে বিনামূল্যে গ্যাস সংযোগ, ৪.১৫ লক্ষ বাড়িতে পানীয় জল, ৩.৮০ লক্ষ প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় ঘর বন্টন ডবল ইঞ্জিন সরকারের জন্যই ত্রিপুরবাসী ওই সুবিধা পেয়েছেন। শুধু তাই নয়, যোগাযোগ ক্ষেত্রে ১০ হাজার কোটি টাকার অধিক বিনিয়োগ, ২৫০০ কোটি টাকা খরচ করে ২৬২ কিমি জাতীয় সড়ক নির্মাণ বিজেপি সরকারের কারণেই সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, বাম জমানায় কর্মচারীরা পঞ্চম বেতন কমিশনের সুযোগ পেয়েছিলেন। ত্রিপুরায় সরকার পরিবর্তন হওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন বিপ্লব কুমার দেব কর্মচারীদের সপ্তম বেতন কমিশন দিয়েছেন।

তাঁর কটাক্ষ, কংগ্রেস এই দেশে এবং কমিউনিস্ট সারা বিশ্বে মুছে যাচ্ছে। আজকের জনসভা থেকে আওয়াজ তুলে ত্রিপুরায় কমিউনিস্টদের বুকে কম্পন ধরিয়ে দিন, দীপ্ত কন্ঠে শ্লোগান তুলে উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে বলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ। এদিকে জনসভা শেষে তিনি বিজেপির পতাকা নেড়ে জনবিশ্বাস যাত্রার সূচনা করেন। আজ তিনি সাব্রুম থেকেও জনবিশ্বাস যাত্রার সূচনা করবেন।