পাথারকান্দি (অসম), ১০ ডিসেম্বর (হি.স.) : স্থানীয় সুপারি আমদানি ও রফতানির ক্ষেত্রে রাজ্যা সরকার কিছুটা ছাড় দিলেও বহিঃরাজ্যের সুপারির ক্ষেত্রে সরকার আজও কঠোর অবস্থানে রয়েছে। সম্প্রতি এ ব্যাপারে মিজোরামের মুখ্যয়মন্ত্রী জোরামথাঙ্গা অসমের মুখ্য্মন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মার সঙ্গে দেখা করে উদ্ভূত সমস্যাার সমাধান বের করার কথা বললেও বিষয়টি আজও ঝুলে আছে।
গত ২৯ নভেম্বর শিলচরে রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে বিশেষ শর্ত-সাপেক্ষে স্থানীয় সুপারি আমদানি ও রফতানি করার সুবিধা দেওয়া হবে। সেদিনই তিনি বহিঃরাজ্যের সুপারি অসমে প্রবেশে প্রশাসনকে কঠোর হতে নির্দেশও দিয়ে গিয়েছেন। এতে গত কয়দিনে স্থানীয় কৃষকরা তাঁদের বাড়িতে উৎপাদিত স্থানীয় সুপারি দেরিতে হলেও কিছুটা কম দামে বিক্রি করতে সক্ষম হন। বর্তমানে বরাক উপত্যকার তিন জেলায় কাঁচা সুপারির মরশুম প্রায় শেষ হয়ে গেছে। এবার শুধু পাকা ভেজা ও রটা সুপারির ভরপুর মরশুম চলছে।
এই সুযোগে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশিকাকে মোক্ষম হাতিয়ার করে স্থানীয় কাঁচা সুপারি বিক্রির নাম করে বৃহত্তর পাথারকান্দির স্থানে স্থানে সক্রিয় হয়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি দালাল চক্র। তারা একাংশ পুলিশকর্মীর সাথে গোপন সমঝোতার মাধ্যরমে বিশেষ সিন্ডিকেট গড়ে প্রায় প্রতি রাতে পড়শি রাজ্য মিজোরাম এবং ত্রিপুরা থেকে মিনিট্রাকে করে করিমগঞ্জের স্থানে স্থানে কাঁচা ও পাকা সুপারি আমদানিতে উঠে-পড়ে লেগেছে।
কেনন, এখনও পড়শি রাজ্যগুলিতে বিপুল পরিমাণের কাঁচা সুপারি রয়ে গেছে। পাশাপাশি এ সব কাঁচা সুপারির আড়ালে বার্মিজ কাঁচা সুপারিও প্রবেশ করছে। বার্মিজ সুপারির দাম কম হওয়ায় বেশি মুনাফার আশায় পাইকারদের ঝুঁকিও বেশি। বহিঃরাজ্যের সুপারি বোঝাই গাড়ি রাতে আন্তঃরাজ্য সীমান্তের বিভিন্ন গোপন ডেরায় রেখে পরের দিন সকালে গাড়ি বদল করে বহিঃরাজ্যের সুপারিগুলোকে স্থানীয় বলে প্রকাশ্য দিবালোকে পাচার করা হচ্ছে করিমগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থানে।
ফলে এ সব পাচারে জড়িতদের আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। অভিযোগ, মিজোরামের সুপারি কানমুন হয়ে উত্তর ত্রিপুরার দশরথ সেতু পেরিয়ে মেদলিছড়া হয়ে বা বালিপিপলা-দামছড়ার অস্থায়ী করোনা পুলিশ চেকগেট দিয়ে অসমে প্রবেশ করছে। তাছাড়া উত্তর ত্রিপুরার সুপারি দেওয়ালি, তারকপুর, মহেশপুর, কদমতলা, রানিবাড়ি, প্রেমতলা হয়ে অসমের ঝেরঝেরি লাগোয়া ফাঁড়িপথে কাঁঠালতলি, কুকিতল ও সোনাখিরার বিভিন্ন রুটে পাথারকান্দিতে প্রবেশের বিস্তর অভিযোগ উঠেছে।
প্রতিরাতে বৃহত্তর পাথারকান্দির চার-পাঁচটি রুট দিয়ে বহিঃরাজ্যের কম পক্ষে কুড়ি থেকে তিরিশটি সুপারি বোঝাই মিনিট্রাক অসমে প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছে বলে অভিযোগকারীরা বলেছেন।
এদিকে রাতের অন্ধকারে করিমগঞ্জ জেলায় লোকাল সুপারি বিক্রিতে প্রশাসনের অলিখিত ফরমান জারি থাকলেও বহিঃরাজ্যের সুপারি বোঝাই লরিগুলো ত্রিপাল বেঁধে কাঠের পাট্টা লাগিয়ে পুলিশের বিনা বাধায় যাতায়াতের সুযোগ পাচ্ছে। এতে বিস্ময় প্রকাশ করেছে স্থানীয় ওয়াকিবহাল মহল। এই অবৈধ পাচারবাণিজ্যে লাগাম টানতে স্থানীয়রা জেলাশাসক, স্থানীয় প্রশাসনিক ম্যাজিস্ট্রেট তথা সার্কল অফিসার এবং পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।