প্রভাবশালী প্রাক্তন মন্ত্রীর ফেসবুক পোস্টে চাঞ্চল্য উত্তরবঙ্গের তৃণমূলে

কলকাতা, ৬ ডিসেম্বর (হি. স.) : “দলের পুরনো কর্মীরা ভালো নেই“। সবুজ চাদরে বড় হরফে নিছক একটি বাক্য। সেটিকে ঘিরে ব্যাপক আলোড়ন হচ্ছে। কারণ একটাই। বাক্যটি লিখেছেন প্রভাবশালী প্রাক্তন মন্ত্রী তথা কোচবিহার পুরসভার চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। বিতর্ক যাঁর ছায়াসঙ্গী।

দরজায় কড়া নাড়ছে পঞ্চায়েত নির্বাচন। বছরর ঘুরতেই ভোটের দামামা বেজে যাবে। নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে শাসক থেকে বিরোধী, সব রাজনৈতিক দলগুলি ইতিমধ্যে প্রচার শুরু করে দিয়েছে। এর মধ্যে ফেসবুকে তাৎপর্যপূর্ণ পোস্ট ঘিরে শুরু হয়েছে চর্চা। ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব যখন ঐক্যের বার্তা দিচ্ছে তখন কোচবিহারের প্রাক্তন জেলা সভাপতির ফেসবুক পোস্ট জল্পনা বাড়িয়েছে। ভোটের আগে রবীন্দ্রনাথের এই ফেসবুক পোস্ট বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

মঙ্গলবার বেলা পৌনে ১০টা নাগাদ তাঁর এই প্রকাশ্য মন্তব্যে দ্রুত বাড়ছে প্রতিক্রিয়া। প্রবলভাবে উঠে এসেছে দলে নতুন-পুরনো বিতর্ক। কেবল কোচবিহার নয়, মন্তব্য আসছে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে।

পোস্ট করার চার ঘন্টা বাদে মঙ্গলবার বেলা পৌনে তিনটায় লাইক, মন্তব্য ও শেয়ারের সংখ্যা হয়েছে ১ হাজার ১০০, ২৯৪ ও ৯২টি। অধিকাংশই তাঁর মতকে সমর্থন করেছেন।

ফারুক আবদুল্লা লিখেছেন, “একদম ঠিক। তবে এখনো সময় আছে, তাদের ডাকলে অবশ্যই আসবে তারা। কারণ তারা রাগ অভিমান করে আছে কিছু নেতার উপর। ওনাদের বঞ্চিত অবহেলা করেছে কিছু নেতা। তাই ওনারা বসে গেছে দুঃখ পেয়ে। তবে তৃণমূল কংগ্রেস দলটাকে মন থেকে ভালোবাসে তারা। ওনারাই বিপদের দিনে ছিলেন। সেই সব মানুষদের আবার ডাকলে অবশ্যই আসবে।”

সুব্রত দেব লিখেছেন, “এত দিনে একটা কথা বললেন দাদা, এখন তো ২,৩,৪ বছর আগে যারা তৃনমূলে যোগদান করছে তারাই তো সামনে দাদা, কিন্তু পুরনোরা তো থাকবেই।“

এনামূল হক লিখেছেন, “আমাদের কী হলো, যারা আমরা জীবন বাজি রেখে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে আসলাম? তাও আবার বিধানসভার আগ মুহূর্ত যে সময় তৃণমূলে এমএলএ, এমপি, লিডাররা বিজেপিতে যোগ দিচ্ছিল সেই সময়! বিজেপি দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে তৃণমূলে যোগদান করলাম আমাদের কি কোন সম্মান দেওয়া হয়েছে?”

শুভ্রাংশু সাহা লিখেছেন, “দিদির একনিষ্ঠ সৈনিক হিসাবে দল করেছি প্রথম দিন থেকে। বর্তমানে আমি একজন দল থেকে বহিষ্কৃত নির্দল কাউন্সিলর। কিন্তু তার পরেও আমার ভালো লাগে, যখন আপনার থেকে আমি উপযুক্ত সম্মানটা পাই। মঙ্গলময়ী মা সকলের মঙ্গল করুক।“

শহিদুল মিয়াঁ লিখেছেন, “বাড়ীর সন্তান কখনো পরিবারের অভিভাবক হিসাবে পরিচয় দেওয়ার চেষ্টা করলে সেই পরিবারে শান্তি থাকতে পারে না। আর একটা বিষয়, কে পুরানো কর্মী, কে নতুন, কে আসল কে নকল, সেটা বোঝার চেষ্টা না করাতেই আজ আমরা ভালো নেই। অর্থের স্বপ্ন দেখতে দেখতে আসল নকল চেনার জ্ঞান হারিয়ে গেছে। বড় আক্ষেপ লাগে।“

মহা আলম লিখেছেন, “বর্তমানে যাঁরা তৃণমূল কংগ্রেসের দায়িত্বে রয়েছেন তাঁরা দলের পুরাতন কর্মীদের মিথ্যা মামলা এবং কেস দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন। এটা চলতে পারেনা। আপনার এই কথাকে সাধুবাদ জানাই।“ অবনীন্দ্রনাথ বর্মণ লিখেছেন, “একদম ঠিক কথা। এবার অঞ্চলে, অঞ্চলে ভয়ানক রেজাল্ট হবে।”

এ জে খোন্দকর লিখেছেন, “দলের পুরোনো কর্মীরা কেমন থাকবে সেটা সেদিনই বুঝেছিলাম যেদিন আমার বাবার মতো দলের জন্মলগ্ন থেকে দল করে আসা লোককে ২০১৬ সাল থেকে গুরুত্বহীন করে রেখেছেন।“ আব্দুল মালেক লিখেছেন, “কোচবিহারে তৃণমূল কংগ্রেসটা করেছি আপনাদের মতো নেতাদের দেখে! কিন্তু আপনারাই পুরনো কর্মীদের অন্য দলের হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করছেন! এখনো সময় আছে দলটাকে বাঁচান! বিশেষ করে মেখলিগঞ্জে মেখলিগঞ্জে তৃণমূলের রাজত্ব শেষ, এখন ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজত্ব চলছে।“

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *