করিমগঞ্জ (অসম), ১ নভেম্বর (হি.স.) : মেঘালয়ের রাজধানী শিলঙে গত ২৮ অক্টোবর অউপজাতি মানুষের ওপর উপজাতিভুক্ত হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের হস্তক্ষেপ চেয়েছে করিমগঞ্জ জেলা বিজেপি।
শিলঙে গত ২৮ অক্টোবর দুপুরে রাজ্যে আরও চাকরির সুযোগ করে দেওয়ার দাবিতে ফেডারেশন অফ খাসি জয়ন্তিয়া অ্যান্ড গারো পিপল (এফকেজেজিপি) মিছিল বের করেছিল। মিছিলে অংশগ্রহণকারী কতিপয় সদস্যের হামলা-হুজ্জতির ফলে হিংসাত্মক হয়ে ওঠে মেঘালয়ের রাজধানী শিলং শহর। মিছিলে অংশগ্রহণকারী উপজাতিভুক্ত ওই সব যুবকদের গণহামলায় বহু অউপজাতিভুক্ত পথচারী আহত হয়েছেন। এছাড়া বেশ কয়েকটি স্কুটার-মোটর বাইক ও চার চাকার গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
ওই ঘটনার পর অসমের বরাক উপত্যকায় প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। গতকাল সোমবার ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সিকে দিয়ে ঘটনার তদন্তের দাবি তুলেছেন করিমগঞ্জ জেলান্তর্গত পাথারকান্দির বিধায়ক কৃষ্ণেন্দু পাল। এ ব্যাপারে তিনি অসমের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দাবি সংবলিত চিঠিও পাঠিয়েছেন। অন্যদিকে গতকালই মেঘালয়ের পুলিশপ্রধান (ডিজিপি) ড. লাজ্জারাম বিষ্ণোইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ঘটনার সঠিক তদন্তের দাবি জানিয়েছেন অসম প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির কার্যনির্বাহী সভাপতি তথা উত্তর করিমগঞ্জের বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ।
তবে কেবল অসম নয়, প্রতিবাদ হচ্ছে মেঘালয়েও। শিলঙে সহিংসতায় জড়িত দোষীদের বিরুদ্ধে শীঘ্র ব্যবস্থা নেওযার দাবি জানিয়েছে মেঘালয় ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট ফোরাম (এমটিডিএফ)। এমটিডিএফ-এর চেয়ারম্যান লারসিং সোয়ান বলেছেন, ‘আইন-শৃঙ্খলার প্রতি আস্থা পুনরুদ্ধার করা দরকার। রাজ্যের জনসাধারণকে আশ্বস্ত করতে হবে, আইন-শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে শান্তি-সম্প্রীতি বিঘ্নিত করতে এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। এ ধরনের ট্র্যাজেডি রাজ্যের জন্য বিরাট ক্ষতিকর, বর্বরোচিত কাণ্ডে জড়িতরা মেঘালয়ের সবচেয়ে বড় শত্রু, তারা রাজ্যবাসীকে চরম অপমান করেছে’
এদিকে আজ মঙ্গলবার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন করিমগঞ্জ বিজেপির নেতৃবৃন্দ। গোটা ঘটনার তদন্ত চেয়ে অউপজাতিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তাঁরা। অসমের মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মার কাছেও আজ একই দাবি সংবলিত স্মারকপত্র পাঠানো হয়েছে। মঙ্গলবার করিমগঞ্জের অতিরিক্ত জেলাশাসক বিপুলকুমার দাসের হাতে স্মারকপত্র তুলে দিয়েছেন করিমগঞ্জ জেলা বিজেপির নেতারা।
স্মাকপত্রে স্বাক্ষর করেছেন জেলা বিজেপি সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্য, প্রাক্তন বিধায়ক মিশনরঞ্জন দাস, কৃষ্ণ দাস, দিলীপকুমার দাস, নির্মল বণিক, নিশিকান্ত ভট্টাচার্য, সুধাংশু দাস, কিশোর দে, অমিত পাল, সুখেন্দু দাস, পাপ্পু কুরি সহ অন্যান্যরা।
অতিরিক্ত জেলাশাসকের মাধ্যম পাঠানো স্মারকপত্রের প্রতিলিপি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী ও ডিজিপির উদ্দেশ্যে প্রেরণ করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার আর্জি জানিয়ে ওই স্মারকপত্রে বলা হয়েছে, বিগত ২৮ অক্টোবর শিলঙে যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। নিরপরাধ অউপজাতি মানুষ উপজাতিদের হাতে আক্রান্ত হয়েছেন। এর ফলে ভয়ে আতঙ্কে দিন গুজরান করছেন অউপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষজন।
তাঁরা লিখেছেন, মেঘালয়ে অউপজাতিভুক্ত জনতার ওপর অমানবিক সহিংসতার ঘটনা এটাই প্রথম নয়। অউপজাতিরা দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের সহিংসতার মুখোমুখি হন। সাম্প্রতিক ঘটনায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে করিমগঞ্জ জেলায়। এমতাবস্থায় বাঙালি, অসমিয়া, পাঞ্জাবি, মাড়োয়ারি, বিহারিরা মেঘালয়ে বসবাসের জন্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তাই ভারতের সমগ্র উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মানুষের বৃহত্তর স্বার্থে এ ব্য়াপারে অসম এবং কেন্দ্রীয় সরকারের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে স্মারকপত্রে।

