আগরতলা, ২৬ সেপ্টেম্বর (হি. স.) : ত্রিপুরায় চাকুরিচ্যুত শিক্ষকরা আজ দিনভর চর্চার কেন্দ্রে ছিল। বিধানসভার ভেতরে এবং রাজপথে তাঁদের নিয়েই চরম উত্তেজনা ছিল। বিধানসভায় দিনের প্রথমার্ধে শিক্ষা মন্ত্রী রতন লাল নাথ এবং কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মনের মধ্যে চাকুরিচ্যুত শিক্ষকদের নিয়ে তীব্র বাদানুবাদ হয়েছে। এরই মধ্যে তাঁরা রাজভবন অভিযানে বের হন। তাঁদের সার্কিট হাউস এলাকায় পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে আটকে দেয়। কিন্তু, তাঁরা থামতে চাইছিলেন না। ফলে, পুলিশ বাধ্য হয়েছে জল কামান এবং কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে। তাতে, বেশ কয়েকজন চাকুরিচ্যুত শিক্ষক আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে কয়েকজনকে জি বি হাসপাতালে চিকিত্সার জন্য নেওয়া হয়েছে। এই ঘটনায় বিধানসভায় দ্বিতীয়ার্ধে বিরোধী দলনেতা সরকারের বিরুদ্ধে অমানবিক আচরণের অভিযোগ আনেন। তাতে, মুখ্যমন্ত্রী সহ ট্রেজারী বেঞ্চের সদস্য এই অভিযোগের খন্ডন করেন। শুধু তাই নয়, বাম আমলে পুলিশী বর্বরতার প্রসঙ্গ টেনে এনে বিরোধী দলনেতাকে একহাত নিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, চাকুরিচ্যুত শিক্ষকদের জন্য ত্রিপুরা সরকার যথেষ্ট আন্তরিক। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের রায় উপেক্ষা করে তাঁদের জন্য কিছুই করা সম্ভব নয়। তবুও দুয়েক দিনের মধ্যে তাঁদের সাথে আলোচনা বসবে সরকার।
এদিন বিধানসভায় কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণ চাকুরিচ্যুত শিক্ষকদের জন্য স্থায়ী ব্যবস্থা করার আবেদন জানান। তাঁরা রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রায় ১৪০ জনের এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে। পরিবার প্রতিপালন করা তাঁদের জন্য দুষ্কর হয়ে উঠেছে। অথচ, সরকার তাঁদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসছে না। অতি সত্বর তাঁদের রোজগারের ব্যবস্থা করার জন্য তিনি শিক্ষা মন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। জবাবে শিক্ষা মন্ত্রী রতন লাল নাথ বলেন, আদালতের রায়ে তাঁদের চাকুরী বাতিল হওয়া সত্বেও বর্তমান সরকার আন্তরিকতার সাথে তাঁদের জন্য ভেবেছে। বিজ্ঞাপন ছাড়া তাঁদের নিয়োগের অনুমতি চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু শীর্ষ আদালত সেই আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। তাঁর কথায়, চাকুরিচ্যুত শিক্ষকদের বেশ কয়েকজন ইতিমধ্যে টেট উত্তীর্ণ হয়ে শিক্ষকতার চাকুরী পেয়েছেন। এছাড়া, জেআরবিটি-র মাধ্যমে তাঁদের অধিকাংশকেই চাকুরী প্রদান করা হবে। এরপরও তাঁদের ব্যাপারে সরকার অমানবিক, তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।
বিধানসভা বাদানুবাদের মধ্যে চাকুরিচ্যুত শিক্ষকরা বিধানসভা অভিযান শুরু করেন। সহস্রাধিক চাকুরিচ্যুত শিক্ষক এদিন ওই অভিযানে শামিল হয়েছিলেন। কিন্তু, সার্কিট হাউস এলাকায় পুলিশ তাঁদের আটকে দেয়। তবুও তাঁরা এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ জলকামান এবং কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে তাঁদের আটকে দেন। তাতেও তাঁদের থামাতে ব্যর্থ হয়ে পুলিশ শেষে লাঠিচার্জ করেন। পুলিশের লাঠির আঘাতে বেশ কয়েকজন চাকুরিচ্যুত শিক্ষক আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে কয়েকজনকে জি বি হাসপাতালে চিকিত্সার জন্য নেওয়া হয়েছে।
এই ঘটনার রেশ আছড়ে পরে বিধানসভায়। বিরোধী দলনেতা দ্বিতীয়ার্ধে বিধানসভা অধিবেশন শুরু হতেই সরকারপক্ষকে চেপে ধরার চেষ্টা করেন। তিনি ত্রিপুরা সরকারের বিরুদ্ধে চাকুরিচ্যুত শিক্ষকদের সাথে অমানবিক আচরণের অভিযোগ এনেছেন। তাঁর দাবি, সরকার ওই চাকুরিচ্যুত শিক্ষকদের সাথে আলোচনা বসুক। তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর সাথে কথা বলতে চাইছেন। তাঁদের সাথে কথা বলুন।
বিরোধী দলনেতার অভিযোগের খন্ডন করে মুখ্যমন্ত্রীর সাফ কথা, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে চাকুরিচ্যুত শিক্ষকদের জন্য কিছুই করা সম্ভব নয়। তবে, বিকল্প ব্যবস্থার জন্য সরকার সমস্ত পদক্ষেপ নেবে। তিনি বিরোধী দলনেতাকে মনে করিয়ে দেন, বামফ্রন্ট আমলে আইন-শৃংখলা রক্ষার নামে আন্দোলনকে দমিয়ে রাখতে পুলিশ বহুবার জলকামান এবং কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে। ট্রেজারী বেঞ্চের সদস্যরা তখন একত্রিত হয়ে বাম আমলে পাপাই সাহা হত্যার ঘটনা বিরোধী দলনেতাকে মনে করিয়ে দেন। ট্রেজারী বেঞ্চের সম্মিলিত বক্তব্যে বিরোধী দলনেতাকে রীতিমতো চুপ করে দিয়েছে।
এদিন শিক্ষা মন্ত্রী জানিয়েছেন, চাকুরিচ্যুত শিক্ষকদের সাথে ইতিপূর্বে বহু আলোচনা হয়েছে। একই বিষয়ে পুণরায় আলোচনা কোর্টে হবে। তবুও, সরকার তাঁদের সাথে আলোচনায় বসবে। দুয়েক দিনের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের সাথে কথা বলবেন।