করিমগঞ্জ (অসম), ২৫ সেপ্টেম্বর (হি.স.) : ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক সুদৃঢ় করতে আজ রবিবার সকালে করিমগঞ্জের জেলা প্রশাসনের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করলেন ভারতে (অসমের রাজধানী গুয়াহাটি) নিয়োজিত বাংলাদেশের অ্যাসিস্ট্যান্ট হাই- কমিশনার ড. শাহ মোহাম্মদ তনবীর মনসুর। এদিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আমদানি রফতানিকারক সংস্থা এবং মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা।
জেলাশাসকের কনফারেন্স হল-এ অনুষ্ঠিত বৈঠকে আমদানি এবং রফতানি সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। অ্যাসিস্ট্যান্ট হাই-কমিশনার মূলত আমদানি রফতানি এবং অক্টোবর মাসের শেষের দিকে শিলচরে অনুষ্ঠেয় ‘শিলচর-সিলেট’ শীর্ষক দু’দেশের যৌথ উৎসবের বিষয়ে আলোচনা করেন। এদিন বৈঠকে করিমগঞ্জের আমদানি ও রফতানিকারক সংস্থার পক্ষে বলা হয়, বাংলাদেশ ওয়েজ মেজারমেন্ট অনুযায়ী পণ্য নিতে চায় না। তারা ভলিউমে পণ্য নিতে চায়। এতে ট্রাক প্রতি প্রায় দুই টন পণ্য কমে যায়। অথচ এখানের সব পণ্য ওয়েজ মেজারমেন্ট করেই পাঠানো হয়।
এ নিয়ে এ দেশের আমদানি রফতানি সংস্থার কর্মকর্তারা বাংলাদেশের অ্যসিস্ট্যান্ট হাই-কমিশনারের সামনে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে ‘লেটার অব ক্রেডিট’ (এলওসি) দেরিতে দেওয়ায় এখানকার ব্যাংলক তা গ্রহণ করতে চায় না বলেও জানানো হয় তাঁকে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের বেসরকারি ব্যাংাকগুলো আন্তর্জাতিক নিয়ম ভঙ্গ করছে বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে। এতে ব্যমবসায়ীদের অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
সুতারকান্দি হয়ে বাংলাদেশের শেওলা এলাকার সড়কের অবস্থা খুবই বেহাল। যার জন্য প্রায় ১৫ দিন আমদানি ও রফতনি বন্ধ ছিল। ওই সড়কটি আশু সংস্কারের দাবি উঠে বৈঠকে। এদিন অ্যাসিস্ট্যান্ট হাই-কমিশনারকে আরও জানানো হয়েছে, কেউ ভিজিটর ভিসা নিয়ে বাংলাদেশ গেলে ফেরার আগে তাঁদের সরকারি সোনালী ব্যাং কে ৫০০ টাকা জমা করতে হয়। কিন্তু কারও যদি শুক্র বা শনিবারে ফিরে আসতে হয় তা-হলে টাকা জমা করার সুযোগ থাকে না। কারণ ওই দুদিন ব্যাংতক বন্ধ থাকে। সেই সঙ্গে সে দেশের শেওলা এলাকায় সোনালী ব্যাংকের কোনও শাখা না থাকায়, ওই ভিজিটরদের মারাত্মক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। শেওলা এলাকার কাস্টম যাতে ভিজিটরদের ফি হিসাবে পাঁচ টাকা জমা রাখতে পারে, সে বিষয়ে উদ্যোগ নিতে তনবীর মনসুরের কাছে দাবি জানান এ দেশের আমদানি রফতানিকারক সংস্থার কর্মকর্তারা। এছাড়া আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নিয়ে এদিনের বৈঠকে আলোচনা হয়।
বৈঠকে জেলাশাসক মৃদুল যাদব সহ উপস্থিত ছিলেন ডিটিও, সুতারকান্দি ল্যা ন্ড পোর্ট অথরিটি ও কাস্টমসের আধিকারিকরা। আমদানি ও রফতানিকারক সংস্থার তরফে ছিলেন অমরেশ রায়, সরোজকান্তি দাস, সত্য রঞ্জন দে, তাজ উদ্দিন, হাফিজ চৌধুরী সহ আরও অনেকে। এছাড়া মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন অজিত জৈন, সন্দীপ জৈন, নির্মল আগরওয়ালা প্রমুখ।
সুতারকান্দি আন্তর্জাতিক বন্দর দিয়ে দুই দেশের মধ্যে আমদানি ও রফতানি যাতে আরও সহজ করে তোলা যায়, আজকের বৈঠকে এই বিষয়টির উপরই বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়। এদেশ থেকে বাংলাদেশে যে কোনও ধরনের পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে যদি কোনও সমস্যার সৃষ্টি হয়, তা-হলে সে দেশের সরকার সেই সকল সমস্যা সমাধানে আন্তরিক ভাবে কাজ করবে বলে আজকের বৈঠকে আশ্বাস প্রদান করেন বাংলাদেশের অ্যাসিস্ট্যান্ট হাই-কমিশনার ড. শাহ মোহাম্মদ তানভির মানসুর। সেই সঙ্গে সম্প্রতি ভারত থেকে বাংলাদেশে ফল রফতানিতে কিছুটা সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। সেই বিষয়টিও অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে সমাধান করা হবে বলে জানান তিনি। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক বিষয় নিয়ে আইনি কোনও জটিলতা আছে কি না, এ বিষয় নিয়েই জেলাশাসক সহ জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন বিভাগের শীর্ষ আধিকারিক এবং আমদানি রফতানি সংস্থার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
আজকের আলোচনা বেশ ফলপ্রসূ হয়েছে বলেও জানান বাংলাদেশের অ্যাসিস্ট্যান্ট হাই-কমিশনার শাহ তানভির মানসুর। দুই দেশের মধ্যে আমদানি রফতানি কিভাবে আরও বাড়ানো যায়, সে নিয়েই বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আমদানি রফতানি প্রধান ভূমিকা পালন করে থাকে। ব্যবসা যত উন্নত হবে, দেশের অর্থনৈতিক শক্তি ততই সুদৃঢ় হবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই করিমগঞ্জ এসেছেন বলে জানান শাহ তানবীর মানসুর। ঢাকা লবি ও সিলেট লবির মধ্যে দড়ি টানাটানির জন্যই কি আমদানি রফতানি বাধা প্রাপ্ত হচ্ছে? সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বিষয়টি অত্যন্ত কৌশলে এড়িয়ে যান। উত্তরে কেবল বলেন, এমন কিছু না। দুই দেশের মধ্যে মধুর সম্পর্ক রয়েছে। খুব শীঘ্রই পুনরায় আমদানি রফতানি শুরু হবে বলে জানান বাংলাদেশের অ্যাসিস্ট্যান্ট হাই-কমিশনার।
কয়লা রফতানি কবে থেকে শুরু হবে? এর উত্তর তিনি বলেন, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী মাস থেকেই কয়লার কাজ শুরু হয়ে যাবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা প্রাপ্তিতে যে দেশ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছিল, সেই দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলতে বাংলাদেশ সরকার বদ্ধপরিকর বলে, বলেন ড. শাহ মোহাম্মদ তানভির মানসুর।